অণু-গল্প : নীহার চক্রবর্তী








বসন্ত এসে গেছে

নীহার চক্রবর্তী  

 

বসন্ত এসে গেছে। এদিকে বসন্তও এসে গেছে।

দুই বসন্তের আসার কথা হাসিমুখে শিল্পী জানালো ওর বর ফাগুনকে। ফাগুন শুনে অবাক।

ও বলল, ‘প্রকৃতিতে বসন্ত এসে গেছে বুঝলাম। তা বলে আমাদের কাজের ছেলে বসন্তের

 ফিরে আসার সঙ্গে তার সম্পর্ক কী আছে?’

সেই হাসিমুখেই শিল্পী উত্তর দিলো, ‘সদা উচ্ছল বসন্ত আসলে খুব অভিমানী। 

মানুষের মধ্যে প্রেমের অভাব দেখলে ঋতুরাজ অভিমান করে নিজেকে নিদাঘের 

হাতে নিজেকে সপে দিয়ে বিদায় নেয়। তেমনি…’

 

‘তেমনি?’

আগ্রহের সুরে জানতে চাইলো ফাগুন।

শিল্পী ওর পাশে বসলো একমুখ হেসে।

ওর হাত ধরে বলতে থাকলো, ‘আমাদের বসন্ত ছেলেটাও খুব উচ্ছল।

 মুখে হাসি লেগেই থাকে। সেদিন তুমি খুব বকেছিলে বলে না বলে অভিমান 

করে বাড়ি চলে গেলো। কিন্তু আমাদের এত ভালোবাসে ও আবার কিন্তু

 ফিরে এলো। সময় নেয়নি একদম। ঋতুরাজ একটা বছর সময় নেয়।‘

‘হুম, বুঝলাম। কিন্তু কি থেকে কি। কি যে মাথায় আসে তোমার।‘

ম্লান-হেসে বলল ফাগুন।

 

ঠিক সে মুহূর্তে কাজের ছেলে বসন্ত দুজনের মাঝে এসে উপস্থিত। 

সারা মুখে হাসি ছড়িয়ে আছে ওর।

‘এই তো বসন্ত এসে গেছে। তারপর বসন্ত, বাড়ির খবর ভালো তো?’

বেশ উৎসাহের সুরে শিল্পী বসন্তকে জিজ্ঞেস করলো। ফাগুন চুপ করে শুধু শুনল।

বসন্ত চোখেমুখে খুশির ঝিলিক নিয়ে শিল্পীকে বলল, ‘বাড়িতে সবাই ঠিক আছে।

 তোমাদের কষ্ট হবে ভেবে চলে এলাম।‘

কি যে খুশি ওর কথা শুনে শিল্পী। অম্লান-হাসি মুখে নিয়ে ফাগুনের দিকে তাকাল।

ফাগুনের মুখে হাসি ফুটল, ‘চৈত্রের শেষাশেষি এখন। তুমি তবে এই 

বসন্ত নিয়ে সুখে থাকো। আমি উপভোগ করে যাই।‘

ফাগুনের কথা শুনে বসন্ত বেশ লজ্জা পেলো।

শিল্পী ওর দিকে তাকিয়ে অনিন্দ্যসুন্দর হেসে বলে উঠলো,

 ‘তুই বসন্ত জিতে গেছিস আজ। তবে আমাকে একটু চেষ্টা করতে হয়েছে।‘

 

ফাগুন ওর কথা শুনে হাসতে-হাসতে বাড়ির বাইরে চলে গেলো।

 শিল্পী বসন্তকে ফুলের বাগানে জল দিতে বলে তৃপ্তির হাসি হেসে 

ঘর থেকে বেড়িয়ে পড়লো। পিছনে গেলো বসন্ত সারা মুখে কৃতজ্ঞতার হাসি মেখে।