মারাদোনা : অমিত ভদ্র

মঙ্গলবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২০ /
ফেসবুক-এ শেয়ার করুন /
টুইটার-এ শেয়ার করুন

                                         



উপেক্ষিত মানুষের নায়ক মারাদোনা
----------------------------------------

অমিত ভদ্র

ভারতবর্ষের সৌভাগ্য তিনি এদেশে এসেছিলেন।
তাঁর জন্য নির্ধারিত রাজকীয় আসন ছেড়ে মাঠে
ঢুকে পড়েছিলেন। দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা,
তিনি অনন্য। তাঁর পায়ে চোখ রেখে শুধু কি ফুটবল 
দেখত জনগণ?  স্বপ্নও দেখত। যে স্বপ্নে
জড়িয়েছিল বিদ্রোহ প্রতিবাদ। মারাদোনা যেন
হতে পেরেছিলেন উপেক্ষিত জনতার, বিশেষ করে
তৃতীয় বিশ্বের প্রতিনিধি। লাতিন ঘরানার ফুটবল
বা বিশ্ব ফুটবলে কোনোভাবেই আর্জেন্টিনা এবং
ভারত তুলনীয় না। তবু আমার আনন্দ আমি
একজন ভারতীয় ফুটবলার এবং তাঁর সমকালীন,
দুমাসের ছোট। আন্তর্জাতিক পরিসরে আমাদের
পক্ষে কর্পোরেট বা ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসডার হয়ে ওঠা
প্রায় অসম্ভব। মারাদোনা? মাঠের ভিতর এবং
গ্যালারিতে তাঁর উচ্ছ্বাস কান্না আবেগ এবং ঘুমিয়ে
পড়া কোনো আচরণই কর্পোরেট  ফুটবলারের
মতো ছিল না। যেন পাশের বাড়ির ছেলেটি। তৃতীয়
বিশ্বের ভরসা, বেঁচে থাকার রসদ।

মারাদোনা অবশ্যই মিলিওনিয়র ফুটবলার ছিলেন।
মিলিয়ন শব্দটির ধার এবং ভার দুই বুঝেছিলাম
যখন তাঁর বাঁ-পা বীমার আওতায় এল। অথচ সেই
মিলিওনিয়র কী করলেন? তাঁর দেশের সাধারণ
লোকজনকে প্লেনে উড়িয়ে নিয়ে এলেন নিজের
খেলা দেখাতে। ফুটবল বিশ্বে পিছিয়ে পড়া একটি
ক্লাব, নাপোলিতে সই করলেন। সেই ক্লাবটিকে
লীগ চ্যাম্পিয়ন করে তুলে আনলেন প্রথম সারিতে।
এই করোনার সময়ে শুধু তাঁর মৃত্যুতে নেপলসের
অসংখ্য মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিলেন, যদিও
তিনি সুদূর আর্জেন্টিনায় প্রয়াত হন।

তিনি ডোপ টেস্টে ধরা পড়ে নির্বাসিত হয়েছেন।
ফিফা এবং অন্য ফুটবল সংস্থার সঙ্গে বিতর্কে
জড়িয়েছেন। চে'র ছবি আঁকা টি-শার্ট, ফিদেল
কাস্ত্রোর দেওয়া টুপি মাথায় তিনি যেন ফুৎকারে
উড়িয়ে দিয়েছেন প্রথম বিশ্বের আধিপত্য।কিউবায়
চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ হয়েছিলেন। কাস্ত্রোকে তিনি
দ্বিতীয় বাবা বলতেন। মারাদোনা, ভাই হুগো
মারাদোনা এবং ক্যামিলো ছিলেন খুব বন্ধু। 
ক্যামিলো যিনি কলকাতায় খেলে গেছেন এবং
পরবর্তীকালে কোচ হয়েও এসেছিলেন। ওঁর সঙ্গে
আমার সম্পর্ক খুবই বন্ধুত্বের ছিল। ওঁর মুখে
শুনেছি মারাদোনার বহু গল্প। কেন তিনি এত
জনপ্রিয়! এই নিয়ম ভাঙা, কোনোকিছুর তোয়াক্কা
না করা বিদ্রোহ বিতর্ক তৃতীয় বিশ্বের মানুষকে
উদ্বুদ্ধ করত। আমরা যা পারি না, দিয়েগো পারেন।
নো-স্মোকিং জোনে দাঁড়িয়ে স্মোক করতেও
পারেন, শিশুর মতো কাঁদতেও পারেন। একটি
বিতর্কিত গোল(হ্যান্ড অব গড) করে তারপরই
পারেন বিপক্ষের রক্ষণকে চুরমার করে অনবদ্য
একটি গোল করতে।