কবিতা : মনজু বন্দ্যোপাধ্যায় রায়

 














পুজোর বাদ্যি


শারদীয়ার কবিতায় যা যা ভেসে ওঠে
তাহলো বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, কুমোরটুলি ,শিউলি ,কাশ আর সুব্রত মুখার্জির এভারগ্রিন ।
আহা সেই সুবিশাল ঝাড়বাতির জোৎস্নাফুলে আমরা কেউ হয়ে উঠতাম ক্যাটরিনা ,
আর কেউ সুচিত্রা সেন।

অবশ্য ছোটবেলার হাতছানিতে টাকির পুবের বাড়ি, ঘোষবাবু বাড়ি আর অমি দাদুর বাড়ির অন্নভোগ ।
হাজার হাজার রূপবান আকাশ নেমে আসতো
কাকভরে বীরেন্দ্রকৃষ্ণের কন্ঠ ছুঁয়ে ।
যৌবনের উন্মাদনায় কুসুম ভোরে গা ধুতো নদীমেয়ে ।

মা বসে থাকতো কখন অমি দাদুর বাড়ির অষ্টমীর ভোগ নিয়ে আসবো।
ষষ্ঠী তে লুচি খেয়ে আবার অষ্টমী তে লুচি সহ্য হবে না তাই।
আমরা অবশ্য লুচিতেই স্টিক করে থাকতাম।
মা বরাবরের মতো লক্ষ্মী ঘিয়ের লুচি,ছোলার ডাল, কুমড়োর ছক্কা ইত্যাদি করতো সকলের জন্য ।
বাবার কিন্তু শেষ পাতে মিষ্টি চাই চাই।
তার সাথে সাথে আমরা দিলরুবা হয়ে যেতাম।

একটা কি বড়জোড় দুটো জামায় শুকতারা জ্বলে থাকতো তখনকার পুরো পুজোটা ।
ময়ূর পুচ্ছ পেখম ধরে ষষ্ঠী নেচে নেচে গা ভাসিয়ে দিতো বিজয়ার ইছামতীতে ।

এই জমে যাওয়া পুজোর সাথে যে শব্দ অনায়াসে জড়িয়ে থাকতো সেটি ধ্রুবতারা প্রেম ।
তবে, এই প্রেম আর পুজোর মধ্যে ডারউইনের তত্ব পুরোপুরি খারিজ হয়ে যেতো ।

এখনকার পুজোর কথা বলতে গেলে সে অনেক কথা।
যদিও এই দুবছর করোনা সব ইচ্ছায় জল ঢেলে গৃহবন্দি জীবন ,উদযাপন চালাচ্ছে ।

অবশ্য সব উদযাপনের মধ্যে অন্যতম যেটি সেটি হলো সময় যা কখনো থেমে থাকে না ।
আর ঠিক সেকারণে এখন বিকেলে চা করার সময় হয়ে এসেছে।
আমার লেখার জন্যে অন্যদের দেরি করে চা খাওয়ার
তিরিক্ষি মেজাজে পুরো পুজোটা মাটি হয়ে যেতে পারে।

তাই আর রিস্ক না নিয়ে এখানে লেখা থামালাম।
তাও একটু বলে রাখি এখন সাজ পোশাকের প্রচুর রকমারি
থাকা সত্ত্বেও চকচকে প্রাণটা যতোই ম্যারমেরে হোক
শরতের নীলাকাশে পেঁজা তুলোর প্রাণে বাতাসের আচমনে
অনায়াসে পুজোর বাদ্যি বেজে ওঠে।