গুচ্ছ কবিতা : অভিজিত্‍ দত্ত

 





অভিজিত্‍ দত্ত


মেয়েদের গল্প

বালি সরিয়ে জল উঠছে
কানি দিয়ে চেপে সেই ফোঁটা ফোঁটা জল
তুলে রাখছে কলসিতে। 

অনেক কলসি বেলাইন সাজানো রয়েছে 
অনেক বালি সরিয়ে জল উঠছে অল্প
মেয়েরা গাঁওবালী, অনেক দূর পায়ে হেঁটে ফিরবে।

তপ্ত বালি, ঠান্ডা জল-- 
ক্লান্তির গরিমা মেখে নীরবে ফিরছে মেয়েরা
কোনো অবলোকন নেই, তাদের চোখেমুখে
                      মধ্যদুপুরের প্রাচীন রোদ 
চিত্রকর এই অব্দি এঁকে থামলেন। 

বাতাসের টাইপ-রাইটারে জন্মেই নিহত 
                                        মেয়েদের গল্প। 


##

দূরের পারের রবীন্দ্রনাথ

যতদূর চোখ যায় 
তারও পরে সরু ও দীর্ঘ, তন্ময় একটি রেখা---
বালুতট
পাহাড় 
হতেও পারে সমুদ্র ও আকাশের কল্পবিভাজিকা!

আশরীর রুগ্নতা নিয়ে একটিমাত্র গাছ, অস্পষ্ট, বাঁকা,
ঝুঁকে দাঁড়িয়ে রয়েছে রেখাটির ওপরে।

হাওয়া আর রোদ একে অপরের প্রতি দৈব-প্রতিশোধ 
নেবে ব'লে প্রস্তুত, 
দাঁড়িয়ে দেখছে সেই গাছ একজন। 

দূরেরও দূরের শেষে ফেলে রেখে দিই দেখা
আর কী আশ্চর্য, সত্যি দেখো কেমন পিছিয়ে যাচ্ছে 
                                             আমার মরণ! 


##

পেঁচা

ছোট্ট এক কালপেঁচা, নাকি লক্ষ্মীপেঁচা
কী যে আটকা পড়েছিল টাঙানো ইলিশ ধরা নেটে,
ঝিঙের মাচায়!--- পড়শিরা সঠিক জানে না। 
দ্রুত ওকে বের ক'রে আনি। শুশ্রূষা দিই।
তারপর সারাদিন কম্বুর যাতনার মতো ভালোবেসে 
ওকে শোনাই একটি কবিতা, জীবনানন্দের। 
আমগাছের ট্রাপিজিয়মে নিয়ে বসাতেই ঘাড় ঘুরিয়ে
একবার দেখল, তারপর কোনাকুনি উড়ে গেল...
ওকে ফিরে পেতে যেন উদগ্রীব সন্ধ্যার শান্ত সবিতা। 

ছেলে রেগে ওঠে, পা ছড়িয়ে কাঁদে, বলে, 
'পেঁচা কেন ছেড়ে দিলে, নিয়াসো এক্ষুনি?' ওকে বলি, 'রোসো,
ইস্কুলে পারনি পড়া দিতে, কেন পড়নি এ কবিতা?'

...মানুষের পিতার মতো নাকি পেঁচাদেরও পিতা?