অণুগল্প : অরুণ আইন

 





অরুণ আইন


মধ্যরাত্রির গল্প
---------------------

সেই যে মেয়েটি, সে ফোন করেছিল ছেলেটিকে, মাঝরাত তখন।
মেয়েটি,- এই ঘুমুলে?
ছেলেটি,- না। কি করছ?
মেয়েটি,- ঘুম আসছে না।
ছেলেটি,- তাইতো!
মেয়েটি,- একটা গল্প বল না।
ছেলেটি,- (কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর) সে
অনেকদিন আগে একটা মেয়ে ছিল বুঝলে, তার
ঘুম আসত না।
মেয়েটি,- হুমম।
ছেলেটি,- বেচারি মেয়েটি এতদিন ধরে ঘুমায়নি যে
তার নিদ্রাহীনতার রোগ  ধীরে ধীরে একটা
নোটখাতা হয়ে গেল। সত্যি কিন্তু।
মেয়েটি,- তাই! তা’ নোট খাতার পাতাগুলি কি সাদা?
ছেলেটি,- হ্যাঁ এটা খুব জরুরি কথা।। সত্যিই নোট
খাতাটা সাদা। একটাও কালির আঁচড় নেই।
মেয়েটি,- তাই বুঝি মেয়েটি আশা করছিল, কেউ
তার খাতায় কিছু লিখুক।
ছেলেটি,- হ্যাঁ। ওইরকমই আর কি। তা’ একদিন
বিকেলে, সেই মেয়েটি, একা একা,  আহা কবেই বা
সে দোকা ছিল, হাঁটতে বেরোল। হাঁটতে হাঁটতে
আচমকা এক বন্ধুর সাথে মুখোমুখি দেখা। মেয়েটি
বলল, জান, আমি না ঘুমাতে পারিনা। এই না ঘুম
এখন একটা নোটখাতা হয়ে গেছে। এই দেখ সেই
নোটখাতা। তুমি এখানে কিছু লিখে দেবে?
মেয়েটি,- ছেলেটি দেখতে কেমন, সুন্দর?
ছেলেটি,- নিশ্চয় ।
মেয়েটি,- আচ্ছা। বল এবার।
ছেলেটি,- তো ছেলেটি নিরাপদ কিছু একটা লিখে
দিল খাতায়। ওই যেমন লেখে আর কি লোকে,
যেমন, ‘ভয় কি? সুখি হও।‘ কিংবা, ‘আকাশে
তারাদের দেখ, দেখ, তারারা তোমার জন্য ঝলমল
করছে।‘ এইরকমই কিছু একটা আর কি। কিন্তু
যেই মেয়েটি ক্ষণেকের জন্য চোখ ফিরিয়েছে,
ছেলেটি দ্রুত হাতে নোটখাতার ভিতরে এক
কোনায় লিখে দিল, ’আমি তোমাকে ভালোবাসি।‘
যাতে মেয়েটি পরে কোনদিন লেখাটি আবিস্কার করতে পারে।
মেয়েটি,- আচ্ছা বেহায়া তো! তারপর?
ছেলেটি,- ছয় মাস পর মেয়েটি আবিস্কার করল,
তার খাতায় লেখা,’ আমি তোমাকে ভালোবাসি’।
কিন্তু সমস্যা হল, ছেলেটি এত দ্রুত লিখেছে, যে,
মেয়েটি বুঝতে পারল না, লেখাটি কার? আসলে
মেয়েটির তো অনেক অনুরাগী ছিল। এর মধ্যে কে সে?
মেয়েটি,- আহা! তো গল্পটা শেষ হল কিভাবে?
ছেলেটি,- মেয়েটি অনিশ্চিত কে তাকে
ভালোবাসে? কিন্তু মনের আড়ালে সে সুখি, কেউ
তো তাকে ভালোবাসে। মেয়েটি ভাবে, এই ছেলেটি
তার পরাণ-সখা। আড়ালে ছেলেটি সবসময় তাকে
লক্ষ্য করছে। তার ডাকে ছেলেটি সবসময় সাড়া
দিতে প্রস্তুত। কোন এক অদৃশ্য সুতোয় তাদের
দু’জনের আত্মা বাঁধা।
মেয়েটি,- মিস্টি গল্প। কিন্তু কোথাও একটা
বিষাদের ছায়া ছুঁয়ে আছে।
ছেলেটি,- আমার এবার ঘুম পাচ্ছে। তুমিও এবার শুয়ে পড়।
মেয়েটি,- হ্যাঁ। গুডনাইট। ধন্যবাদ।
ছেলেটি,- ঠিক আছে। গুডনাইট।
মেয়েটি,- একমিনিট।
ছেলেটি,- আবার কি হল?
মেয়েটি,- তুমি কি আমাকে কিছু বলতে চাইছ?
ছেলেটি,- মানে?
মেয়েটি,- তুমি কি এই গল্প দিয়ে আমাকে কিছু বলতে চাইছ?
ছেলেটি,- মানে?
মেয়েটি,- বলতে চাইছি, এই গল্পের মধ্যে তুমি কি
আমাকে কিছু বলতে চাইছ?
ছেলেটি,- না।
মেয়েটি,- ও!
ছেলেটি,- একেবারেই না।
মেয়েটি,- ঠিক আছে। দুঃখিত,ভুলে যাও। গুডনাইট।
ছেলেটি,- কোন সমস্যা নেই। তোমার গলা ঘুমে
জড়ানো। গুডনাইট।

পরে মেয়েটি ভাবছিল, ‘না’ইতো ঠিক ছিল। আবার
'একেবারেই না’ বলল কেন? এর কি কোন অন্যরকম মানে আছে?