সম্পাদকীয় : চন্দ্রদীপা সেনশর্মা

বৃহস্পতিবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২১ /
ফেসবুক-এ শেয়ার করুন /
টুইটার-এ শেয়ার করুন

 










সম্পাদকীয়
----------------

                চন্দ্রদীপা সেনশর্মা
                ------------------------



চৈত্র মাস শেষ হয়েছে, ক্যালেন্ডারে একটি বছর
শেষ হয়ে যাওয়ার ঘোষণা। কী পেলাম এ বছরে
ভাবতে গেলে শুধু আত্ম-প্রিয়জন হারানোর দুঃখ
আর অদ্ভুত এক অসুখের ভয় ছাড়া কিছুই মনে
পড়ে না। অসুখের ভিন্ন ভিন্ন রকম, সেও আছে।
এবং এই নতুন বছরে হালখাতায় সে এখনও
জাঁকিয়ে বসে আছে। সারা পৃথিবী জুড়ে সব
উৎসবের থেকে মানুষের মৃত্যুমিছিল বড়ো হয়ে
উঠেছে। কার্যত একবছরের উপর মানুষ কম বেশি
গৃহবন্দি। পৃথিবীর অর্থনীতিতে এর ব্যাপক প্রভাব
পড়েছে। বিশেষত অসংগঠিত কাজের ক্ষেত্রে
মানুষের অপরিসীম ক্ষতি ঠিক কত, ঠাওর করে
উঠতে পারা যাচ্ছে না। আমাদের মতো তৃতীয়
বিশ্বের দেশে অসংগঠিত কাজের পরিসর যেহেতু
খুব বিস্তৃত হয়ে রয়েছে, তাই ক্ষতির পরিমাণও
বেশি।

এর মধ্যেও যতটুকু সম্ভব কাজকর্ম প্রত্যেককে
করে যেতে হচ্ছে। গণতন্ত্রের নির্বাচন চলছে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইউ এস এ-তে পালাবদল ঘটে
গেল। ভারতবর্ষে বেশ কিছু রাজ্যে নির্বাচন সম্পন্ন
হল। এবং বিনা রক্তপাতে। কেবল এই অতিমারীর
বাড়াবাড়িও পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনকে রক্তাক্ত
হওয়া থেকে বাঁচাতে পারল না, পারছে না। এত
রক্ত এত মৃত্যু, আঠারোবছর ভারতবর্ষের অন্য
কোনো রাজ্যের নির্বাচনে দেখিনি। অথচ প্রতিটি
রাজ্যে নির্বাচন দেখেছি, দেখেছি শাসকদলের
পালাবদল। এ বড়ো দুঃখের এবং লজ্জার।

অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন,
প্রেসিডেন্সি থেকে দিল্লি গিয়ে লেখাপড়া না করলে
বুঝতেন না, শিক্ষা সকলের জন্য, কেবল এলিট
জনগণের জন্য না। সর্বস্তরে নিজেদের মতামত
এবং স্বজনপোষণ বজায় রাখতে বাঙালি শিল্পী
সাহিত্যিক এবং বুদ্ধিজীবীর এক অংশ মরিয়া এ
সত্য আজীবন দেখে আসছি। এ কি একরকম
এলিট সংস্কৃতি না? তথাকথিত রাজনৈতিক
সচেতনতা এর অংশ, ক্ষমতায় যে দল থাকুক বা
আসুক। একটি দিঘির পাড়ে বসলে মনে হয় জল
নিস্তরঙ্গ, কিন্তু জলে নামলে এবং গভীরে গেলে
বোঝা যায় স্রোতের দাপট। বাংলার জাতপাত
সাম্প্রদায়িকতা প্রান্তিক মানুষকে পিছিয়ে রাখার
চোরা স্রোত ঠিক ওই দিঘির মতো। ব্যক্তিগত
অভিজ্ঞতা থেকে বুঝেছি। এ বিষয়ে আমার সঙ্গে
একমত হয়েছিলেন একটি বিশেষ বামপন্থী দলের
সর্বভারতীয় নেতা, তিনিও বাঙালি।

বাংলার শ্রমিককে কেরালা দিল্লি হরিয়ানা চেন্নাই
পাঞ্জাবে যেতে হয়, এমনকী কাশ্মীরের মতো গরিব
রাজ্যেও আপেল তুলতে যেতে হয়, কেন? যাদবপুর
ইউনিভার্সিটির ইঞ্জিনিয়ারিং, যা একসময় স্বপ্ন
ছিল মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের, সুযোগ পেয়েও
সেখানে না পড়ে স্রোতের মতো বিজ্ঞানের মেধা
অন্য রাজ্যে চলে যায়, কেন? কম অর্থে সঠিক
চিকিৎসা পেতে রাজ্যবাসীকে দক্ষিণভারতে যেতে হয়, কেন? 
ইদানীং শিরদাঁড়া সোজা রেখে
রাজনৈতিক লেখা কেউ আর তেমন লেখেন না,
কেন লেখেন না, ভয়ে? এত যে প্রশ্ন করলাম তার
উত্তর খোঁজার মতো বয়স বা শারীরিক ক্ষমতা
কোনোটাই আমার নেই। আশা করি তরুণ প্রজন্ম
দায়িত্ব নেবেন। বেহাল অর্থনীতি, শিল্পের অভাব,
কাজের অভাব নিয়ে ভাঙা মেরুদণ্ডে কুঁজো হয়ে
দাঁড়িয়ে থাকা আমাদের রাজ্য আরো অবনমনে
তলিয়ে না গিয়ে, এঁদের হাত ধরে ঘুরে দাঁড়াবে।
এটুকুই হোক নববর্ষের শপথ।

১৪০০ সালের পক্ষ থেকে প্রত্যেককে বাংলা
নববর্ষের প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাই।

--------------