কোপা আমেরিকা এবং ইউরো কাপ : চন্দ্রদীপা সেনশর্মা

 




কোপা আমেরিকা এবং ইউরো কাপ
-------------------------------------------------

                 চন্দ্রদীপা সেনশর্মা










খেলার থেকে বড়ো উৎসব আর কিছুই নেই। এই
অতিমারির অসময়ে আত্মীয়-বন্ধু বিয়োগের
বেদনা উদ্বেগ ভয় ভাইরাস ভ্যাকসিন গৃহবন্দিদশা
গভীর অবসাদে, এই দুটি টুর্নামেন্ট আমাদের যে
আনন্দ দিয়ে গেল তা ভুলে যাবার না। কোপার
শূন্য মাঠ, ফাইনালে কিছু দর্শক ছিল। ইউরোপে
করোনার বাড়বৃদ্ধি, ইংল্যান্ড দর্শকের অভব্য
আচরণ, বর্ণবিদ্বেষ, সব ঝেড়ে ফেলে আসুন দুটি
টুর্নামেন্টের ফাইনালে ঢুকে পড়ি।

                
লাতিন আমেরিকার ফুটবল এবং ২০২১
আর্জেন্টিনার কোপা বিজয়ে তাঁর কথা মনে
পড়ছে। দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা। তিনি দেখে
যেতে পারলেন না মেসির হাতে ট্রফি। এ দৃশ্য
তিনিই বোধহয় দেখতে চেয়েছিলেন সবথেকে
আন্তরিক ভাবে। পৃথিবীর তৃতীয় বিশ্বের মানুষরা
বরাবর ইউরোপিয়ান ফুটবলের তুলনায় লাতিন
ফুটবলকে ভালোবেসে এসেছে। অর্থের অভাবে
ওদের ক্লাব ফুটবল, এবং কোপা আমেরিকা,
ইউরো কাপের জৌলুসে মলিন হয়ে যাচ্ছে। তবু
মেসির হাতে ট্রফি সেই মালিন্য একটু হলেও মুছে
দিতে পেরেছে।

ব্রাজিলের মারাকানা স্টেডিয়ামে ব্রাজিলকে ১-০
গোলে হারিয়ে মেসি ট্রফি হাতে তুলে নেওয়ার সঙ্গে
সঙ্গে প্রায় প্রতিটি ফুটবলপ্রেমী আনন্দে উচ্ছ্বসিত
হয়েছেন বলা বাহুল্য। মেসিকে আটকানোর
জন্য রক্ষণ সামলাতে গিয়ে কাল হল ব্রাজিলের?
মারাদোনাকে আটকালে বুরুচাগা খেলে দিত। ঠিক
সেভাবেই কি গোল পেয়ে গেল দি মারিয়া? ঠান্ডা
মাথার গোল। ডিফেন্স কেন দাঁড়িয়ে রইল বোঝা
গেল না। নার্ভের উপর চাপ দুদলের ছিল। খেলা
খুব ভালো হয়েছে এমন না। মাঝমাঠে জটলা এবং
অসংখ্য ফাউল খেলার গতি মন্থর করে দিয়েছে।
তবু লাতিন ঘরানার পায়ের কাজ মাঝেমাঝেই
ঝলসে উঠেছে মেসি নেইমার অন্যদের পায়ে।

মেসির মতো খেলোয়াড়, দেশের জন্য একটা ট্রফি
তার প্রাপ্য। টুর্নামেন্টের শ্রেষ্ঠ খেলোয়ার এবং
সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার মেসিই পেল। কোচ
নয়, জিতে মেসিকে শূন্যে ছুঁড়ে আনন্দ করল
সতীর্থরা। খেলার পর আকাশের শূন্যতায় মেসি
কাকে খুঁজছিল? ঈশ্বর, না আর্জেন্টিনা ফুটবলের
ঈশ্বর মারাদোনা? ট্রফি মারাদোনার পরিবারকে
মেসি উৎসর্গ করেছে। অভিনন্দন আর্জেন্টিনা!


