গুচ্ছ কবিতা : প্রতাপ মুখোপাধ্যায়

 








প্রতাপ মুখোপাধ্যায়



বিনিময় ।।



হে আল্লা আমার যতদিন বাকি আছে , যতরাত বাকি আছে, সব তোমাকে দিলাম ।
প্রভু, তুমি নিয়ে নাও ।

শুধু একটি সন্ধ্যা আমায়, মান্টো'র জীবন দাও




দিন শেষে ।।


আমিতো বৃদ্ধ বাউলের একতারা, একা গাইতে পারিনা, 
আমার বাউল না বাজালে বেজে উঠিনা ।  একটি মাত্র তারে আমার 
পাগলা খালির মাঠ, জামালপুরের বুড়োশিবের খোরোচাল, 
নূর সাহেবের দড়গা.. আরো কতো আথালি পাথালি বেজে ওঠে, 
আমার বাউল যদি টংকার দেন..নদীতে যেমন জোয়ার আসে,ভাটা আসে, 
আমার বাউলের মন যে কখন ভেসে যায়, 
কখন চোতের ফাটা মাঠ । আসলে মনটিই তাঁর একতারা, 
আমিতো বাঁশের বাকারি আর লোহার তার ।

আমি ফকিরের হাতের শূন্য ঝোলা, দিন শেষে দু'মুষ্টির তুমিই মালকিন ।




খন শীতকাল ।।


তোমার সাদাথানে । ভাতের থালা উপুড় হয়ে আছে । 
ভাত নয় ভাতরঙ ।ভাতরঙ নয় থান রঙের ভাত । 
তোমার কপাল ও সিঁথির খোদলে বিপন্ন দুপুর । 

এখন শীতকাল, খেজুরের রস বেচে সবজি ও ডাল কিনে ঘরে ফেরে ধনঞ্জয় দাস ।‌ 
মা করোনার কৃপায়, ঘরে চলার মতো রেসনের চাল । 
খেজুরের বুক ভরে রস দাও মা ।
যেওনা করোনা মা, থাকো আরও কিছু কাল ।



মায়া ।।


নামের আয়ু কতো? বড়জোর..
বল কত বদনামের আয়ু ?
অমর তো নয় কোনকিছু, নয় অনিঃশেষ
তবে আমি কেন এতো ভাববো ?

তোমার চুলের ঢেউয়ে আমি বিপন্ন অজগর
স্মৃতি জুড়ে সারি সারি ভগ্নস্তুপ, জীবন এবং পরা জীবনের মাঝে আবছা বিভাজিকা,
তোমার নিজ পূণ্যক্ষেত, অরণ্য..টিলা.. গুপ্ত জলাশয়, অনুপম ভাস্কর্য আর এই আমি..
মুঠোয় তীব্র ছেনি, বিধ্বংসী ভাস্কর..

আলো কতটুকু হে? কতদূর আনন্দ.. আঁধার
শুধু চক্ষু মেলে আর চক্ষু মুদে রয়..

নাম না বদনাম কে আমার ছায়া হবি আয় ..



ডিসেম্বর চলে গেলে ।।



এইতো আর ক'টা দিন, তারপর ডিসেম্বর চলে যাবে, শুকনো পাতা ঝরে যাবে, 
ত্বককে পুনর্জীবিত করবে মহার্ঘ ময়েশ্চারাইজার ।
ডিসেম্বর চলে গেলে, সূর্য উজ্জ্বলতর হবে ।

কুড়ি বছর পর ঘরে ফিরে আসবে, একদা নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া ছেলেটি । 
যে পত্র পথ ভুলে ছিল, খুঁজে খুঁজে সেও গন্তব্যে পৌঁছোবে । 
বিকেলে ঘন্টা বাজিয়ে হেঁকে যাবে ঘটি গরম ভাজা .. পুরনো পাড়ায় ।

ডিসেম্বর চলে গেলেও, যিশু তুমি চলে যেওনা । 
আমার একটি চোখ শিবনেত্র । দ্বিতীয়টি যিশুআঁখি হোক । আমার চোখ বড়ো 
নিরাপদ ঠাঁই , একদা এ'দু'টি চোখে ঠিকানা লিখেছিলেন, এই বাংলার একশ' 
আট'টি মেয়ে, এবং বিদূষী আফরিণ রহমান ।