ধারাবাহিক উপন‍্যাস : বাণীব্রত চক্রবর্তী

মঙ্গলবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২১ /
ফেসবুক-এ শেয়ার করুন /
টুইটার-এ শেয়ার করুন

 





বাণীব্রত  চক্রবর্তী 


ধারাবাহিক উপন‍্যাস
         
              কালতরঙ্গ


                চার

মীরা বাগানে গেল। কয়েকদিন  আগে  বৃষ্টি  হয়ে গেছে। বাগানের  গাছগুলি যেন  নতুন  হয়ে উঠেছে। ফুল ও ফল এবং  পাতায় -পাতায় যেন  নতুন করে রঙের  প্রলেপ পড়েছে।
          কাঁঠালগাছের কাছে  পার্বতী নেই। ভজন  নিশ্চয়ই তাকে নিয়ে গোয়ালঘরে চলে গেছে।
আজ যখন মীরা এই বাড়িতে  ঢুকেছিল ছবিরানি ছিলেন  না। তিনি  তখন  নিউমার্কেটে। তখন  মীরা  ভজনের কাছে  জেনে নিয়েছিল  এই গৃহপালিত জীবটির নাম পার্বতী।
          ছবিরানির শ্বশুরমশাই মারা গেছেন অন্তত  তিরিশ বছর  আগে। তখন তিনি  একটি গোরু পুষেছিলেন। তার নাম রেখেছিলেন  পার্বতী। ভজনের বয়স তখন তিরিশ। এখন  ভজন  ষাট বছরের  বুড়ো। সেই  পার্বতীও মারা গেছে। তবে ছবিরানি গোয়ালঘর তুলে দেননি। বিগত  তিরিশ বছরে  একটা গোরু মারা গেলে আর একটা  এসেছে। আর প্রত‍্যেকটা গোরুর নাম ছবিরানির ইচ্ছে অনুযায়ী  পার্বতী রাখা হয়েছে। কেউ  এই গৃহপালিত জীবটির প্রশংসা করলে ছবিরানি বলেছেন  এবং  বলেন, " এর নাম পার্বতী। আমার শ্বশুরমশাইয়ের পোষা গোরু। " এইভাবে পুরনোকালকে ছবিরানি ধরে রাখতে চাইছেন। এইসব কথা  মীরা তার মা মন্দিরার কাছে শুনেছে।
            চাঁপাগাছের কাছে  দাঁড়িয়ে  মীরা ভেবে নিচ্ছিল নতুন দিদাকে তার ইচ্ছের কথাটা  কীভাবে  বলবে। যাঁকে বললে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যেত তাঁকে  তো বলা হল না। ইচ্ছে করেই সে নতুন দিদার দেওরকে কথাটা বলেনি। ওঁর নাম স্মরজিৎ। উনি  নতুন দিদার নতুন ঠাকুর পো।
  মীরা হায়ার সেকেন্ডারি পাশ করে বেথুন কলেজে ভরতি হয়েছে। অনার্স নিয়েছে বাংলায়। এখন তার  ফার্স্ট ইয়ার। তার খুব ইচ্ছে  ফরাসি ভাষা শেখার। মায়ের  কাছে শুনেছে স্মরজিৎদাদু ফরাসি ভাষায় পণ্ডিত। রবিবারের সকালে  মীরা  ফ্রি। উনি যদি  সেইসময়ে তাকে ফরাসি ভাষা  শেখান খুব  ভালো  হয়।
       মীরার মামারবাড়ি দীনেন্দ্র স্ট্রিটে। কিন্তু মন্দিরার শ্বশুরবাড়ি স্কট  লেনে। মীরা  তো স্কট লেনেই থাকে। সেখান থেকে  তালতলা এমন কিছু দূরে নয়। মা বলেছেন, " তুই বরং তালতলায় যা। আমার  ছবিমাসিকে তোর ইচ্ছের কথাটা  জানা। তিনি  নিশ্চয়ই তাঁর নতুন ঠাকুরপোকে রাজি করিয়ে দিতে  পারবেন। "
     মীরা তাই আজ তালতলায় এসেছে। এইসব  ভাবতে  ভাবতে হঠাৎ  চোখ  পড়ল সদরদরজার দিকে। সদরদরজার সামনে  স্মরজিৎ দাদু পায়চারি করছেন। খানিকক্ষণ  আগের কথাবার্তা  শুনে মনে  হল উনি  এই বাড়ির কাজের  লোক  ভ‍ৃগুর জন্য  অপেক্ষা করছেন। ভৃগু নাকি  ওঁর জন্য  নিউমার্কেট থেকে  একটা  টিয়া পাখি কিনে আনবে। মীরা এই  প্রথম  নতুন দিদার শ্বশুরবাড়িতে এল।
      মীরা এগিয়ে গেল। ওঁর সামনে  দাঁড়াল, " এক্ষুনি তো আপনার  টিয়া পাখি আসবে। " উনি মুচকি  হাসলেন।