গুচ্ছ কবিতা : সুদীপ ঘোষাল

 




সুদীপ ঘোষাল

মায়া 

কতটুকু হিসেবে শোধ হয় পিতৃঋণ
কতমূল্যে মাতৃঋণের মায়া কাটে
হিসেব মেলায় ঋণী আজন্ম, বোঝে না প্রবাহ...

একদিন তুমিও কড়ি নিয়ে খেলবে আত্মজের সাথে
সেও নেবে তোমার কাছে বৃদ্ধাশ্রমের ঠিকানা
ছেঁড়া, হলুদ বিবর্ণ কাগজ 
দেঁতো হাসির অসুর কৃতকর্মের দিকে
 ঋণের বোঝা ফেলে
মায়া ছোটে বৃদ্ধাশ্রমের দিকে...

পরশের প্রকার ভেদে অনভূতিগুলো বেঁচে ওঠে নতুনভাবে
কি সুখে পাতা দোলে সে জানে, কিছু লোক শেখে
কোন প্রেমে শরীর স্নিগ্ধ হয় বসন্ত জানে
কখন জেগে ওঠে প্রাণ গ্রীষ্ম জানে
কি খেলায় সৃষ্টি চলে বর্ষা জানে
সব খেলা শেষে ঋতু শীত  অনিবার্য টানে
               

প্রেম এক ইচ্ছের বন্ধন,
চিরকাল  জাগ্রত কাম বন্ধনে

সাপের শঙ্খ লাগা,দীর্ঘ যৌনতা

নবীন সুরে গেয়ে যায়
সোহাগী কাঠের বাঁশি  

ভুলে যায় সিগারেট ধোঁয়া
গোপন অঙ্গ ভাবছি সে বিরহে

কুলেখাঁড়ায় খাড়া না হলে
প্রেমিকার প্রেম নাটুকে প্রলাপ

আম বাগানে চলে, নবীনের খোঁজ
প্রেম প্রেম ঘন কাম  জীবন

অভিনয়  ভুলে মাতে আনন্দে
কাম, প্রেম চলে সমান্তরাল দেহে

প্রেমিক ছেলেরা বোঝে দেহের ভাষা

বেহালা বেজে ওঠে রমণীয় সুরে...


           

প্রথম কদম

গুঁড়ো দুধ চুরি করে খাওয়ার বয়স 
তার  সহপাাঠীকে ভালোবেসেছিলো 
সুতির চাদর, মজার শীত আড়াল...

গন্ধমাদন পাহাড়ের গল্পে
চোখে পাহাড়, যদিও অদেখা

কল্পনায় সমুদ্র, অবচেতন ভাবুকতা 
হঠাৎ ছন্দপতন, বিষাদ নৃত্য...

 সত্য, বালকের প্রথম অনুভব

 কলমের কালি,  রূপের জ্যোৎস্নায়
সে কোন দৃঢ় দৃষ্টি আকর্ষণে
গাড়ি  গ্যালোপিং, সম্পর্কের বাধা পেরিয়ে

কোন কোণে, ত্রিকোণ আঁকে চকের আদরে

বয়স বাড়ে, মদ,মোহ,মাৎসর্য ডাকে
একঘেয়ে  পালতোলা  জীবন 
পানসি নৌকা ছিলো, স্রোত ছিলো 
ছিলো ভীষণ ঢেউ 
সাঁতার অজানা , তবু উন্মাদনার জলে হাবুডুবু।

ভালো থেকো,মরণজয়ী অমৃত প্রেম 
গুঁড়ো দুধ, চুরি করে খাওয়ার বয়স।    
ফিরে আসুক ঘন ঘন পুরনো বয়সের খেলা।   

         
          

অন্তর্জলি 

সাইকাসের তলায় আগুন দুটি ঠোঁট
তিলে তিলে বর্ষ শেষে নিভৃত আলো
          গোপন রেখেছে তার বেহালার তান..
সুন্দর ঋতু জুড়ে অঙ্ক হিসাব দিন মাস ক্ষণ 
মিলে যায় রসায়ন রস কড়া পাক
রসের রসিক জানে পথ নির্বাচন
মাটির প্রতিটি বিন্দু ঘেরা বিবর্তন
একাকী হিমেল হাওয়া নিজস্ব বাগান
           নিরপেক্ষতার স্বাদ আনে মৃত্যুর শাসন...


পোড়া বাঁশি

ওহো  জুঁই  ফুটন্ত কুমারী গন্ধমন

মায়া মাখনো বিলাসি বনানি

ব্রজধূলি হয় মনের অন্দর  বন্দরে

তরুণ ডুবতে ডুবতে খেলে  রসকেলি  

উন্মুক্ত নাট্য ভঙ্গিমায় নরম  কানপাশা

প্রিয় যুবক ঝুমকো বুলিয়ে ভোলে যন্ত্রণা

ওপাশে বাদকের ঢোলে কাঠির রোমন্থন

তরুণী বিচিত্র লয়ে বিলিয়ে দেয় স্বত্ব... 

দুই  দৃষ্টিতে  মহাকর্ষের মলম

স্বর্গ  পাতাল কমনীয়  ঢেউ

পরিণত বসন্তের  ইমনে বাঁশের  বাঁশি

সুর তোলে, যত  গোপন ঘরের দ্বারে

জেগেছে লম্বভাবে  সৃষ্টি   দুয়োরঘর 

জাগছে  শক্ত খুঁটির জোর

পোড়া বাঁশির  সুরতোলা বেহাগে

উদ্দাম মাতে  তরুণীর সুপ্ত ছৌ...

