সাক্ষাত্‍কার প্রভাত চৌধুরী : অভিজিত্‍ দাস কর্মকার

শুক্রবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০২১ /
ফেসবুক-এ শেয়ার করুন /
টুইটার-এ শেয়ার করুন



নমস্কার জ্যেঠু। আমি ১৪০০ সাল অনলাইন পত্রিকার তরফ থেকে আপনার সাথে কিছু কথা বলতে এসেছি।

বলো গো...

১। অভিজিৎ: জ্যেঠু আপনিতো সারাটা জীবন কবিদের নিয়ে থেকেছেন, তাদের লেখার বিভিন্ন ধরন, বলার পদ্ধতি দেখেছেন।এমনকি কবিতা পাক্ষিক-এর মতো প্লাটফর্ম দিয়েছেন। এই সময়ে কাদের কবিতা আপনার ভালো লাগছে?

প্রভাত চৌধুরী: আমি সারাটা জীবন কবিদের নিয়ে কাটাইনি। বরং উল্টোটাই ।কথাকারদের বেশি সময় দিয়েছি ।দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় , শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় থেকে শুরু করে অমর মিত্র শচীন দাশদের জন্য বেশি সময় ব্যয় করেছি ।
অগ্রজ কবিদের লেখা খুব বেশি পড়িনি ।শুনেছি কিছু কিছু ।আর কোনো তরুণ কবিকেই আমি প্লাটফর্ম দিইনি ।বরং  তরুণরাই কবিতা পাক্ষিক -কে তাদের প্লাটফর্ম বানিয়েছিল ।এজন্য আমি  সম্মানিত ।
এই সময়ে কাদের লেখা ভালো লাগছে তা জানতে কপা দপ্তরে চলে এসো ।কানে কানে বলে দেব ।


২। অভিজিৎ: আচ্ছা প্রভাত জ্যেঠু রবীন্দ্রনাথ আপনার সর্বকালের পছন্দের কবি,তা আমরা সকলেই জানি।আমি জানতে চাই কবি রবীন্দ্রনাথ নাকি গল্পকার অথবা গীতিকার রবীন্দ্রনাথ, কোন দিকটা আপনাকে আকর্ষণ করে বেশী?

প্রভাত চৌধুরী: কবি রবীন্দ্রনাথ একজন মহৎ শিল্পী,  প্রণম্য নাট্যকার ।আমার কাছে রবীন্দ্রনাথ ' আমার প্রাণের ঠাকুর  '।আমি এই ঠাকুরের একজন উপাসক মাত্র ।


৩। অভিজিৎ:  আপনার লেখার বিভিন্ন পরিসর।সেই সূত্রে আপনাকে বিভিন্ন ধরনের লেখা পড়তে হয়েছে। আপনাকে কোন বিদেশি কবিদের বা সাহিত্যিকদের লেখা পড়তে বেশি আকৃষ্ট করেছে?

প্রভাত চৌধুরী: আমি সেই অর্থে একজন মনোযোগী পাঠক নই ।খুব বেশি পড়িনি ।
তবে অঙ্ক করতে ভালো লাগে ।অঙ্ক মানে যোগ বিয়োগ গুণ ভাগ । হ্যায়ার ম্যাথ নয়।বিজ্ঞান এবং অর্থনীতি বিষয়ক বই পড়তে পছন্দ করি ।

৪। অভিজিৎ: আপনার দীর্ঘ সম্পাদনার পথে প্রচুর প্রতিকূলতার সম্মুখীন আপনি হয়েছেন।এই প্রতিকূলতা আপনি কীভাবে কাটিয়ে উঠেছেন,যদি আমাদের জানান?

প্রভাত চৌধুরী: আগে কখনোই কোনো প্রতিকূলতার মধ্যে পড়তে হয়নি ।সম্প্রতি আমার দুই  পথনির্দেশকের চলে যাওয়াটা বড়োই বেদনার । বড়োই আর্তনাদের ।নাসের হোসেন এবং গৌরাঙ্গ মিত্র -কে হারিয়ে সেভাবে আর্তনাদ করতে পারলাম কই  !

৫। অভিজিৎ:  আপনাকে বাংলা সাহিত্যের পোস্টমর্ডানিজিমের প্রাণপুরুষ বলে আমরা সকলেই জানি। এই বিষয়টি আপনি কতটা সমর্থন করবেন?

প্রভাত চৌধুরী: নাসের বলত  ' প্রাণপুরুষ '।তো তোমরাও যদি মনে কর তাহলে আপত্তি করতে যাবো কেন ! আমি মনে করি, আধুনিকরা যা লিখেছেন,  সেই ছাঁচ ভেঙে দিতে হবে ।খোলনলচে বদলে দিতে হবে । মনে রাখতে হবে ভাষা বদলে গেছে,  খ্যাদ্যাভাস বদলে গেছে, এমনকী গানও  বদলে গেল ।তাহলে কবিতাই বা বদলাবে না কেন  ! আমি  বা আমরা  বলেছি বলে  !

৬। অভিজিৎ: জ্যেঠু বাংলাদেশের কবিতা আর পশ্চিমবঙ্গের কবিতার মধ্যে কী ধরনের পার্থক্য আপনি লক্ষ্য করেন?

