কবিতা : রবীন বসু

 





রবীন বসু



পুরনো চিঠির খাম 



হাঁড়িতে পুরনো চাল, গন্ধ ভেসে আসে

বধূটির হাতে শাঁখা, পাড়ে ধাক্কা লাগে

এত সাবধান যত্ন ভুলে থাকা দায়

পুরনো চিঠির খাম স্মৃতি কথা কয়।


কোথা গেল সেই দিন আতপ্ত অস্থির

অক্ষরে অক্ষরে সাজে হৃদয় কুঠুরি

কত কথা কত ব্যথা মন উচাটন

কিশোরীকালের ক্ষত অধর দংশন।


সব সেথা লেখা ছিল চিঠি পাতা জুড়ে

হারিয়ে ফেলেছে মেয়ে চেনা গ্রাম দেশ

কাজেকর্মে কেটে যায় দিন হয় রাত

বধূটি খুঁজেই চলে হারানো অতীত।


মধ্যরাতে ঘুম ভাঙে স্বামীর দখল

পুরনো খামের গন্ধ বুকে চেপে ধরে

চিঠি নেই শোক নেই নিঃস্ব রাত্রিলিপি

বধূর বুকের ধসে ভূমিকম্পে নড়ে।


তারপর সব চিহ্ন উধাও অশেষ

মেয়ে মরে বধূ হল কাঠের অঙ্গার

আলপথ জাগে শুধু চিঠি পড়ে নেই

খোলা খাম অন্ধকারে বধূর ক্রন্দন।

                 

বুকে হাত চেপে আছে লুকোবে যে চিঠি

মেয়ের সম্পদ এই, শিহরন জাগে

ধরা যদি পড়ে যায় মার খেতে হবে

শাসন দমন করে প্রেম ভালোবেসে।


তুতো দাদা পাড়াতেই নিষিদ্ধ সম্পর্ক

বোঝেনা অবুঝ মন দাঁড়ায় প্রত্যাশা

থরথর বুক কাঁপে ভয়ের পাহাড়

তবু চিঠি পড়া চাই বয়ঃসন্ধি রোগ।


তারপর জলে ফেলা চিহ্ন অবশেষ

রাত্রি জেগে লিখে ফেলা উত্তর চিঠির

কবোষ্ণ বুকের ওমে চিঠি দলা খায়

ঘামে ভিজে ন্যাতা হয়ে হস্তগত হয়।


যে যুবক চিঠি পড়ে তার বুকে ঢেউ

কেউ কি দেখছে তাকে? আড়ি পাতে কেউ?

গোঁফের ঘামের থেকে নিষিদ্ধ নির্যাস

রোমাঞ্চ আবেশ নিয়ে একা করে তাকে।


এই তো প্রেমের দ্বার, সেই গুপ্ত মুখ

আলোকিত ভালোলাগা শিহরন খেলা

বুকের গভীরে ডাকে অজানা আড়াল

আজ সব খুলে যাক, উন্মুক্ত অবাধ।


তারপর সব চিহ্ন উধাও অশেষ

মেয়ে গেল বধূ হয়ে যুবক বিভুঁই

আলপথ জেগে আছে চিঠি পড়ে নেই

খোলা খাম অন্ধকারে বধূর ক্রন্দন।


এ কান্না প্রেমের রথ বুকে জেগে থাকে

প্রেমিক প্রেমিকা টানে দড়ি ধরা সাজ

আবহমানে গড়ায় জ্যোৎস্না মাখা হাত‌

ইন্দ্রধনু গড়ে ওঠে বিরহ ভাসায়।



            ••