মুক্ত গদ্য : পুষ্পিত মুখোপাধ্যায়

সোমবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ /
ফেসবুক-এ শেয়ার করুন /
টুইটার-এ শেয়ার করুন

 





মুক্ত গদ্য ..

জ্ঞানপীঠ পুরস্কার প্রাপ্ত মহান উর্দু কবি ফ়িরাক় গোরখপুরী সম্পর্কে একটি অজানা তথ্য ....



     পুষ্পিত মুখোপাধ্যায়


      
ফ়িরাক় গোরখপুরী,মূল নাম রঘুপতি সহায়। উর্দু সাহিত্যের এক মহান কবি।
উর্দু কবিতায় মির তকি মির ও গ়ালিবের পর ফ়িরাক় গোরখপুরীর অবদান সর্বাধিক।
উত্তর প্রদেশের গোরখপুরে 1896সালে 28শে আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। এবং 1982সালে 

3রা মার্চ মারা যান। অত্যন্ত বিদ্বান ছিলেন। উর্দু ছাড়াও আরবি,ফার্সি এবং ইংরাজি 

ভাষায় পণ্ডিত ছিলেন। কলা বিভাগে স্নাতক পরীক্ষায় পুরো উত্তর প্রদেশে চতুর্থ স্থান 

পাওয়ার পর আই সি এস পাশ করেন।
1920সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে গান্ধীজীর অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়ে জেলে যান।
  1970সালে কবিতার বই "গুল এ নগ্মা"র জন্য জ্ঞানপীঠ পুরস্কার পান। 1968সালে 

পদ্মভূষণ সম্মানে সম্মানিত হন,সাহিত্য অকাদেমির ফেলোশিপ পান 1970সালে।
    এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরাজি প্রফেসর হওয়ার আগে ফ়িরাক় আই সি এস 

পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। কিন্তু মহাত্মা গান্ধীজীর আহ্বানে তিনি আই সি এস'এর 

চাকরি ছেড়ে দিয়ে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন। এবং জেলে যান। জেল 

থেকে বেরোনোর পর গান্ধীজীর কোনো একটা ভাষণ শুনে কংগ্রেসের ওপর বীতশ্রদ্ধ 

হয়ে কংগ্রেস ত্যাগ করেন। এ সত্ত্বেও পণ্ডিত নেহেরুজী ও ইন্দিরাজী ওঁর প্রতি অগাধ 

শ্রদ্ধাপোষণ করতেন ও অনুরক্ত ছিলেন। ফ়িরাক় নিজেও নিজেকে নেহেরু 

পরিবারেরই একজন মনে করতেন।
  ফ়িরাক়ের ঘরে প্রায় সাহিত্য আড্ডা হতো। এইরকমই একদিন তাঁর বাড়িতে কিছু 

লোক জরুরি অবস্থা জারি ও ইন্দিরাজীর পরাজয় নিয়ে আলোচনা করছিলেন। 

আলোচনার মাঝে এক ভদ্রলোক ইন্দিরাজীর ওপর প্রবল চটে গিয়ে,তাঁর মুখ দিয়ে 

একটা অপশব্দ "বেওয়া "(বিধবা)বের হয়ে যায়। ফ়িরাক় আগেই এই বিতর্কের জন্য 

বিরক্ত হয়ে গেছিলেন। তার ওপর এই অপশব্দ শুনে অগ্নিশর্মা হয়ে ওঠেন এবং 

নিজের হাতের ছড়ি তুলে ভদ্রলোক কে দু চার ঘা লাগিয়ে দেন। ফ়িরাক় চিৎকার 

করে বলেন..."তুই আমার মেয়েকে বিধবা বলার সাহস পেলি কোথ্ থেকে?"
   ওই ঘটনার পর ফ়িরাক় একবার দিল্লি গেলে ইন্দিরাজী ওঁর সঙ্গে দেখা করার জন্য 

খবর পাঠান। খবর পেয়ে ফ়িরাক় হাজির হলে ইন্দিরাজী বলেন.."আমরা সবাই 

সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আপনাকে রাজ্যসভার সদস্য করবো।"এই শুনে ফ়িরাক় সাহেব 

কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে হেসে বলেন .."ইন্দিরাজী,আপনার দাদুর যুগ থেকে 

'আনন্দ ভবনের' সঙ্গে আমার সম্পর্ক। এই সম্পর্কটা এমনিই দৃঢ় থাকুক,আপনি 

এভাবেই আমাকে সম্মান করে যান।  ব্যস,এটাই লাখ লাখ রাজ্যসভার সদস্য হওয়ার 

সমান। আমি যেরকম আছি, সেইরকমই থাকতে দিন। এতেই আমি খুশি।"
  আজকের দিনে যাঁরা যেনতেন প্রকারে সাংসদ হতে চান,ফ়িরাক় সাহেব তাঁদের 

কাছে দৃষ্টান্ত স্বরূপ।

------------