প্রভাত চৌধুরী: আমি আলোচক বা সমালোচক নয়। তুলনামূলক আলোচনা করার মতো যোগ্যতা আমার নেই ।


৭। অভিজিৎ: কবি নাসের হোসেন এবং কবি গৌরাঙ্গ মিত্র,এই দুই নক্ষত্রপাত একই মাসে।এই দুই নক্ষত্রের প্রস্থানে কবিতা পাক্ষিক-এর  উপর কতটা প্রভাব পড়বে বলে আপনি মনে করছেন?

প্রভাত চৌধুরী: কবিতা পাক্ষিক বন্ধ হয়ে যাবার কথা ।সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম বন্ধ করে দেব ।কয়েকজন তরুণ দায়িত্ব নেবার কারণে বন্ধ হল না । তাছাড়া নাসের গৌরাঙ্গ সহ আরো কয়েকজনের জন্য কপা -র  প্রকাশ অনিবার্য ছিল ।

৮। অভিজিৎ:  আপনি এখন বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকায় নিয়মিত লিখছেন। আপনি  web.mag, এবং print media কে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

প্রভাত চৌধুরী:  এটা এক কথায় ব্যাখ্যা করার ক্ষমতা আমার নেই ।এই বিষয়ে একটা পূর্ণাঙ্গের গদ্য লিখবো । তবে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ই -বুক -এই যেতেই হবে । মূলত বই রাখার জায়গা বা স্পেস সমস্যার কারণে । 


৯। অভিজিৎ:  চারিদিকে কবিতার জন্য বিভিন্ন ম্যাগাজিন, সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে কবিদের সম্মাননা জানানো হচ্ছে। এতে কী কবিতার উন্নতি হচ্ছে?এই বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন ?

প্রভাত চৌধুরী: কবিতার যত বেশি  পত্রিকা হবে ততই নতুন নতুন কবির সন্ধান পাবো । নতুন  পাঠকও পাওয়া যাবে ।আমার মতো অনেককেই বাণিজ্যিক পত্রিকাগুলি ভালো চোখে দ্যাখে না । আমার জন্য সমান্তরাল পত্রিকা যত হবে, ততই আমি লাভবান হব ।
আর কবিদের সম্মান জানালে আমার ক্ষতি কী! বাণিজ্যিক পত্রিকাগুলি তো তাদের কর্মচারীদের পুরস্কৃত করে। সরকার করে অনুগতদের ।


১০। অভিজিৎ: আপনি বরাবরই তরুণ প্রজন্মকে কবিতা পাক্ষিক-এর প্লাটফর্ম দিয়েছেন।তরুণ প্রজন্মের কবিদের আপনি কী বার্তা দিতে চান? 

প্রভাত চৌধুরী: আমি কোনো তরুণকেই প্লাটফর্ম দিইনি ।আগেও বলেছি । ওরা কবিতা পাক্ষিক -কে প্লাটফর্ম হিসেবে গ্রহণ করায় আমি গর্বিত ।
আমার বার্তা একটাই --- কবিতাকে আপডেট করতে হবে । যে কোনো মূল্যে আপডেট করতে হবে ।

১১। অভিজিৎ: আপনি বারবার কবিতা আপডেট করার কথা বলে এসেছেন।নিজের কর্মের জায়গাকে কবিতায় প্রতিফলিত করার কথা বলেছেন। এই আপডেটেশনের প্রথম,দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্তর কী ধরনের হওয়া উচিত? আমাদের পাঠককুল এবং তরুণ কবিদের জন্য যদি বলেন---

প্রভাত চৌধুরী: কী কী কাজ  :

১ম স্তর  : চোখ খোলা রাখা ।অর্থাৎ অগ্রজ কবিরা যা লিখেছেন সেগুলি মন দিয়ে অনুধাবন করা ।

২য় স্তর : কান খোলা রাখা । অর্থাৎ  সমস্ত জীব এবং জড়-এর কথোপকথন ধ্যান দিয়ে শোনা ।

৩য় স্তর : লেখা কিংবা খেলার সময়ে চোখ এবং কান খোলা রেখে  নিজস্ব লেখা  লিখতে হবে । তা  সে লেখা দুর্বল  হতে পারে । কিন্তু তা হবে নিজের লেখা । কারো অনুকরণ  করা নয়। মনে রাখতে হবে একটা শতাব্দীতে মোট ৫/৬ জন কবি বেঁচে থাকবেন,  বাকিরা ... ... । বাজাবে ঢাক  খালেবিলে  !

১২। অভিজিৎ: জ্যেঠু আপনার তিনটি কবিতা আমাদের দিন।যা তরুণদের এবং পাঠককুলকে সবসময়ের মতো সমৃদ্ধ করবে__

প্রভাত চৌধুরী:  ৩ টি ১ লাইনের দীর্ঘকবিতা দিলাম । দ্যাখো কেমন প্রতিক্রিয়া হয়।


অভিজিৎ ॥ ৩টি ১ লাইন 
১.
জুতোর ফিতে বাঁধার সময় ছাড়া যে মানুষ নতজানু হয় তাকে করুণা করতে শেখো 

২ .
সত্তরের কুরুক্ষেত্র থেকে লাশগুলি উঠে আসছে দ্যাখো ক্রাচে ভর দিয়ে 

৩.
ফুলের উ -কার  মুছে দিলেই ফল