বাণীব্রত চক্রবর্তী
ধারাবাহিক উপন্যাস
কালতরঙ্গ
পাঁচ
তালতলার ঠিকানা ও লোকেশন বুঝিয়ে বলে মেয়েকে মন্দিরা জিজ্ঞেস করল, " একা যেতে পারবি! " মীরা বলল, " কেন পারব না!" সঙ্গে সঙ্গে মীরার চোখের সামনে ভেসে উঠল কিঞ্জলের মুখ।
কিঞ্জলেরও ফার্স্ট ইয়ার। পড়ে প্রেসিডেন্সি কলেজে। ওর অনার্স ইংরেজিতে। অখিল রাহার ইংরেজি কোচিং ক্লাসে ওরা দু'জনেই পড়ত। অখিলবাবু হিন্দু স্কুলে ইংরেজির টিচার। কিঞ্জল হিন্দু স্কুলে পড়ত।
মীরার বাবা অয়ন ওই কোচিং ক্লাসের হদিশ এনেছিলেন। মীরা ইংরেজিতে বড্ডো কাঁচা।
অখিল রাহা বলেছিলেন, " আমার কাছে পড়তে হলে প্রথমে অ্যাডমিশন টেস্ট দিতে হবে। "
অয়নের ভয় হল। অ্যাডমিশন টেস্টে মীরা উতরে যাবে তো! শেষ পর্যন্ত অবশ্য উতরে গিয়েছিল। ক্লাস নাইন থেকে মীরার সঙ্গে কিঞ্জলের ভাব। কিন্তু প্রেমে পড়ল ইলেভেনে উঠে।
মন্দিরা জিজ্ঞেস করল , "তখন থেকে কী ভাবছিস বলতো ! " মীরা তক্ষুনি নিজেকে সামলে নিল, " না। না। কিছু ভাবছি না তো! তোমার ছবি মাসির বাড়িতে ঠিক পৌঁছে যাব। সামনে একটা হলিডে আছে। সেদিন যাব। "
মা-কে কথাটা বলতে বলতে মীরা ঠিক করে নেয় সঙ্গে কিঞ্জলকে নেবে। কিঞ্জলও ফ্রেঞ্চ শিখতে চায়। তবে ওকে নিয়ে তালতলার বাড়িতে ঢুকবে না। ওই বাড়ির উলটো দিকে " অঞ্জন " সিনেমা হল আছে। ওই সিনেমা হলের সামনে কিঞ্জল ওয়েট করবে।
মন্দিরা জিজ্ঞেস করল, " কেন তালতলায় যাচ্ছিস তার একটু আভাস ছবিমাসিকে দিয়ে রাখব!"
মীরা বলল, " না। না। একেবারেই নয়। কথায় -কথায় ফোন করার অভ্যেসটা পালটাও মা। "
মীরাদের বাড়িতে ফোন আছে। তালতলার বাড়িতেও আছে। মামারবাড়ির ফোন একমাস হল খারাপ হয়ে পড়ে আছে। দীনেন্দ্র স্ট্রিটেই টেলিফোন এক্সচেঞ্জ। খবর দেওয়া হয়েছে। ঠিক হচ্ছে কই! যেসব বাড়িতে টেলিফোন আছে , বেশিরভাগ ফোনের চেহারা একই রকম। ভারী। কুচকুচে কালো। কথা বলার সময় ক্রেডল থেকে রিসিভার হাতে তুলে নিয়ে কান ও মুখের কাছে ধরতে হয়।
মীরা বলল, " এই প্রথম তালতলায় যাচ্ছি। তোমার ছবিমাসিকেও প্রথম দেখব। আমার দিদা ও তোমার মুখে নতুন দিদার কথা এত শুনেছি যে বলার নয়। "
মন্দিরা অবাক, " নতুন দিদা আবার কে! " খিলখিল করে হেসে ওঠে মীরা, " তোমার ছবিমাসি গো। আমি ওঁকে নতুন দিদা বলে ডাকব। "
মন্দিরা বলল, " বাহ্। ভারী সুন্দর নাম তো! নতুন দিদা! ভালো কথা, বিকেলে মায়ের কাছে যাব। আজ রবিবার। গাড়িটা পাওয়া যাবে *** " একটু থেমে বলল, " তাই তো আমাদের বাড়ির গাড়িতে তো তালতলায় যেতে পারিস। শঙ্কু বাড়ি চেনে। বললি তো ছুটির দিনে যাবি। তোর বাবার অফিসও ছুটি থাকবে নিশ্চয়ই। "
মীরা মাথা নাড়ে, " না। না। বাসে-ট্রামেই যাব। শঙ্কু যা ড্রাইভার! বড্ডো বকবক করে। আজ তুমি মামারবাড়ি যাও। নতুন দিদার সঙ্গে আলাপের পর মামারবাড়ি যাব। " মায়ের কথার উত্তর দিতে দিতে মীরা ঠিক করে নেয় বিকেলে কিঞ্জলের সঙ্গে দেখা করবে। রবিবার বিকেলে কিঞ্জল কফিহাউসে আড্ডা দেয়।
কোন মন্তব্য নেই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন