১৪০০ সাল পত্রিকা : কবি নাসের হোসেন : শ্রদ্ধার্ঘ্য

শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২০ /
ফেসবুক-এ শেয়ার করুন /
টুইটার-এ শেয়ার করুন

 ১৪০০ সাল পত্রিকা  










যে কোনো অনুষ্ঠান সুন্দর হয়ে উঠত তাঁর
সঞ্চালনায়। তিনি চিত্রকর কবি সম্পাদক নাসের
হোসেন। কাব্য সংগ্ৰহ, অজয় দাশগুপ্ত প্রকাশ
অনুষ্ঠানের সঞ্চালনাও তিনি করেন। ওই অনুষ্ঠানে
তিনি কাব্য সংগ্ৰহ থেকে বিভাব কবিতাটি পাঠ
করেছিলেন। অসামান্য ছিল সেই পাঠ। তাঁর
প্রয়াণে আমরা শোকস্তব্ধ। ১৪০০ সালের পক্ষ
থেকে তাঁকে গভীর শ্রদ্ধা ও প্রণাম জানাই।
নাসেরদা ভালো থাকবেন।


১৪০০ সাল কার্তিক সংখ্যার পুনর্মুদ্রণ  :  কবি নাসের হোসেন



১. চিল


টেবিলের উপরে  একটা ছোটো ঘনক, তার পাশে
একটা বীণাবাদক  বালকের মূর্তি, তারও পাশে
একটি চকিত আওয়াজে  ফিরে  তাকানো অশ্ব
একটা সাদা প্লাস্টারের হাত পড়ে আছে তার পাশে
দুটি অনন্ত ঘুমন্ত মুখ দেখা যাচ্ছে রয়েছে
তারও পাশটিতে,পেছনে ধূসর রেলিং , রেলিং - এর
ওপাশে আকাশ, সেখানে কতকগুলো চিল উড়ছে।


২. কাচ

আজব কাচের নগরীতে উঠে এসেছি, কত রকমের কাচ
একটাই শুধু বিশেষত্ব সেটা হল এই কাচ কখনো ভাঙে না
কোনো কোনো কাচের মধ্য দিয়ে পিছনের দৃশ্য 
দেখা যায় এবং কোনো কোনো কাচের মধ্য দিয়ে 
পিছনের দৃশ্য দেখা যায় না, মাঝেমাঝেই 
নিশ্ছিদ্র  নিস্তব্ধতায়  শোনা যায়  হায়েনার হাসি
এত হায়েনা এল কোথা থেকে,এত হায়েনা
উত্তর মেলে না, প্রশ্নগুলোই প্রতিধ্বনিত  হতে থাকে।

৩. কিছু অসমাপ্তি

যেতে পারো, তবু যেতে পারো না, এখন তুমি যে পরিসরে  
অবস্থান করছো সেখানকার সব কাজ সব কর্তব্য
সমাধা না করে তুমি যেতে পারো না, একটা পরিসরের
কাজ শেষ করে, সুষ্ঠুভাবে শেষ করে, তবেই পরবর্তী 
পরিসরে ঢোকা, তা নইলে সব কাজই থেকে যাবে অসমাপ্ত 
আর সকলেই  জানে, অসমাপ্ত  করে রাখা মোটেই
মানুষের  পক্ষে সমীচীন  কাজ নয়, তবু কিছু
অসমাপ্তি থেকেই যায়।

ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

নাসের কাচের গাড়িতে
চেপে বহরমপুর চলে গেল
শুয়েছিল। কিছু কথা বলল
      না। শুনলোও না।
আগামীকাল ওকে মাটির
নীচে রেখে দেওয়া হবে।

     ---প্রভাত চৌধুরী

মাটির নীচে কবিতালেখার জন্য
         কাগজ এবং কলম
   পাঠাতে হবে, ওখানে বসে
কবিতা লিখবে নাসের। একমাত্র
    নাসের-ই পারে যেকোনো
    জায়গায় কবিতা লিখতে।

    ---প্রভাত চৌধুরী











আজ বহরমপুরে নাসেরকে
  নিজের বাবা মার পাশে
মাটির নিচে শুইয়ে দেওয়া
  হবে। আর দেখা হবে না।
        কথাও হবে না।

     ---মুরারি সিংহ


ঘুমাও কবি ঘুমাও, চির শান্তির দেশে। আর প্রাণ
ভরে কবিতা লিখে যাও

     ---মুরারি সিংহ

কদিন আগে ফোনে নাসের: 'নিখিলদা, একটু সুস্থ
হলেই আমি বাড়ি যাব(বহরমপুর)। আপনার জন্য
কবিতাপাক্ষিক শারদসংখ্যা সঙ্গে নেব।'
নাসের সেই তো এলে, কিন্তু হায়।

