ধারাবাহিক উপন্যাস : বাণীব্রত চক্রবর্তী

 




ধারাবাহিক  উপন্যাস 

               কালতরঙ্গ

  বাণীব্রত  চক্রবর্তী

নিউমার্কেটের নার্সারি থেকে অনেক ফুলগাছের চারা কেনার পর ছবিরানি ভৃগুকে বললেন," তুই  এবার  নতুন  ঠাকুরপোর ফরমাশ মতো টিয়া পাখি কিনতে যা। আমি বাড়ি ফিরে  যাচ্ছি।"
    ভৃগু বহুকালের পুরনো কাজের  লোক। ছবিরানির শ্বশুরবাড়িতে বহুদিন  আছে। সে বলল, "বেশ। চলুন আপনাকে  একটা  রিকশায়  উঠিয়ে দিচ্ছি।" ছবিরানি মাথা  নাড়লেন, " তার  দরকার  নেই। এখানকার  রিকশাওয়ালারা আমাকে চেনে। তাছাড়া  ঝগড়ুকে বলেছিলাম অপেক্ষা করতে।
   তালতলায় ছবিরানির শ্বশুরবাড়ি। বাড়ির  পেছনে  রিকশার আড্ডা। রিকশাওয়ালারা থাকে। আর আছে বেশ বড় আস্তাবল। ঘোড়া, গাড়ি  এবং সহিস সবাই থাকে।খাবার ঘরের জানলা খুললে দেখা যায়। রিকশা  বা ঘোড়ারগাড়ির দরকার হলে হাঁক পাড়লে কেউ  না কেউ  জানলার কাছে ছুটে আসে। ডাকপাড়ার দায়িত্ব ভৃগুর। আজ তো সে-ই ডেকেছিল  ঝগড়ুকে। 
  এখন  তিনি  ভৃগুকে নিরস্ত করতে পারলেন না।
  মার্কেটের বাইরে এসে দেখা গেল ঝগড়ু অপেক্ষা করছে। রিকশায়  উঠে বললেন, "ভালো দেখে টিয়াপাখি কিনিস কিন্তু ।" ভৃগু বলল, " হ্যাঁ, মা। কোনও চিন্তা  করবেন না।"
     পুরনোদিনের মানুষেরা বলতেন এটি হগ সাহেবের বাজার। এতকাল ছবিরানি নিউমার্কেটে আসছেন  অথচ  জানতেন না এখানে  পাখি বিক্রি হয়। নতুন ঠাকুরপো এ-কথা শুনে খুব  হেসেছিলেন," পয়সা  ফেললে নিউমার্কেটে বাঘের দুধও পাবে, বউদি।"
     ছবিরানির স্বামী সেই কবে চলে গেছেন। বিয়ের  চারবছর বাদে উনি মারা যান। নিউমোনিয়ায়।  সেটা   ছিল 1934 সাল। আর এটা 1968। শ্বশুরমশাই তখনও জীবিত। তার  বছর  পাঁচেক আগে পাটনা কলেজ থেকে  রিটায়ার করেছেন।