           


নতুন বৌ 


 বৌ টা বিরিয়ানির দোকানে ঢুকে চাঁদ দেখে
বাঁধা জীবনের বাইরে নদীস্নানের প্রথম মহরা 
উল্লসিত আকাশের তলে নিরূপায় সমর্পণ
তার প্রতিটি ছন্দে নিদারুণ বিশ্বাস ভাঙার ভয় 
 তবু ফলভারে ঝুঁকে যাওয়া আমগাছের সৌন্দর্য্য
নিতম্ব তার পাহাড়ের উচ্চতাকে হার মানায় 
সে এখন কারও বৌ নয় 
সে এক নারী শুধু নারী 
পরিবেশক হাতা নাড়ে বিরিয়ানীর হাঁড়িতে

বাড়িতে বৌ টি নুনভাত খায় সঙ্গে একটু ডাল 
তৃপ্তি, তাকে আরও বিশ্বাসী করে তোলে 

বিরিয়ানীর স্বাদ উদাস ছবি আঁকে
সফল  নুন ভাতের পাতে... 
             
প্রবাহ


একটা পাগল দেহ অনবরত হস্তমৈথুনে ব্যস্ত
পৃথিবী বেঁধে চলেছে চুলের ফিতে,রঙ বেরঙের
রাস্তায় ঘাসের শরীরে পথরেখা মিলিয়ে যাচ্ছে
একটা সবুজ বন্ধনে বাঁধা পরে শিশির মায়া

একদিন গ্রাম্য বনলতার রাণী শিখেছে শহুরে বিলাপ
ক্ষয়ে যাওয়া শ্যাওলা শরীরে রিরংসার ছাপ
আর কতদিন নিজেকে যোনির আড়ালে রাখা
জেগে থাকে বদ্ধ পুকুরের ঘুরপাকে নিয়তির খেলা

তবে কি থেমে যাবে সভ্যতার বেহাগ,ধুলোয় গড়াবে বাঁশীর ভুল
ইতিহাস হবে সবই থেকে যাবে অনন্ত গোধূলি
একদিন দেখো, ফোর জি তে জমবে ঝুল...

বরষা


বাদলকে ভালোবেসে মেঘ ভাঙছে শঙ্খের উত্তাপ
গুরুগুরু ডাকে উথলে উঠছে বনজঙ্গলের বুক
ভেসে যাচ্ছে বৃষ্টি-ইমন ভিজে ভিজে সুর
উড়ে যায় মেঘ চিঠির দেশ,গেয়ে যায় 
হৃদয়ের অন্তরাটুকু, বর্ষাডাকে মেঘমল্লারে সবুজ

 সোহাগী ঝুমকো


জুঁইরূপে  ফুটন্ত কুমারীমন, মায়া মাখনো বিলাসি বনানি

ব্রজধূলি হয় মনের অন্দরবন্দরে, তরুণ ডুবতে ডুবতে খেলে  রসকেলি

উন্মুক্ত নাট্য ভঙ্গিমায় নরম  কানপাশা প্রিয় যুবক ঝুমকো বুলিয়ে ভোলে যন্ত্রণা

ওপাশে বাদকের ঢোলে কাঠির রোমন্থন তরুণী বিচিত্র লয়ে বিলিয়ে দেয় স্বত্ব...

আকাশী  দৃষ্টিতে  মহাকর্ষের মলম স্বর্গনরক কামনার  ঢেউ

পরিণত বসন্তের  ইমনে বাঁশুরিয়া, সুর তোলে, যত  গোপন ঘরের বীণায়

জেগেছে লম্বভাবে  সৃষ্টি   দুয়োরঘর, জাগছে  শক্ত খুঁটির জোর

পোড়া বাঁশির  সুরতোলা বেহাগে, উদ্দাম মাতে  তরুণীর সুপ্ত ছৌ...



পথশেষের গান


  ফাগুনের পাগল হাওয়ার মত কিশোরী মন
সীমাকে প্রেমের প্রথম' সা' শিখিয়েছিল
চলকে উঠেছিল সফেন সমুদ্রের মত কোমল ত্রিকোণ
জঙ্গলের পাশবালিশে গভীর দূরত্বে উষ্ণতার অনুভবে
চঞ্চল বেসামাল নাবিক দিশেহারা আজও
সে কি জানে পথশেষের গান

আজও ছিঁড়ে যায় পল, নবচেতনার চঞ্চল আঘাতে
লালবাড়ির  'বৌকথাকও'পাখিটা পুকুরে
সাদা শাড়ির আড়ালে লুকিয়ে রাখে
বেসামাল স্বপ্নমনের গোপন
 বাঁশি বাজায় পুকুড়পাড়ের নির্জন  চন্ডীদাস ছিপে গাঁথে
ডাগরদুপুর, উপোষী সিঁথির গলি সুপুরিমাথায়  সুখের পুকুর
ঝর্ণাকলম রাঙায়  নৌকাভাসার ছবি
উদ্দাম জংলানদীর ঢেউ  তরতরিয়ে  বিলিয়ে দেয় গোপন স্বত্ব..