মুক্তগদ্য : চন্দ্রদীপা সেনশর্মা

 





মুক্তগদ্য
-----------

                     চন্দ্রদীপা সেনশর্মা
            
         -------------------------

পাহাড় ডিঙিয়ে যে মেঘ নীরবে সমতলে নামে
এবং ঝরে যায়, জীবন তার থেকে খুব বড়ো কথা
না। ওই ছোট ছোট নিমেষ, মেঘ বৃষ্টি হয়তো ঝড়,
ফুলের মতো সাজিতে গুছিয়ে তোলা। মালা গাঁথা।
গাঁথা মালা খুলে ফুল ছড়িয়ে দিতেও বেশ লাগে।
কত আনন্দ উত্তেজনা, মালাগাঁথার। কত বেদনা
অশ্রু, খুলে ফেলবার। বস্তুত দুইয়ের মধ্যে বিশেষ
তফাত নেই। ফুল কি খুব দীর্ঘস্থায়ী বা চিরকালের?
তা'কে কি ধরে রাখা যায়? প্রকৃতির মাটি একদিন
নিজের কাছে তা'কে ফিরিয়ে নেবেই।

বাড়িতে নতুন অতিথি এসেছে। কত গাছ কত ফুল।
স্টাডিতে বসে লেখাপড়া কম হয়। শয়নকক্ষের
নিভৃত রাতগুলো আছে তো। রাত গল্প হয়ে উঠলে
লিখতে পড়তে ভালো লাগে। স্টাডিরুম মানে দীর্ঘ
তাকিয়ে থাকা। তাকিয়ে থাকার মধ্যে একরকম
বোঝাপড়া আছে। পিটুনিয়ার শরীরে আদুরে 
রোদ্দুর কী কথা বলছে? ওইঘরে নরম পুতুলেরা 
আছে। একটু সঙ্গ পেতে ওরাও চায়। বেলা পড়ে 
এলে দক্ষিণ জানলায় শেষ আলো মৈথুনে মেতে 
ওঠে ফুল পাতার ঋদ্ধ শরীরে। আলো পশ্চিম 
থেকে আড়াআড়ি দক্ষিণে এসে পড়ে। তার মন্থর 
ডুবে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকা, সেও কি কম 
পাওয়া? রোদ ছেড়ে বেরিয়ে আসছে বয়স ধীরে ধীরে। 
ভেবে চলি অতীত খেলাগুলো। সে অর্থে খিলাড়ি হয়ে 
উঠিনি। যদিও খেলাপ্রেমী, সে অবশ্য স্পোর্টস। 
লেখা শুরুও করেছিলাম স্পোর্টস দিয়ে। কবিতা লিখব, 
কখনও ভাবিনি। তবু কীভাবে এসে পড়লাম কবিতার 
জগতে, কিংবা কবিতা এসে পড়ল আমার জগতে, 
বলতে পারব না।

হাতের তালুর ভিতর থেকে যে বয়স হেঁটে গেল,
তাকে মুঠোয় কতটুকু ধরে রাখতে পেরেছি, জানা
হল না। মুঠো খুলেই রেখেছিলাম, সময়কে বয়ে
যেতে দিয়েছি অবিরাম। জোর করে কিছুই পেতে
চাইনি, অধিকারবোধ চাপিয়ে দিতেও চাইনি। তবু
করতলে কিছু ভুল বোঝাবুঝি, অন্যের বিরক্তির
দাগ থেকে গেল, যা মুছে যাওয়ার না। নিয়ম মেনে
বয়স এগিয়ে চলেছে, পিছুটানে ফিরতে চাইলেও
না ফেরাই শুভ। যে উৎস থেকে এসেছিলাম, যে 
অর্থে অগ্নিজাতক, তার অন্তিম দাহটুকু সামনে।
সামনের দিকে তাকিয়ে দেখি পথের শেষ বাঁক 
স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

পিটুনিয়ার শরীরে শেষ রোদের প্রতিসৃত আলো।
আকাশ পশ্চিমে পুড়ছে...তার ঘন কালো আশ্রয়ে
নবজাতক রাত: যুবতী রাত...মিশ্র ঝিঁঝিট:
'কিছুই তো হল না
সেই সব--সেই সব--সেই হাহাকাররব
সেই অশ্রুবারিধারা, সেই হৃদয়বেদনা।।'
                           ---রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর