ধারাবাহিক উপন্যাস : বাণীব্রত চক্রবর্তী

 




ধারাবাহিক  উপন্যাস 

                      কালতরঙ্গ
     
               বাণীব্রত  চক্রবর্তী 

                          দুই 

 নতুন  ঠাকুর পো-র হঠাৎ  টিয়াপাখি পোষার শখ হল কেন  !
পাখির কথা  ভাবতে গিয়ে ছবিরানির মনে পড়ল পারসিবাগানে তাঁর বাপের বাড়ির  কথা। ওই বাড়ির একতলায় লম্বা একটা কলঘর। ছোটবেলায় মাকে জিজ্ঞেস  করেছিলেন, " মা, আমাদের একতলার কলঘর এমন লম্বা আর সরু কেন! "
মা বলেছিলেন, " তোমরা তখন  কোথায় ! সবে নতুন বউ হয়ে  পারসিবাগানের এই বাড়িতে এসেছি।"
ছবিরানি জানতেন তাঁদের ঠাকুরদার নাম কুঞ্জলাল আর ঠাকুরমা -র নাম ছায়া। তাই বাড়িটার নাম "ছায়াকুঞ্জ "। মা তো এই বাড়ির নাম উচ্চারণ করতে পারবেন না। উচ্চারণ করলে শ্বশুর শাশুড়ির নাম বলে ফেলা হবে।
ছবিরানি জিজ্ঞেস করলেন," তারপর ! " মা ইরাবতী বলেছিলেন, " শুনেছি  ওটা আগে নাকি  পাখিঘর ছিল। " ছবিরানি অবাক, " তার মানে! " ইরাবতী বলেছিলেন, " ওই লম্বা ঘরে সারি সারি খাঁচায় কতরকমের যে পাখি থাকত তা বলে শেষ করা যাবে না। লালমোহন, নীলমোহন,টিয়া, চন্দনা,ময়না। আর ঠাকুরদালানের সামনের উঠোনে দাঁড়ে বসে থাকত একজোড়া  কাকাতুয়া। ওদের  নাম ছিল  তুতু ও মিতু। আমি অবশ্য এ-সব দেখিনি। শুনেছি। যখন  বউ হয়ে এলাম তখন একটাও পাখি নেই। তারপর  তো পাখিঘর হয়ে গেল কলঘর। "
   এইসব  পুরনো কথা ভাবতে ভাবতে  ছবিরানি পৌঁছে গেলেন তালতলায়। শ্বশুরবাড়িতে। এই  বাড়ির অবশ্য কোনও নাম নেই।
     রিকশা থেকে  নেমে ভাড়া মিটিয়ে  ভেজানো সদর দরজা  ঠেলে  বাড়ির ভেতরে  ঢুকলেন। সামনে  একটুকরো বাগান। কাঁঠাল গাছের কাছে পার্বতী দাঁড়িয়ে আছে। ভজনও আছে। পার্বতী শ্বশুরমশাইয়ের পোষা গোরু। ভজন গোয়ালা একমুখ হেসে  বলল, " বাড়ির ভেতরে  গিয়ে দেখুন  কে এসেছেন। ছবিরানি অবাক, " কে এসেছেন !" ভজন মুখ  টিপে হাসে। উত্তর দেয় না।
  কে আসতে পারে! তাঁর  পেছনে পেছনে  ঝগড়ুও ঢুকেছে। নিউমার্কেট থেকে ছবিরানি যা যা কিনেছেন সেসবের প্যাকেট তার হাতে। ভজন এগিয়ে এসে প্যাকেটগুলো নিল। পার্বতী ডেকে  উঠল, 'হাম্বা।"
   কোন বাড়িটা বড়! পারসিবাগানের বাপের  বাড়ি  না  তালতলার শ্বশুরবাড়ি ! মাঝে মাঝে  এইরকম ছেলেমানুষি ভাবনা  তাঁকে পেয়ে  বসে।
   তালতলার বাড়িটাই বড়। বড়রাস্তার ওপর। উলটো দিকে একটা সিনেমাহাউস। পারসিবাগানের বাড়ি থেকে  বেরিয়ে  কয়েক পা হাঁটলে সার্কুলার রোড। ওপারে মূক-বধিরদের স্কুল। ব্রাহ্মগার্লস স্কুল, লেডিজ পার্ক। এপারে ডান দিকে  আচার্য জগদীশচন্দ্রের বাড়ি  অর্থাৎ  বসু বিজ্ঞান মন্দির। তার  পাশে সায়েন্স কলেজ।
    "ছায়াকুঞ্জ"-তে বাগান  নেই। ভজন মুখে কুলুপ এঁটেছে। কে এসেছেন  বলবে না। কে আসতে  পারে ! ছোট ভাই সুনীল এসেছে ! কিংবা  বড়দার ছেলে সাহেব !  আর কে আসতে পারে !
    বৈঠকখানায় কার গলা! মহিলার। নতুন ঠাকুরপো-র গলা শোনা যাচ্ছে। মহিলার গলা ভারী চেনা। তবে কি দীনেন্দ্র স্ট্রিট থেকে  ইন্দিরা এসেছে !
 ছবিরানি বৈঠকখানার দিকে এগিয়ে  গেলেন