'দ্য ভিঞ্চি অফ ইন্ডিয়া’
সন্দীপন গোস্বামী
রণেন আয়ন দত্তের জন্ম ১৯২৫-এ।
অর্থাৎ এখন বয়স প্রায় ছিয়ানব্বই।
কিংবদন্তি শিল্পী ঠিক কেমন আছেন ক’জনই বা জানেন।
তবে তিনি আছেন। কিন্তু সব চেয়ে বেশি যেটা আছে,
তা তাঁর আঁকা অসাধারণ সব ছবি। চারুকলার বাইরেই
তাঁর একটা সময়ের জনপ্রিয়তা ছিল। সচিত্রকরণ, প্রচ্ছদ
কিংবা সিনেমার পোস্টার তো আছেই। কিন্তু সবকিছুকে
ছাপিয়ে মানুষের মনে তাঁর অমরতা বোধহয় বিজ্ঞাপনের
কাজে। টি বোর্ড, টাটা স্টিল, জবাকুসুম আর শালিমার
নারকেল তেলের বিজ্ঞাপনের সেইসব অনিন্দ্যসুন্দর ছবি
যাঁরা একবার দেখেছেন, ভুলতে পারেননি। এমনি এমনি
ভাস্কর চিন্তামণি কর তাঁকে ‘দ্য ভিঞ্চি অফ ইন্ডিয়া’
বলতেন না। বা অবন ঠাকুর দর্শনার্থীদের ভিড়ের মধ্যে
থেকে ডেকে নিতেন না তরুণ রণেন আয়নকে। এই শিল্পীর
আর একটি নেশা ছিল মিউজিয়াম সাজানোর।
রামমোহন সংগ্রহশালা, স্টেট ব্যাঙ্কের মিউজিয়াম— একেবারে
নিজের হাতে গুছিয়ে সুন্দর করে দিয়েছিলেন। সঙ্গে পছন্দ
করতেন সিনেমার পোস্টার ডিজাইন করতে। কাবুলিওয়ালা,
ছুটি, উত্তরফাল্গুনী, হারানো সুর—পোস্টারে দুরন্ত সব কাজ!
তাঁর করা ‘তিতাস একটি নদীর নাম’-এর প্রচ্ছদ দেখলেই
স্পষ্ট হয়ে যায় ঠিক কতটা উঁচু জাতের শিল্পী তিনি।
শিল্পীর আদিবাড়ি শ্রীহট্টে। একান্নবর্তী পরিবারের বড় ছেলে।
এক জ্যোতিষী হাত দেখে বলেছিলেন, বড় হয়ে মস্ত আঁকিয়ে
হবেন। সে সময়ের নিরিখের আশ্চর্য যা তাই করেছিলেন
তাঁর বাবা। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের মোহমুক্ত হয়ে ওই
জ্যোতিষীর কথাতেই ছেলেকে নিয়ে সোজা চলে এসেছিলেন
সরকারি আর্ট কলেজে ভর্তির পরীক্ষায় বসাতে। চারুশিল্পে
তাঁর কাজে ভীষণ রকমই প্রভাব ছিল অবনীন্দ্রনাথ, নন্দলাল
বসুদের। কিন্তু তাঁর নিজস্বতার গুণে কখনওই সে সব ছবি
‘কপি’ হয়ে ওঠেনি। নিজস্বতা কী ভাবে একজনের ভিতরে
গড়ে ওঠে? কয়েক বছর আগে এক প্রদর্শনীতে এসে রণেন
আয়ন বলেছিলেন, অবশ্যই কম্পিউটারের মতো যন্ত্রের সৌজন্যে
নয়। তাঁর কথায়, মস্তিষ্ক আর হাতের দক্ষতাই একজন শিল্পীর
সৃষ্টির শেষ কথা।
কোন মন্তব্য নেই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন