গুচ্ছ কবিতা : তমোঘ্ন মুখোপাধ্যায়

 




তমোঘ্ন মুখোপাধ্যায়

১. অন্ন
_______

অন্নচিন্তা নেমে গেল। নরকদুয়ারে কত মুখ!
এ মুহূর্তে স্মৃতি ভ্রম, এ মুহূর্তে আমি কেউ নই।
শুধু ভিক্ষা গাঢ় হয়ে ভবচক্রে কোটি কোটি বুক
পেরিয়ে এসেছে। ক্ষুধা স্বর্গীয় মেনেছি। স্থির হই।

স্থির হতে হতে অঙ্গ অন্নের শীতল আয়ু চেনে?
খাদ্য থেকে যতদূর আমাদের হত্যা, প্রতিরোধ,
ততদূর আয়ুপথ— এই বিদ্যা জেনে ও না জেনে
অন্নচিন্তা দূরে রেখে দেখি মুহুর্মুহু স্ববিরোধ

আমাদের স্থিতি, প্রজ্ঞা ক্রমশ অবশ করে দিয়ে
গূঢ় অন্ধকার এনে মুখের কুহরে রেখে যায়।
অথচ শরীর এই অন্ধকার ধ্রুব সত্য ভাবে।

এই ভ্রান্তি ক্রমাগত আমাদের হাড়মাস খাবে।
এ মুহূর্তে জরা নয়, অসময় বিপথ সাজায়।
দ্যাখো, অন্ন, অন্নপ্রাণ চলে যাচ্ছে শরীর পেরিয়ে...


২. বোধি
_________

চোখে তথাগত নেই। মাথা বোধি অস্বীকার করে।
মাথা বৃক্ষ হতে হতে বীজ হয়ে জলে খসে পড়ে।
কবন্ধ জাগিয়ে রেখে সারারাত কুশাসন পাতি।
নিজেই নিজের স্রোতে নিজে নিজে হলাম পোয়াতি।
পেটে যে শ্বাপদ বাড়ে আমি তার মাতা না কি পিতা?
নিজের দানের দিকে দুই হাত বাড়িয়ে গ্রহীতা
হয়েছি। নিথর মুণ্ড নিভু নিভু মাটিতে গড়ায়।
মাটি তা ফসল ভেবে তুলে দিল মাটির সরায়।
সরা ফেটে যায়, এত পাপভার সওয়া কি সহজ?
পেটের শ্বাপদ পেট লাথি মেরে ভেঙে ফেলে রোজ।
ভাঙা পেট থেকে তার মাথা, ধড় বেরিয়েছে ক্রমে।
জন্মের এমন দৃশ্য মিশে যাবে বিবিক্ত পরমে।
আমার সজীব মাথা শ্বাপদ চোয়ালে চেপে ধ’রে
বিরাট শকুন হল। মাথা মুখে মহাকাশে ওড়ে।
নীচে স্থির হয়ে আমি কবন্ধ সাজিয়ে বসে থাকি।
কীট ওঠে দেহ বেয়ে। গলা খায়, খায় বাদবাকি
ধড়ের নরম মাংস, শুধু সাদা হাড় পড়ে থাকে।
শকুনের মুখে ধরা মাথা পোড়ে এমন বিপাকে।

চোখ দুটি আধপোড়া। কোনোমতে স্থির হয়ে দ্যাখে—
তথাগত হতে চাওয়া হাড়গুলো পোড়ে একে একে...