          ---নিখিলকুমার সরকার

চির-বিশ্রামে
আমাদের পরম প্রিয়
সুন্দরপ্রতিম
কবি নাসের হোসেন

         ---নিখিলকুমার সরকার

জীবনে খুব কম সংখ্যক বড় মানুষের সঙ্গ লাভ
করেছি। নাসেরদা তাঁদের একজন।
    ---রুদ্র কিংশুক

নাসেরের মৃত্যুর সঙ্গে এই শহরের একটি
সুন্দর মুখ এবং একজন অনিন্দ্যসুন্দর
মানুষ চিরদিনের জন্য হারিয়ে গেল।
তার নীরবতা ছিল  ধর্মপালনের মতো
সংবেদনশীল।
    ---কালীকৃষ্ণ গুহ 

আমাদের নাসের হোসেন নেই
      ভীষণভাবে বিমর্ষতা
আমাদের মধ্যে চিরস্মরণীয়
        হয়ে রইলেন

       ---সমরেন্দ্র রায়

নাসের হোসেন অন্য জগতের খোঁজে
      ---সমরেন্দ্র রায়

আমি দুজন মানুষের হাসিমুখ দেখে দেবতার
হাসির ধারণা পেতাম, এখনও আর কোথাও এই
অতুলনীয় নিষ্পাপ দেখিনি। একজন আমাদের
নাসের, আর অন্যজন মহম্মদ রফি।

        ---অমিতাভ মৈত্র

'কবিতা পাক্ষিক'-এ অর্জুন মিশ্র ছদ্মনামে 
কবিতাসংবাদ পরিবেশনের সঙ্গে ঈলিনার 
ছবিও রিভিউ করেছে। অবাক হলেও
জানতে দেরি হয়নি যে নাসের আসলে
প্রথমে চিত্রশিল্পী পরে কবি।
মৃত্যুর পরের দিন সারারাত ঘুমোতে পারিনি।
যেন হাসিমুখে শিয়রে দাঁড়িয়ে বলছে:
'চলো চলো বেরিয়ে পড়ো এক্ষুনি...'

   ---কানাইলাল জানা 

জল নিম্নদিকে প্রবাহিত হয়
          ওপরে ওঠেনা
    কবি নাসের হোসেনের
  ভালোবাসা ছিল জলের মতো
সহজ সরল কেন্দ্র থেকে পরিধির
    দিকে অনন্ত ছুটে যাওয়া

     ---পিনাকীরঞ্জন সামন্ত

নাসেরদা

পিছন ফিরে দ্যাখো
ভালোবাসতে বাসতে একটা মানুষ
ক্রমশ গাছ হয়ে উঠেছেন
ভালোবাসার গাছ

     ---মন্দিরা ঘোষ

তরুণ কবিরা অভিভাবকশূন্য হল..
                নাসেরদা
    নাসের হোসেন প্রয়াত..

    ---মুহম্মদ মতিউল্লাহ্

এমন স্নেহশীল মানুষ কম দেখেছি। আর এমন
অকপট সারল্য কোথায় পাব বল...

     ---মৌ দাশগুপ্ত


শ্রদ্ধেয় নাসের হোসেন স্মরণে


পরিচয় ছিল না কোনো
হয়নি সাক্ষাতের সুখ
শুধু ছবি দেখে বুঝেছিলাম:
প্রিয় ভালো মানুষের মুখ।
     ---দীপক কর(ধানসিড়ি)

দুঃখ আছেই। তবুও তাঁকে খুঁজে পাই শব্দে,ধ্বনিতে
    ---অভিজিৎ দাসকর্মকার

এমন করে কথা আর কেউ কোনোদিন বলবে না।
নাসেরদা এত তাড়াহুড়ো না করলেই পারতেন।
এত শোক, এত কান্না...

     ---শুভদীপ সেনশর্মা











কাব্যগ্রন্থ: লাফ

বিভাব কবিতা
নাসের হোসেন
             
নিশ্চিত-শূন্যে লাফ দিয়েছি
                                 দিগন্তবিস্তারী
যেন-বা আমিই সেই গতিশীল আকাশ

চারপাশে ভগ্নাবশেষ
সবকিছুকে ভেদ করে ছুটে যাচ্ছি
আলোর গতিকে তুচ্ছ করা তরঙ্গকণিকা

আমি কে, আমি জানি না
আমি কে, তোমরাও জানো না
তবু আমার আনন্দ দেখে
আজ তোমরাও নেচে উঠছো অপরিসীম
---------
সৌজন্য: নাসের হোসেন নির্বাচিত কবিতা ২