ধারাবাহিক উপন্যাস : বাণীব্রত চক্রবর্তী

শনিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ /
ফেসবুক-এ শেয়ার করুন /
টুইটার-এ শেয়ার করুন

 







 বাণীব্রত  চক্রবর্তী 


ধারাবাহিক  উপন্যাস 

                    কালতরঙ্গ
                          

                     তিন

বৈঠকখানায় ঢুকে ছবিরানি   চমকে  গেলেন। কোথায়  ইন্দিরা ! একটি  অল্পবয়সি মেয়ে বসে আছে। মেয়েটির মুখ  তিনি  দেখতে  পাচ্ছেন  না। পিঠের ওপর  এলো চুল। অবিকল  তরুণী  ইন্দিরার মতো। তবে কি ইন্দিরা  না  এসে তার  মেয়ে মন্দিরাকে পাঠিয়েছে ! কিন্তু   মন্দিরা তো এখন আর এমন  তরুণী  নয়। এমন  ছিপছিপেও নয়।
      আবার  হেসে  উঠল মেয়েটি।  হাসির ধরন সত্যিই ইন্দিরার মতো।
 নতুন ঠাকুরপো বলছেন, " সত্যি  বলছি  বেনারসের বাঁদরগুলো এমন। কেয়ার টেকার রঘুবীরের বাঁধানো দাঁতের পাটি জলের গেলাসে ডোবানো  ছিল **** "
হঠাৎ  দেখলেন বউদি দরজার সামনে  দাঁড়িয়ে আছেন। হেসে ফেললেন, " তুমি ! এই এলে! আমার  টিয়াপাখি !" ছবিরানি বললেন, "ভৃগু আনছে।"
  সঙ্গে  সঙ্গে  মেয়েটি ঘুরে  তাকাল। অচেনা মুখ। সুন্দর মুখ। ইন্দিরার সঙ্গে কোনও মিল নেই। সত্যিই কি নেই ! ওর মাথার এলোচুলের বন্যার দিকে তাকিয়ে  মনে  হয়  মিল এই কেশরাশির বন্যায়।
আলুলায়িত তরুণী ইন্দিরা  দীনেন্দ্রস্ট্রিটের শ্বশুরবাড়ির ছাতে যখন তাঁর সঙ্গে গল্প করত আর পায়চারি করত তখন  কবরীবন্ধন মুক্ত  বান্ধবীকে এমনই লাগত।
        হঠাৎ  মেয়েটি চেয়ার থেকে  উঠে দাঁড়িয়ে  এগিয়ে এসে তাঁকে প্রণাম করে বলল, " আমাকে আপনি  চিনবেন না। আমার  নাম মীরা।"
 ছবিরানি স্মিত হাসলেন, " কেন চিনব না!  ইন্দুর মুখে তোমার কথা খুব  শুনেছি। তুমি তো মন্দিরার মেয়ে।"
 এবার  দুজনে দুটি চেয়ারে পাশাপাশি  বসলেন। নতুন ঠাকুরপো উঠলেন , "তোমরা গল্প  করো। রাঙাবউদিকে বলেছি চা- জলখাবারের ব্যবস্থা করতে ।"
   ছবিরানির নতুন ঠাকুরপো -র নাম  স্মরজিৎ। স্মরজিৎ সদরের  দিকে এগিয়ে  গেলেন। ওখানে  দাঁড়িয়ে থাকবেন। অপেক্ষা করবেন কখন ভৃগু টিয়াপাখি নিয়ে  ফিরবে।
 ছবিরানির খুব  জানতে ইচ্ছে করছিল  সকালবেলায় মীরা  কেন একরকম ছুটতে ছুটতে তালতলায় এসেছে! ইন্দিরার কি শরীর খারাপ  হয়েছে ! তিনি  মুখ  ফুটে কিছু  জিজ্ঞেস করবেন  না। যা বলবার মীরাই বলবে। দেখে  বোঝা যায়  মীরার বয়স আঠারোর বেশি  নয়।
          ছবিরানির চেয়ে  ইন্দিরা বয়সে খানিকটা  বড়। ইন্দিরার বিয়েও হয়েছিল  বেশ অল্প বয়সে। ইন্দিরার বাবাকে ছবিরানি ডাকতেন মকুকাকা বলে।  বিয়ের  বছর দেড়েক বাদে মন্দিরার জন্ম। ইন্দিরার শ্বশুরমশাই ভবানীপ্রসাদও মকুকাকাকে অনুসরণ করলেন। মন্দিরার বিয়েও হল অল্প বয়সে। মীরা দেখতে  দেখতে আঠারোয় পৌঁছে গেল।
 বাইরে থেকে ফিরে  তক্ষুনি জামা-কাপড় না বদলালে কেমন  অস্বস্তি হয়। মীরাকে বসিয়ে  রেখে তা সম্ভব নয়। শোভনও  নয়।
    শেষপর্যন্ত মীরাই সমাধান করে দিল, " আপনি চেঞ্জ করে আসুন।আমি ততক্ষণে আপনাদের বাগানটা দেখি।  ওখানে দেখলাম  তিনটে চাঁপাগাছ।  অনেক ফুল  ফুটেছে।আমার ফুল খুব ভালো  লাগে।" একটু  থেমে বলল, "আপনাকে নতুন দিদা বলে ডাকব।  আর মনস্থির করেছি  আপনাকে আপনি -আজ্ঞে করব না। তুমি  তুমি  করব। তোমার আপত্তি নেই তো নতুন দিদা !"
     কী সরল মেয়ে। মীরার দিকে তাকিয়ে ছবিরানি বললেন, "একটুও আপত্তি নেই ।"