   












ইউরো নিয়ে লিখতে গেলে স্বীকার করে নেওয়া
ভালো, আমরা ওদের ট্যাকটিক্যাল এবং ক্রমশ
এগিয়ে যাওয়া ফুটবল সত্যি বুঝি না। যেমন
স্পিনাজ্জোলার অভাব শেষ দুটো খেলায় স্পষ্ট
হয়ে ওঠার পরও ফাইনালে কী অসীম সাহসে
মানচিনির পরিকল্পনায় ইতালি ৪-৩-৩ থেকে 
৩-৪-২-১ এ বদলে যাচ্ছিল। এত আক্রমণাত্মক
ইতালি আগে কি দেখেছি? রক্ষণের দুর্বলতা কাজে
লাগিয়েই ইতালির বিরুদ্ধে গোল পেয়ে যায়
ইংল্যান্ড খেলার শুরুতেই। লুক শ কেন ট্রিপিয়ার
এবং বাঁ পাশে ফাঁকায় উঠে আসা শ'কে ট্রিপিয়ার
পেনাল্টি বক্সে বল দিলে, শ বলটি সুন্দর ভলিতে
জালে জড়িয়ে দেয়। নিজের মাঠে দর্শকের
উল্লাসে খেলা ইংল্যান্ড জিতে যাবে এমন ভাবতে
শুরু করেছি আমরা। ইতালিকে একটু অগোছালো
মনে হচ্ছে।

যে মুহূর্তে ইংল্যান্ড একটু রক্ষণাত্মক হতে শুরু
করল, ঠিক তখন ইতালি মাঝমাঠে খেলা ধরে
নিল। প্রথম হাফের শেষ ২৫/৩০ মিনিট থেকে খেলা
ইতালির নিয়ন্ত্রণে চলে গেল। রহিম স্টার্লিং হ্যারি
কেনদের সামলে নিল ইতালি। সেকেন্ড হাফে শুরু
থেকেই ইতালি আক্রমণাত্মক। কিয়েসা অনবদ্য,
ওকে আটকাতে ইংল্যান্ডের কোনও প্রয়াস সফল
হচ্ছিল না। ইনসিনিয়েও অসাধারণ। বানুচ্চি
কিয়েল্লিনি পুরো ইতালি দল যেন মানচিনির
তুলিতে ছবি হয়ে ফুটে উঠছে মাঠে। কখনও
স্পেনের তিকিতাকা, কখনও হল্যান্ডের টোটাল
ফুটবল, কখনও ব্রাজিল জার্মানির অল-আউট
অ্যাটাক, ফুটবলের সব সৌন্দর্য ঝরে পড়ছে
ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে। ক্রিসেতান্তে বেরার্দি নামাতে
আক্রমণের ঝাঁজ বেড়ে গেল। বানুচ্চি কিয়েল্লিনি
ডিপ ডিফেন্স উঠে আসছে ইংল্যান্ড বক্সে। ৬৭
মিনিটে বানুচ্চি পেনাল্টি বক্সে জটলার মধ্যে গোল
শোধ করল।

আঘাত পেয়ে কিয়েসা মাঠ না ছাড়লে, টাইব্রেকারে
খেলা যেত না। কিয়েসা বেরিয়ে যাওয়ার পর খেলা
ঝিমিয়ে গিয়েছিল। শেষমুহূর্তে সাউথগেট পরিবর্ত
খেলোয়াড় নামায়। তাদের পেনাল্টি শুট-আউটে
পাঠানো কি ঠিক ছিল? তারা গা ঘামানোর সুযোগ
পায়নি। সাউথগেট পরে বুঝেছে ভুল ছিল। এসব
বোঝাবুঝির মধ্যে ইতালির শরীরী ভাষা বদলে গিয়েছিল 
চ্যাম্পিয়ন ভাষায়। টাইব্রেকারে ধীর স্থির ডোলারুমা 
দুটো শট বাঁচিয়ে ইতালি দলকে ইউরো ট্রফি তুলে দিল। 
এই প্রথম ইউরো'তে একজনগোলকিপার টুর্নামেন্টে 
শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় নির্বাচিত হল। সেলিব্রেশনে ক্রাচ নিয়ে 
স্পিনাজ্জোলার উপস্থিতি বুঝিয়ে দিল ইতালি কত 
ঐক্যবদ্ধ দল। সেমিফাইনালে ইনসিনিয়ে জিতে স্পিনা'র
জার্সি পরে আনন্দ করেছিল যে! অভিনন্দন ইতালি!