ধারাবাহিক : সন্দীপন গোস্বামী

বৃহস্পতিবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২১ /
ফেসবুক-এ শেয়ার করুন /
টুইটার-এ শেয়ার করুন

 




অন্তরাত্মার শিল্পী

 

সন্দীপন গোস্বামী

 

আত্মকথায় লিখেছেন, তুলি তাঁকে কোলে তুলে নিয়েছে। 
দিব্যি মনে করতে পেরেছেন, শৈশবে ফুলের কুঁড়ি 
আঁকতে শেখার স্মৃতি। সেই অর্থে পিতাই তাঁর প্রথম শিক্ষক। 
প্রেরণাও। তাঁর আগ্রহেই শিল্পী হয়ে ওঠা। ভারী সুন্দর লিখেছিলেন, 
‘‘ পথের পুরস্কার কী, কোনও পুরস্কার আছে কিনা, 
আজও আমার বোধের বাইরে কাজ করে যাই,
 শিল্পের সঙ্গে লেগে আছি এটাই আমার পুরস্কার 
আমি এর সহজ নাম দিয়েছি আনন্দ 
আর্ট মানে আনন্দ কিংবা আনন্দ মানে আর্ট 
তবে  আজব দেশের অচল সমাজে আর্ট হেজে গেছে 
আর্টের না আছে আদর, না আছে আর্টকে কাছে টেনে নেওয়ার স্বভাব’’

এমন অমোঘ কথা বলেছেন শিল্পী গোপাল ঘোষ।


যিনি দেখতে পেতেন ‘গাল ভরা বাণী আর ছোটাছুটি, চিৎকার...’ 
ঘরে চেয়ারে বসে কাজ করার স্বভাব ছিল না 
মজা করে বলেছেন, ‘‘এখানেই মস্ত বড়ো প্রশ্ন ওঠে 
আছাড় খাবে আর চিৎকারে চারদিক চিবিয়ে খাবে বলবে, বাপু 
আর্ট তো করো, আনন্দ তো পাও, কথা হচ্ছে 
অর্থাগম কেমন করে হয়? অর্থই হল আদি অনাদিকালের স্বয়ং দেবতা  দেবতার দেখা কী করে পাও?  দেবতাকে দেখতে চাইনি, 
দেবদারু গাছ দেখতে বেরিয়ে পড়েছি আমার মুখ বুজে যায়,
 উত্তর আসে না কেননা আর্টের অর্থ যার বাজারে চলতি নাম টাকা  কেমন করে আনব তা নিয়ে আঁকার গোড়ায় মাতামাতি করিনি’’

যা দিয়ে শুরু জীবন। সেই ছবি আঁকাকেই শেষ দিন পর্যন্ত 
বুকে জাপ্টে রেখেছেন। সেটাই ছিল ব্রহ্ম প্রতিজ্ঞা। 
বড় ভাল লাগত রোদ্দুর। পাগল হয়ে যেতেন ‘পাকা ধানের রঙ দেখে।’ 
তবে ধানখেতের গাঁ-গঞ্জে নয়। কলকাতার সিমলা অঞ্চলে শিল্পীর জন্ম। 
১৯১৩-র ৫ ডিসেম্বর। ১৯৩১-এ চলে যান রাজস্থানের জয়পুর। 
ভর্তি হন মহারাজা স্কুল অফ আর্ট অ্যান্ড ক্রাফ্টে সেখান থেকে ডিপ্লোমা নিয়ে 
এক বছর পরেই মাদ্রাজ আর্ট স্কুলে। এ বার নাড়া বাঁধলেন 
কিংবদন্তি ভাস্কর দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরীর কাছে।

তাঁর রঙের উদ্ভাসে এক অদ্ভুত মাদকতা ছিল। যা সহজেই 
ছুঁয়ে যেত শিল্পপ্রেমীর অন্তরাত্মা। প্রকৃতি আর প্রাণের এ হেন 
মেলবন্ধন খুব কম শিল্পীর কাজেই দেখা গিয়েছে। যা প্রদর্শিত 
হয়েছে দেশে-বিদেশে। বিচিত্র সব ছবি আঁকার বাইরে 
তাঁর পেশা ছিল আর্ট কলেজের শিক্ষকতা। শিল্পীর প্রয়াণ ১৯৮০-র 
৩০ জুলাই। নিজের খেয়ালে ছবি এঁকেছেন। একটি বিখ্যাত 
ছবির বিষয়, নির্জনে স্তব্ধ পরিবেশে নৌকোর পড়ে থাকা! 
অনেকটা তাঁর নিজের জীবনের মতোই।