সম্পাদকীয় : ভাদ্র সংখ্যা : চন্দ্রদীপা সেনশর্মা

 


 











 অলিম্পিক ২০২০/২১
----------------------------

       চন্দ্রদীপা সেনশর্মা

       -------------------------
    

সংগীত সাহিত্য শিল্পকলা যেমন সংস্কৃতির পরিচায়ক, খেলাও তাই। বাবা বলতেন, 'মানুষের
আদিমতম সংস্কৃতি স্পোর্টস। যেখান থেকে পরবর্তী সময়ে স্পোর্টসম্যান স্পিরিট শব্দটি
এসেছে। অন্য যে কোনও ক্ষেত্রে সফল মানুষদের নিয়ে এরকম কথা তৈরি হয়নি। বরং 
প্রতিটি ক্ষেত্রে কেউ উদারতা দেখালে স্পোর্টসম্যান স্পিরিট শব্দ দুটি বলা হয়! খেলা 
প্রাচীনতম আনন্দও। সাহিত্য শিল্প বিজ্ঞানের মতো খেলার সংস্কৃতিও গড়ে তুলতে হয়। 
মানুষ যদি আবার প্রাচীনযুগে ফিরে যায়, বিজ্ঞান কত কী বলে, জানো তো, খেলা সেদিনও থাকবে।'

বাবার কথা মর্মাহতের কালপ্রবাহে যেন বেজে উঠছে। গত দুবছরে স্তব্ধ হয়ে গেছে পৃথিবী।
মাইক্রোস্কোপিক ভাইরাস তছনছ করে দিচ্ছে সভ্যতা সাহিত্য শিল্প সংগীত ব্যবসা অর্থনীতি
সমাজনীতি। বিজ্ঞানী 'হু' প্রত্যেকে অনুমানভিত্তিক কথা বলছে, কেমন যেন অস্বচ্ছ। আমরা ভয়ে
সিঁটিয়ে আছি। এর মধ্যে যেটুকু আনন্দ পাওয়া তা কোপা আমেরিকা, ইউরো কাপ এবং অবশ্যই
অলিম্পিকের জন্য। অলিম্পিকের দৌড় (একশোমিটার থেকে ম্যারাথন), যে কোনও থ্রো (শটপুট
ডিসকাস হ্যামার জ্যাভলিন), জাম্প (হাই লং ট্রিপল পোলভল্ট), সাঁতার, জিমন্যাস্টিক, কুস্তি,
বক্সিং, সবই মানুষের শরীরী প্রবণতার মধ্যে দিয়ে গড়ে উঠেছে। বিজ্ঞান প্রযুক্তিও খেলাধুলার সঙ্গে
জুড়েছে।

বিতর্ক, যুক্তি, পালটা যুক্তি, প্রতিবাদ সব ছিল টোকিও অলিম্পিক ঘিরে। তবু এত আনন্দ মানুষ
অন্য কোনও কিছু থেকে ইদানীং পেয়েছে বলে মনে হয় না। হয়তো অনেকেই বলবে, এ মধ্যবিত্ত
মানুষের এক ধরনের বিলাস, স্পনসরদের ব্যবসা। সত্যি কি তাই, কত ছোট দেশও অলিম্পিকে পদক
পেয়েছে। উগান্ডা কেনিয়া ইথিওপিয়া, আফ্রিকার মানুষেরা বিশ্বের দরবারে মাথা তুলে দাঁড়ানোর
জন্য নিজেদের নিংড়ে দেন অলিম্পিকে। তাঁদের শ্রম উপেক্ষিত থেকে গেলে খুব কি ঠিক কাজ
হতো? এই অতিমারির বিরুদ্ধে মানুষের খেলা চালিয়ে যাওয়া কি স্পোর্টসম্যান স্পিরিট না?

