গুচ্ছ কবিতা : অমিত চক্রবর্তী

 





অমিত চক্রবর্তী



বাতাসের সহস্র দিক


তখন আমাদের রক্তে অগ্নি, শরীরে উনিশের

কবিতাগুচ্ছ, তখনো আমরা মৃত্যু শিখিনি।

আসলে তখনো কিছুই শিখিনি আমরা,

শুধু ব্লটিং পেপারের মত মন, শেখার ইচ্ছে, শুষে নেওয়া

ভাল, মন্দ, কাপুরুষ যা আসে পরিধির মধ্যে। আমরা তখন

প্রতিদিন প্রেমে পড়েছি। এ গ্রামে ভালবাসা আসে সহজে –

কোনো কোনো দিন রঞ্জনার সাথে

তিনবার প্রেমে, কোনো কোনো দিন

শালিক, ছাতারে, দিঘি, আঁশফল,

সোঁদা গন্ধের।

আমরা তখনো মৃত্যু শিখিনি। শিখিনি নিরাপত্তা

বহুদূর যায়, ভালবাসা আসলেই

খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে পিছনে।

এত শিক্ষা দিলে বিধি, এত যুদ্ধের দাগ দেহে

এত শান্ত, বিবেচক মন

কিন্তু তবুও, কিন্তু তবুও …

আমি কি বা জানি, বাতাসের সহস্র দিক,

বদলানো, বদলানো স্বভাব কবিতার

আর ভালবাসা সেই রহস্যের

নিরুদ্দিষ্ট মানে।


এই কটা দিন


এই কটা দিন যাওয়া হয়ে ওঠেনি

সেই ঢেউখেলানো পাহাড়ের বুকে, গুহাটির কোলে,

যেখানে জল চুঁয়ে চুঁয়ে অন্ধকারে

জল না শোনিত

স্যাঁতসেঁতে দেয়ালে জমে দু একটা শ্যাওলা

মন শীতল করা জলপটি।

 

এই কটা দিন যাওয়া হয়ে ওঠেনি

সেই অরণ্যে একাকী গাছটির পায়ে, বীজ ধরে রাখে

 কাণ্ডে সে তার, মৌচাক নয়,

বুকে বাঁধা প্রাণ

খেটে খাওয়া নতুন মা যেমন

শহরতলির ভিড়ে।

 

এই কটা দিন যুগ্মতায় আমি ঘুরি

ভালমন্দ রান্না করে খাওয়াই তোমায়

শালগম, কি ডিমবেগুন

 

এই কটা দিন মনে হয় সংকেতটা ধরে ফেলেছি

ভালবাসা এই রহস্যের মানে –

 

তারপর এই কটা দিন ফুরিয়ে যাবে হঠাৎ

তারপর আর সকলের মত

তুমিও ফিরে যাবে অধিবাসে।



খুচরো মৃত্যু অথবা মলাটের হাসিমুখ


আমি বেইমান অথবা উদ্ধত হব না কখনই

যদি দেখতে আস আবার, যদি নভেলের

খুনির মত হাজির হও ফের

পুরোনো ঘটনাস্থলে।

সত্যি বলছি আমি মুখ ঘুরিয়ে নেব না, কোনো কটুকথাও নয়,

তুমি যদি আতশ কাচ হাতে তন্নতন্ন, খুঁটিয়ে

দেখো আমার খুচরো মৃত্যু,

তারপর সিদ্ধান্তে আস। নিশ্চয়ই ভেবে নেবে

ঠিকই আছে সব, যা হয় তা ভালর জন্যেই হয়

এইসব।

শুধু এখানে, ডার্লিং, আমার ভাল থাকাটা

প্রকৃতির এলোমেলো বিধান নয়, কোন র‍্যান্ডমনেস নেই এতে,

কোন দূরদর্শিতা,

তোমার প্রসন্ন হাত দিয়ে গড়া অবস্থা এটি

তোমার মিষ্টি বজ্রপাত, সোনার কাস্তে

চেরা সমাধান।

তাই আমার মলাটের হাসিমুখ।