ধারাবাহিক উপন‍্যাস : বাণীব্রত চক্রবর্তী

 






বাণীব্রত  চক্রবর্তী


ধারাবাহিক  উপন‍্যাস

     কালতরঙ্গ

    
      
                     নয়

মীরা  বাগানে ঘুরে  বেড়াচ্ছে। নতুন  ঠাকুরপো  সদর দরজায়। তৃষ্ণার্ত চোখে  রাস্তার দিকে তাকিয়ে  আছেন। এই বুঝি ভৃগু এল!  ভৃগুর হাতে খাঁচা। খাঁচায় টিয়া পাখি।  বাইরের কাপড় বদলে ছবিরানি পশ্চিমের ঘরে গেলেন। ওই ঘরের জানলার সামনে দাঁড়ালে  এই বাড়ির  একতলার একটুকরো বাগানটা দেখা যায়। তার জন্য  দৃষ্টি নত করতে হয়। আবার চোখ তুলে তাকালে দেখা যাবে  সামনে বড় রাস্তা। সুরেন ব‍্যানার্জি রোড।  এই বাড়ির  উলটো দিকে সিনেমাহাউস। নাম- অঞ্জন। ওই সিনেমা হলে কোনওদিন বাংলা সিনেমা  দেখানো হয়নি। কেবল হিন্দি সিনেমা। ছবিরানি হিন্দি সিনেমার ভক্ত নন। ওই হলে বেশ কয়েক বছর আগে  বৈজুবাওরা দেখেছিলেন।  ভারতভূষণ আর মীনাকুমারী নাকি বৈজয়ন্থীমালা! ভালো  লেগেছিল । উত্তম -সুচিত্রার ছবি দেখতে তাঁর ভালো লাগে। অনেকদিন আগে একবার  নিউমার্কেটে উত্তমকুমারকে দেখেছিলেন। উত্তমকুমার  ফুলের দোকানের  সামনে দাঁড়িয়ে ফুল  কিনছিলেন। রাজপুত্রের মতো চেহারা। কোথায় যেন পড়েছিলেন  উত্তমকুমারের জন্ম ১৯২৬ সালে। তাহলে তো উনি  উত্তমকুমারের চেয়ে  দশ বছরের বড়। ছবিরানির জন্ম ১৯১৬-তে। বছর দশেক হল আর একটি নতুন  হিরোকে পরদায় দেখা যাচ্ছে। এই  হিরো সত্যজিৎ রায়ের আবিষ্কার। অপুর সংসার ছবিটি দেখেই  ছবিরানি বুঝেছিলেন এ ছেলের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। উত্তমকুমারের মতো  এই অভিনেতা নিজের পদবিটা ছেঁটে দেয়নি। এর নাম সৌমিত্র। হিসেব করে দেখেছেন সৌমিত্র তাঁর চেয়ে উনিশ বছরের  ছোট। সুতরাং তাকে ছেলে বলবেন না তো কী বলবেন! 
       চোখ নামিয়ে বাগান দেখলেন। মীরা বাগানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। নতুন ঠাকুরপো সদরের সামনে দাঁড়িয়ে। ভৃগু এত দেরি করছে কেন!
   পার্বতী অকারণে কেন হাম্বা হাম্বা করছে! ভজন কোথায়! নিশ্চয়ই  ধারেকাছে আছে। এবার  চোখ  তুলে  বড় রাস্তার দিকে তাকালেন। সিনেমা  হলে পেল্লাই হোর্ডিং। রাজেন্দ্রকুমার-সায়রা বানুর  ছবি। বড় বড় করে ইংরেজি হরফে সিনেমার নামটা লেখা  আছে। ইংরেজি ভাষায় নয়। হরফ ধরে নামটা ধীরে  ধীরে  পড়লেন--ঝুক গয়ে আশমান।
     একটা ছেলে  সিনেমা হলের ফুটপাতের সামনে  পায়চারি করছে। আর বারবার এই বাড়িটার দিকে তাকাচ্ছে। কেন! ছেলেটার বয়স বড়জোর কুড়ি। দূর  থেকে  দেখেও  তো সুন্দর বলেই মনে হচ্ছে। হঠাৎ  দাঁড়িয়ে পড়ল। পকেট থেকে সিগারেটের প‍্যাকেট বার করল। ফস্ করে দেশলাই জ্বেলে সিগারেট ধরাল। আবার  সিগারেট টানতে টানতে পায়চারি করতে লাগল। আর মাঝে মাঝে থমকে  দাঁড়িয়ে এই বাড়ির দিকে তাকাচ্ছে।
     ছবিরানি বুঝতে পারছেন না এই ছেলেটি  কে! তবে কি মীরার বন্ধু! মীরা কি ওকে এখানে  দাঁড় করিয়ে রেখেছে!
   এবার ঘর থেকে বেরলেন। ছবিরানি সিঁড়ি দিয়ে নামছেন। মীরা তাঁর জন্য  অপেক্ষা করছে।
আর  ছেলেটা! সে কি মীরার জন‍্য অপেক্ষা করছে!