                            





ভারতের অলিম্পিক সাফল্যে আসা যাক। প্রথম মেডেল সিলভার, ভারোত্তলনে মীরাবাই চানু'র।
নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা মেয়েটি আন্তর্জাতিক খ্যাতি স্পনসর ও সরকারি পুরস্কারে
ভূষিত হচ্ছেন। নীরজ চোপড়া, তাঁর জ্যাভলিন থ্রো (৮৮.৫৮ মিটার) ২০০৮ সালে বিন্দ্রার পর আবার
ইন্ডিভিজুয়াল ইভেন্টে একটি সোনা দিল ১৩৫ কোটির দেশকে, এবং এটি ভারতের প্রথম পদক
ট্র্যাক 'ন ফিল্ডে। অভূতপূর্ব আনন্দে আমরা আত্মহারা হলাম, এও কি কম প্রাপ্তি? পুরুষ
হকিদল ৪১ বছর পর মেডেল পেলেন, ব্রোঞ্জ। লড়াই করেও মহিলাদল চতুর্থ হলেন। রবিকুমার
দাহিয়া কুস্তিতে ৫৭ কেজি বিভাগে সিলভার, বজরং পুনিয়া কুস্তিতে ৬৫ কেজি বিভাগে ব্রোঞ্জ
পেলেন। একটুর জন্য দীপক পুনিয়ার ব্রোঞ্জ হাতছাড়া হল। লাভলিনার বক্সিং এ ব্রোঞ্জ, সিন্ধুর
ব্যাডমিন্টন সিঙ্গলসে ব্রোঞ্জ, সিন্ধু এই নিয়ে পরপর দুটো অলিম্পিকে মেডেল পেলেন। গলফে অদিতি
অশোক মেডেলের কাছাকাছি পৌছেও চতুর্থ হলেন। প্রত্যেককে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।
আমরা এই প্রথম পদকতালিকায় ৪৮ নম্বর দেশ। এরপরও সমালোচনার পক্ষে যাঁরা, চেতনায়
খেলার সংস্কৃতি গড়ে তুলুন, আনন্দ খুঁজে পাবেন।


                 








অতিমারির সময় পরিচ্ছন্নতার দেশ, অনুশীলনের দেশ, কম কথায় বহু কথা বলে দেওয়া হাইকুর
দেশ, জেন দর্শনের দেশ জাপান অনবদ্য দক্ষতায় অলিম্পিক (প্রাচীনতম খেলার আসর) অনুষ্ঠান
পরিচালনা করল। খেলাধুলার সংস্কৃতিকে অক্ষুণ্ণ রাখার অনন্য প্রয়াসকে, জাপানি রীতিতে শরীর
ঝুঁকিয়ে বলি, 'আরিগাতো জাপান।'




-----------
Men's 100 M Gold : L. Jacobs (Italy) Silver : F. Kerley (USA) Bronze : A. De
Grasse (Canada)
Women's 100M Gold Silver Bronze : E. Thompson-Herah, S. Fraser Pryce, S. Jackson (Jamaica)
Men's Marathon Gold : E. Kipchoge (Ke niya) Silver : A. Nageeye (Netherlands)
Bronze : B. Abdi (Belgium)
Women's Marathon Gold Silver : P. Jepchirchir, B. Kosgai (Keniya), Bronze : M.
Seidel (USA)
******
Medal Count
1. USA : G : 39, S 41, B 33.
2. China: G : 38, S 32, B 18.
3. Japan : G : 27, S 14, B 17.
48. India : G : 1, S : 2, B : 4
-----------
বন্ধুত্বের অলিম্পিক : G. Tamberi, M. Barshim, ইতালি আর কাতারের প্রতিযোগী একত্রে গোল্ড
পেলেন হাইজম্পে ২.৩৭ মিটার লাফিয়ে। ২.৩৯ কেউ পারেননি, কিন্তু Tamberi চোট পান। ২.৩৮
Barshim টপকানোর প্রয়াস করেননি।
পোলভল্টে গোল্ড সিলভার ব্রোঞ্জ পেয়ে যাওয়ার পর A. Duplantis ইনডোর আউটডোরে নিজের
রেকর্ড ভাঙতে ছুটলেন, অন্য প্রতিযোগীরা হাততালি দিয়ে উৎসাহ দিলেন। যদিও ৬.১৯ মি.
টপকাতে পারেননি Duplantis.