অনুগল্প : পুষ্পিত মুখোপাধ্যায়

শুক্রবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০২১ /
ফেসবুক-এ শেয়ার করুন /
টুইটার-এ শেয়ার করুন


 



অনুগল্প.....

এরই নাম প্রেম
--------------------

পুষ্পিত মুখোপাধ্যায়
----------------------------

বেশ তো ছিলাম।  ছোট্ট এক জলাশয়ের মতো। মৃদু
হাওয়ায় ছোট ছোট ঢেউ খেলে যেত।  নীল
আকাশে শঙ্খচিলের ছায়া পড়ত। শাপলা
শালুকের সহবাসে কি চমৎকার ভাবেই না বেঁচে
ছিলাম। সুগন্ধি আতরের মতো। মৃগনাভি হরিণের
মতো ছিলাম। রুপোলি রুপোলি মাছ সাঁতরে
বেড়াত অনুক্ষণ। আপনাতেই আপনি বিভোর।
সাড়ে পাঁচ ফুট লম্বা এক যুবকের ভেতর কোনো
যুঁই চামেলির সুবাস সন্ধানে নামেনি মৌমাছিরা।
কেউ বলেছে কি চমৎকার বেঁচে আছো।  এমনই
আলোময় হয়ে থেকো। সত্যিই আমি আলোর গাছ
হয়ে বেঁচে থাকতে চেয়েছিলাম।  পূর্ণিমা রাতে
বৃক্ষের আপাদমস্তকে জোনাকি লেপ্টে থাকার
মতো নিসর্গ সন্ধানে তন্ময় ছিল এক যুবক। আমার
চতুর্দিকে রঙ্গীন ফানুস উড়ে বেড়াতো। নিজের
সুগন্ধে নিজেই মগ্ন হয়ে থাকতাম।  মীনগন্ধী
কোনো কিছু ছিল না আমার ভেতর। তখন কোনো
পুরুষের আড়িমুড়ি ছাড়া ঘুম ভাঙ্গেনি ভেতরে।
স্কুল ছেড়ে কলেজের সবুজ মাঠে পা দিতেই কত
প্রজাপতি উড়েছিল। শাপলা শালুক সেই যুবকের
কোন কোণে এক শিশু দৈত্যের জন্ম হয় তার
নিজেরই অজান্তে। উড়তে উড়তে শঙ্খচিলেরা
কখন হারিয়ে যায়। নিসর্গ বদলে যেতে থাকে। 
সেই শিশু দৈত্য একগুচ্ছ মাকড়সা ছেড়ে দেয়
জাল বোনার জন্য।  সেই জাল হাওয়ায় দোলা
দিলেই কষ্ট হতো।  সহপাঠীরা বলত "তুই একটা
আস্ত ইয়ে ...কিসুস্য হবে না " । এরপর রাজরাপ্পার
এক বাংলোয় হঠাৎ আবিষ্কার করি আমার ভেতর
থেকে নরম রোদ সরে গ্যাছে, তার প্রখরতায় আমি
দগ্ধ হতে থাকি।  আজও জ্বলে পুড়ে যাই। এই
জ্বলে যাওয়ার নামটা কি?...
চেয়েছি, পাইনি। কত কাকুতি মিনতি, কি
ছেলেমানুষিটাই না করেছি সেসময়। অবশ্য ভাবলে
এখনো ঘুমের নদীতে ভাটিয়ালি সুর খেলে যায়।
দুর থেকে দুরে, বহুদূরে কেঁপে কেঁপে বয়ে যাওয়া
সেই সুরে শিরীষ পলাশ ফুটেছিল কোন এক
গভীরে।  তাতে ঝাঁকে ঝাঁকে মৌমাছি এসে বাসা
বেঁধেছিল। আর আমি অসহায়ের মতো এক পাগল
মাকড়সার জালে আটকে গেছি। জানতাম দমকা
হাওয়ায় ছিঁড়ে খুঁড়ে একসা হয়ে যাবো। ভেবে
পাইনা কেন যে এমন হয়েছিল!দৈত্যের শিশুটা হাত
পা ছুঁড়ে খেলা শুরু করেছিল নাকি!মাছেরা,
মাকড়সা, মৌমাছি সবাই আমাকে রঙিন জলের
মতো করে তুলেছিল,নমিতা, পাপিয়াদি,
অমলাবৌদি হো হো করে হেসেছে আর বলেছে "
বোকা কোথাকার, কেন যে রুপোর থালে হাত
চোবাতে গেলে?তুমি জানো না কতদিন কেটে যায়,
কত রাত বয়ে যায় পরীর দেশে পৌঁছতে?
   এইভাবে মানবকূল কত শত, কত হাজার বছর
পেরিয়ে এসেছে, আমিও এসেছি। সুর সন্ধানে ব্যস্ত
বাগীশ নদীর মতো অক্লান্ত এক যুবক আমার
ভেতর এখনো দীর্ঘশ্বাস ফ্যালে। কান্নাটা একটা
কবিতার মতো, যত্রতত্র পড়া যায় না তা।  কখনো
সখনো দু চার বার আওড়েছি।  সেভাবে কখনো
পারিনি যাতে বয়ে যাওয়া সেই নৌকো থেমে যেতে
পারে, পাড় ভাঙ্গা সেই ভাটিয়ালির সুর আটকে
যেতে পারে...পারলে কি আর সেই
স্বপ্নচারিণীকে ....
   তবুও এখনো সারি সারি বসন্ত পেরিয়ে যাওয়া
অপরাহ্ণ বেলাতেও একটা নীলপদ্ম জেগে আছে
আমার জলাশয়ে।  হাওয়া দেয়। পাপড়িরা জলে
নীল প্রতিবিম্ব ফ্যালে। এখনো ছোট ছোট ঢেউ
মাথা তুলে ওঠে মাঝেমধ্যে।  ভাটিয়ালির সুর শোনা
যায়, বেগম আখতার, মেহেদী হাসানের সুরও
ভেতর সিক্ত করে।  তখন এই পঞ্চাশোর্ধ পুষ্পিত
বলে "অ্যায় জ়িন্দগী, তুঝ্ পে হঁসী আতী হ্যায়....."
      ___