দুটি কবিতা : আরফিনা

সোমবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ /
ফেসবুক-এ শেয়ার করুন /
টুইটার-এ শেয়ার করুন

 









আরফিনা


আয়না
...........
আমি আয়নাকে দেখি, আয়না কি দেখে আমায়? 
কেমন দেখে, রাক্ষসীর মতন? ক্ষুরধার নখ আর          
রক্তলোলুপ পিপাসা গোপন করে 
সুন্দরী নারীর ছদ্মবেশে রানি হয়ে আছি 
এই রাজপুরীতে! একটু একটু করে রাজা, রাজকুমার আর  
রাজত্বটাই চিবিয়ে চিবিয়ে গিলে খাব চুম্বনের অছিলায়...

নাকি আমাকে দেখতে বহুগামী উন্মাদিনীর মতন?  
আজকে লক্ষ্মণ, আবার কালকেই রহিমের বুকের ভেতর  
দোলাচল করি! অবশেষে আমার নাক কাটা গেলেও  
বহু স্বপ্নপুরীই ধ্বংস হয়ে যায়  
আমার ই দীর্ঘশ্বাসে...

চুপচাপ খেলা চলে আয়না আর আমার!

আমি দেখতে থাকি---  
একটি ছোট্ট নৌকায় মৃত স্বপ্নপুরুষ বুকে জড়িয়ে  
 ভেসেই যাচ্ছি অকূল সমুদ্রে! উথাল-পাথাল ঢেউ,       
 কোথায় যে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে 
জানি না কিছুই। শুধু জানি, এই অজানায় ভেসে ভেসে
খুঁজে আনতে হবে সেই স্বর্গীয় সুবাস। মাস যায়,  
বছর যায়, আয়না জানে না আমার এই 
গোপন ভেসে যাওয়া স্বপ্নপুরুষটির প্রাণ ফেরানোর  
তীব্র বাসনায়, সুদূরের সীমানা ছাড়িয়ে...

আয়না কি দেখে আমায়?

###


মেট্রো-জীবন
....................
ভিড়ে ঠাসা মেট্রো ট্রেনে আমাদের দুটি শরীর          
একাকার হয়ে যাওয়ার ফাঁকে
হঠাৎই চোখে পড়ে---  
সব মানুষের মাথা ছাপিয়ে জ্বলজ্বল করছে 
স্টিলের ছড়ানো স্ট্যান্ডগুলি।

সিনিয়র সিটিজেন লেখা সিটগুলির সামনে
একজন বয়স্ক মানুষ টালমাটাল হতে হতে 
কোনওমতে একটি স্ট্যান্ড ধরে     
 সোজা হয়ে দাঁড়ালেন। 
ওই স্টিলের স্ট্যান্ড কি তাঁর চরম অসহায়তার
লাঠি হয়ে উঠল?

মায়ের হাত ফসকে ছিটকে যেতে যেতে
একটি বাচ্ছা ছেলে কোনওমতে ওরকমই একটি স্ট্যান্ড 
আঁকড়ে ধরল দুহাতে,
আর তখনই যেন সেই স্টিলের স্ট্যান্ডটিই 
তার মা হয়ে উঠল!

আমিও তো তোমাকে নিয়ে ছুটতে ছুটতে 
কখনও লুকিয়ে পড়ি সুড়ঙ্গের ভিতর,
কখনও বেরিয়ে আসি বাইরের আলোয়! 
জীবন কি আসলে একটি মেট্রো ট্রেন? 
আর আমরা দুজনেই কি ওই বয়স্ক  মানুষটির মতন       
কিংবা বাচ্চা ছেলেটির মতো 
একটি স্টিলের স্ট্যান্ড খুঁজেই চলেছি সারাক্ষণ, 
অসম্ভব ভিড়ের ভিতর, একসঙ্গেই?

###