গুচ্ছ কবিতা : রাজেশ্বর গোপাল

 





রাজেশ্বর গোপাল

অন্বেষণ"

দুচোখে ভীরুতার জ্বর;
দুঃসাহসিক ডানা মেলে দূর আকাশের
সাদা পায়রা হতে চাওয়া শুধু মুখের কথা

এত বড়ো পৃথিবী অনেক উঁচু থেকে  দেখলে
ছোট বৃষ্টির ফোঁটার মত দেখায়
                                           নিরেট, গোলাকার...
কোথায় খুঁজে পাবে আত্নপরিচয়!
কোথা থেকে ভেসে আসে স্ব-ধাম,
                                        নিজস্ব নাম-ঠিকানা? 

যে কথাগুলি বলা হয়ে গেছে কিংবা হবে
সেগুলি নিরর্থক;  শুধু কথার কথা
সমগ্র জীবন ভেঙে কিসের খোঁজ? 
আনন্দের সৌন্দর্যের চেয়ে
বেদনার মাধুর্য্যর পাল্লা বড়ো, দর বেশি
তাই বেদনাই শ্রেয়...

নির্বোধ মেয়েটি কাঁদছে  আর অবুঝ ছেলেটা হাসছে---
কিসের হাসি!  বোকারা যেমন হাসে 
                                                       হা   হা  হা...

 আজও রাত্রির তলপেটে ছিন্ন বিছিন্ন সুখের চাদর!



 "অসংলগ্ন"

স্বপ্ন না হোক স্মৃতি ; স্মৃতি না হোক বেদনা
জীবন বোধের সঠিক মূল্য কোথায় আছে?
উদারতা কিংবা পবিত্রতার হর্ষ স্খলন হলে
                      লোভ ও প্রতিহিংসার দাপাদাপি---
ভিজে সোহাগগুলি তখন মুখ লুকিয়ে কঠোর ব্রহ্মচারী
     শুষ্ক চোখে প্রতিশোধের স্পৃহায় জ্বলে আগুন

অথচ সেই ভ্রূ-প্লাকের শীতল দিনগুলির কথা মনে পড়ে
মনে পড়ে পাথুরে রাস্তায় পায়ের পাতায়
                                                 পটল চেরা দাগ
এখান সেখানে সাজুগুজু রব, হাবুডুবু রং-পেনসিল
  জলের পাতায় মৃদু উষ্ণ ঝিলাম ও
                                                শেষ পারাবার.....

একলা ঘরে এভাবে আর কতক্ষণ? 
সেকালের বাতাস আর একালের বাতাসের মধ্যে
বড়ো একটি পার্থক্য আছে---
তখন খেঁজুর ঝোঁপে জুঁই, মালতীর গন্ধ ছিল
     এখন নোংরা জলে পচতে থাকা শৈবাল দাম।
এই বিরক্তিকর শুয়ে থাকা বিরক্তহীন হতে পারে যদি
জানলার গরাদ ভেঙে দেখে নিই
                                            আমার ইশ্বরের মুখ
ঠিক সেই মেয়েটির মুখের মতন
 
কিন্তু সুখের অ্যাকোরিয়াম কেন মারা যাচ্ছে
                                  হঠাৎ দল দল রঙিন মাছ?



"সংগোপন"

কত ঘুমহীন রাত, বিষাক্ত বাতাস
মাঝরাতের বিছানায় দুঃস্বপ্নের বিভীষিকা, 
উঁকি মারে মশারির চাল বেয়ে 
                                       হিংস্র পোকা মাকড়

কার কাকে কেন আক্রমণ করার কথা ছিল
সেগুলো প্রশ্নাতীত----

হঠাৎ ঘুম ভাঙা চোখে অশ্রু ছলাৎ 
আর কপালের ঘাম মিলে মিশে নোনতা সাগর
প্রায়ই অসহায় ডুবে যেতে যেতে 
                     নিজেদের বোকার মত মনে হয়।

বটপাতায় ক্রমশ ফরসা হতে চাওয়া সকাল
লিখে রাখে অন্ধকারের গান;
ধানের মাচান ভর্তি ইঁদুরের দৌড়াদৌড়ি, 
                                               কাল পেঁচার ডাক

রাত্রির সংগোপনে একলা আমরা
এতগুলো অভিনয় কার সাথে করে এলাম? 
আমাদের মত মূর্খ তেমন আছে কেউ
না'কি মূর্খতায় মুখ ঢেকেছিল বিবেক বুদ্ধির নাটক!

  ভুলে গেছি কার চোখের আলোয়
                               কে কখন দেখেছিল পথ.....



"চিত্রপট"
 
ভাঁজপড়া চিবুকের বয়স গুনে দেওয়ালে আঁকা চিত্রপট 
কে যেন ওটা?       চেনা চেনা লাগে......
আ হা রে!  হাওয়াই চুল উড়িয়ে
রাজকুমার হওয়ার স্বপ্ন ছিল ছেলেটির
শুধু জামিদারির বোঝাপড়া হিসেব নিকেশ ও
       নির্ভুল অঙ্কে স্বাক্ষর হতে পারেনি সে ----

এটাই তো বিড়ম্বনা; পরিহাসের কথোপকথনে 
                                        জলছবিদের কারাবাস
যেখানেই তারা খসা কিংবা উল্কা পতন দেখে
উইশ করার ভাবনা জাগে
সেখানেই আচমকা ঘটে যায় বজ্রপাত,   বৃষ্টি আসে...

কিন্তু ঐ মহলের খবর কি কেউ রাখে?
কোন অংশে চাঁদ উঠলো আর কোন অংশে রোদ!
     এটা অনেক পুরোনো।
কথা হচ্ছে যে ভিজে চুল শুকিয়ে
          রাজকুমারীরও স্বয়ম্বরের শখ ছিল...
ইস!  শরীরের এক অঙ্গে কাঁটা ফুটলে আর এক অঙ্গে জল

যদিও সুখের নয় তবুও একটা আনন্দের খবর আছে
        প্রকৃতির অভিশাপ-----
এখন রাজমহলের মুকুট চূড়ায় 
                     মাঝদুপুরে ধরনা জমিয়েছে দাঁড়কাক !