১৪০০ সাল পত্রিকা : কবি গৌরাঙ্গ মিত্র : শ্রদ্ধার্ঘ্য

বৃহস্পতিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২০ /
ফেসবুক-এ শেয়ার করুন /
টুইটার-এ শেয়ার করুন

 ১৪০০ সাল পত্রিকা












নক্ষত্রের জন্মকথা'
দুটো শব্দ
এই দুটো শব্দ নিয়ে গেল
একটি বইয়ের মলাটের ভিতর
'মন্থর মুহূর্তগুলি'।
বিন্দু থেকে বিন্দু টানা হল
সরলরৈখিক অম্লান সম্পর্কে
এই জার্নিটুকু বাকি ছিল জীবনের...

গৌরাঙ্গদা ভালোবাসা
 

১৪০০ সাল কার্তিক সংখ্যার পুনর্মুদ্রণ  :  কবি গৌরাঙ্গ মিত্র








বড়ো কথা ছোটো কথা


ছোটো মুখে বড়ো কথা হলে, এপ্রান্ত থেকে করুণা 

আর ওপ্রান্ত থেকে অনুকম্পা ছাড়া অন্য কিছু 
জুটবে না।
বড়ো মুখের বড়ো কথা  সংসারের আনাচেকানাচে 
ছড়িয়ে সম্পদ নষ্ট করবেন না প্লিজ।
লোকজন জড়ো করুন, প্রকাশ্য সমাবেশ করুন,
সেখানেই উগড়ে দিন গ্যালন - গ্যালন বড়ো- বড়ো কথা।
ছোটোদের জন্য আয়োজিত গল্প দাদুর আসরে 
ছোটো মুখে ছোটো কথা উড়িয়ে দিন, ছড়িয়ে দিন।
ছোটোদের শরীরের  ও ছোটো ছোটো কথার
 উত্তাপে হয়তো ঈশ্বরের ঘুম ভাঙবে,
ঈশ্বর জেগে উঠবেন। 












গৌরাঙ্গ বলেছিল বা লিখেছিল :
নাসপাতিগাছের নীচে যে পাথরটার ওপর আটের
দশকের একগুচ্ছ দিন পাহাড়ি রোদের রেণু গায়ে
মেখে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল সেই পাথরটার নাম
রাখ গৌরাঙ্গ।

আমি লিখলাম :
হরীতকীগাছের ওপর দিয়ে যে পাখিটা এইমাত্র
উড়ে গেল
সেই হরীতকীগাছ
সেই পাখি
এবং আকাশের সেই উড়ে যাওয়া অঞ্চলটির নাম
রাখলাম
গৌরাঙ্গ মিত্র

    ---প্রভাত চৌধুরী
16 .12 .2020 ♢ 19 : 51













প্রিয় বন্ধু গৌরাঙ্গও এবার পুতুলের সংসার ফেলে
আরো বেশি পৃথিবীর খোঁজে উড়ান দিল এক
না-ফেরার দেশে, হয়ত ঢুকে গেল তার প্রিয়
নক্ষত্রের জন্মকথায়, হয়ত যেখানে সে এখন কথা
বলতে ব্যবহার করছে পাখিদের এসপারান্ত।
গুরুদেবের পাঠশালায় আমি রয়ে গেলাম একা।
একেবারে একা । যেখানেই থাকো ভালো থাকো
বন্ধু, ব্যথা ও বেদনা সামলে আমাদেরও তো
একদিন মেনে নিতে হবে স্মৃতিরাই সুন্দর। তোমারই
শেখানো কথা দিয়ে তোমার স্মৃতি-তর্পণ করলাম।
এই মুহূর্তে নিজের কথা হারিয়ে ফেলেছি যে।

    ---মুরারি সিংহ

ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

    দুটো জবাগাছ এনেছিল
গৌরাঙ্গ। সঙ্গে দুটি টবও। সেই
গাছাদুটি লাগিয়েছিলাম দুজনে।
  তখন রাস্তার কল থেকে জল
তুলে আনতাম গৌরাঙ্গ সৌমিত্র
এবং আমিও। গাছদুটি এখনো
                    বেঁচে।
    ---প্রভাত চোধুরী
১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, সকাল ১০.১৫

গৌরাঙ্গ--তুমি আমার কবিতা
সম্পর্কে লিখেছিলে। আমি সেই
লেখা আমার বইয়ে রেখেছি।

যা তোমাকে আর দেওয়া হল
                     না
    ---পিনাকীরঞ্জন সামন্ত

যা ভয় পেয়েছিলাম। গৌরাঙ্গদা
  আর নেই। শেষ যেদিন কথা
হলো কেক খেতে চেয়েছিলো
  সেদিনও। দুটো কেক ডিউ
ছিলো। দাদা কাকে খাওয়াবো
এবার! এক অভিভাবকের ছায়া
             চলে গেলো।
    ---মৌমিতা পাল












মৃতদেহ
----------
নক্ষত্রের জন্মকথা লিখে
একটা মৃতদেহ
তিন পা এগিয়ে গেল।

অন্ধ হাত
-------------
জলপ্রপাতের আঘাতে টুকরো হচ্ছে সময়,
জলাশয়ের কিনারায় দাঁড়িয়ে
একটা অন্ধ হাত টেনে যাচ্ছে ছড়।

পাতাল
----------
কোনো ভুগর্ভ-রেল আজও
পাতালে পৌঁছতে পারেনি,
পাতালে পৌঁছতে পারে শুধুমাত্র সীতা।

গৌরাঙ্গ মিত্র, বই: নক্ষত্রের জন্মকথা

ডোমের ঈশ্বর
------------------
সিসিফাস, আমিও একটা পাথর ঠেলে ঠেলে
ওপরে তুলতে চেয়েছি যতবার
গড়াতে গড়াতে নীচে নেমে এসেছে।
পাথরটির গায়ে সংঘবদ্ধ অভিশাপের লিপি নেই,
বরং পিঠে আছে উড়তে সক্ষম দুটি ডানা।

কাগজ নয় সিসিফাস, কবিতা লেখার জন্য চাই
মানুষের আহত হৃদয়।
সে-হৃদয় কি আগুনে পোড়ে?
হয়তো সে কথা জানে শ্মশানের ডোম
অথবা ডোমের ঈশ্বর।

   ---গৌরাঙ্গ মিত্র, বই: আধখানা প্রবাদ 

একদিন আমি
--------------------
একদিন আমি জায়মান স্তব্ধতার দেশে চলে যাচ্ছি
আর পথের দুধারে দাঁড়িয়ে তোমরা নেড়ে চলেছো
অশ্রুসিক্ত হাতদুটি। আমি এমনিই চলে যাব,
আমার কোনো জেরক্স কপি থাকবে না, কার্বন কপি থাকবে না।
নিজস্ব জলোচ্ছ্বাস থাকবে না, ভাঙা ডানা থাকবে না।
এই তো বেশ কেটে গেল কিছুটা সময়,
তনুশ্রী গাছের ছায়ায় জুড়োনো ঘামে-ভেজা শরীর

এই যে এতদিন ধরে গুচ্ছ গুচ্ছ কথা বপন করলাম
সাদা পৃষ্ঠার বিস্তীর্ণ জমিনে
একটা অঙ্কুরও উদ্গত হল না আজতক।
আশঙ্কা হচ্ছে কুয়াশা-ঘেরা গন্তব্যের কেন্দ্রস্থলে
লুকিয়ে রয়েছে হয়তো অসংখ্য ফাটল।
--------
   ---গৌরাঙ্গ মিত্র, বই: কোন ভাষায় বিদ্যাপতি