গুচ্ছ কবিতা : মন্দিরা ঘোষ

 




মেঘপুরাণ

মন্দিরা  ঘোষ

১.
  স্যাঁতসেঁতে  মেঘভেজা নৌকোমন।চারপাশে যেন জলের দুর্মতি। ।আমিষগন্ধ অভিসন্ধির  কুলকুল বয়ে যাওয়া জেলেডিঙি।জলের শিকড়ে  রূপবতী কন্যার কাচ কাচ ইন্দ্রিয়ঘর। রঙিন মাছের আঁশজলে ফেরিওয়ালার কুডাক। বুকের  সোঁদা বারান্দায় চলকে ওঠে মেঠো বর্ষাসারেং। 
২.
 বাইরে   মাতাল কৃষিডাক। মিশুক সবুজে  খুশিব্যাকুল জলফড়িং । বৃষ্টিরা আলুথালু ছন্নছাড়া যেন গ্রামজন্মের ফুল্লমন। 
কোথাও শুকনো নেই। নেই আধপোড়া  ঘাসজন্ম।বিরতিহীন সবুজে ডুবে থাকে অবেলাভুল।
রোদ নেভানো মেঘের লণ্ঠনে বৃষ্টিকাচ।
গুমোট দুপুরের এলিজি কখন আয়নামুখর।  বর্ষাপুরাণের ঠান্ডা বালিশে রাতগরম জীবনী ঢেলে  ইস্কিমিক শ্রাবণের পেয়ালা।

 নদীমন যেন  বৃষ্টিআদরে উচ্ছ্বল গ্রাম্যবধু! বুকে খলবল  একটানা  বৃষ্টির ঝাঁপতাল। মাঝিডাক। আগল ভাঙে। উঠোনে তুলসির সংসার মাটির ম ম সরে যায়।গাছতলায় ঢেউ ঢেউ আশ্রয়বিরহ, ছড়ানো ছেটানো আকুল গ্রামকবিতা।আধকোমর ঢেউয়ে  শহুরে কলম অক্ষর চষে,চাল ডালের করুণা এঁকে শোকের  গায়ে প্রার্থনা ভাসায়।

৪.
বৃষ্টি  বিপ্লব  আনে ভাতহীনতার বালিমাঠে।জলকাদায় লেপ্টে  যায়  খিদে।মনিহারি রাত তবু তারা বোনে ঠোঁটে। শাড়িতে জড়ামড়ি  মেঘমল্লার। সোঁদা নৌকোঘরে   ছত্রাকের ভ্রূণ।
 ধীরে ধীরে আশ্বিন বেড়ে দেয় পোয়াতি আকাশ। সাদা  তুলোর মখমল। সোনা রোদের অঞ্জলি।সাময়িক বিপ্লবের মতোই,উবে যায় বর্ষাপুরাণ।
কান্নাভেজা গর্ভে  তখনও মেঘধ্বনি।তখনও অপুষ্ট ভ্রূণবৃষ্টি।