অনুগল্প.....
এরই নাম প্রেম
--------------------
পুষ্পিত মুখোপাধ্যায়
----------------------------
বেশ তো ছিলাম। ছোট্ট এক জলাশয়ের মতো। মৃদু
হাওয়ায় ছোট ছোট ঢেউ খেলে যেত। নীল
আকাশে শঙ্খচিলের ছায়া পড়ত। শাপলা
শালুকের সহবাসে কি চমৎকার ভাবেই না বেঁচে
ছিলাম। সুগন্ধি আতরের মতো। মৃগনাভি হরিণের
মতো ছিলাম। রুপোলি রুপোলি মাছ সাঁতরে
বেড়াত অনুক্ষণ। আপনাতেই আপনি বিভোর।
সাড়ে পাঁচ ফুট লম্বা এক যুবকের ভেতর কোনো
যুঁই চামেলির সুবাস সন্ধানে নামেনি মৌমাছিরা।
কেউ বলেছে কি চমৎকার বেঁচে আছো। এমনই
আলোময় হয়ে থেকো। সত্যিই আমি আলোর গাছ
হয়ে বেঁচে থাকতে চেয়েছিলাম। পূর্ণিমা রাতে
বৃক্ষের আপাদমস্তকে জোনাকি লেপ্টে থাকার
মতো নিসর্গ সন্ধানে তন্ময় ছিল এক যুবক। আমার
চতুর্দিকে রঙ্গীন ফানুস উড়ে বেড়াতো। নিজের
সুগন্ধে নিজেই মগ্ন হয়ে থাকতাম। মীনগন্ধী
কোনো কিছু ছিল না আমার ভেতর। তখন কোনো
পুরুষের আড়িমুড়ি ছাড়া ঘুম ভাঙ্গেনি ভেতরে।
স্কুল ছেড়ে কলেজের সবুজ মাঠে পা দিতেই কত
প্রজাপতি উড়েছিল। শাপলা শালুক সেই যুবকের
কোন কোণে এক শিশু দৈত্যের জন্ম হয় তার
নিজেরই অজান্তে। উড়তে উড়তে শঙ্খচিলেরা
কখন হারিয়ে যায়। নিসর্গ বদলে যেতে থাকে।
সেই শিশু দৈত্য একগুচ্ছ মাকড়সা ছেড়ে দেয়
জাল বোনার জন্য। সেই জাল হাওয়ায় দোলা
দিলেই কষ্ট হতো। সহপাঠীরা বলত "তুই একটা
আস্ত ইয়ে ...কিসুস্য হবে না " । এরপর রাজরাপ্পার
এক বাংলোয় হঠাৎ আবিষ্কার করি আমার ভেতর
থেকে নরম রোদ সরে গ্যাছে, তার প্রখরতায় আমি
দগ্ধ হতে থাকি। আজও জ্বলে পুড়ে যাই। এই
জ্বলে যাওয়ার নামটা কি?...
চেয়েছি, পাইনি। কত কাকুতি মিনতি, কি
ছেলেমানুষিটাই না করেছি সেসময়। অবশ্য ভাবলে
এখনো ঘুমের নদীতে ভাটিয়ালি সুর খেলে যায়।
দুর থেকে দুরে, বহুদূরে কেঁপে কেঁপে বয়ে যাওয়া
সেই সুরে শিরীষ পলাশ ফুটেছিল কোন এক
গভীরে। তাতে ঝাঁকে ঝাঁকে মৌমাছি এসে বাসা
বেঁধেছিল। আর আমি অসহায়ের মতো এক পাগল
মাকড়সার জালে আটকে গেছি। জানতাম দমকা
হাওয়ায় ছিঁড়ে খুঁড়ে একসা হয়ে যাবো। ভেবে
পাইনা কেন যে এমন হয়েছিল!দৈত্যের শিশুটা হাত
পা ছুঁড়ে খেলা শুরু করেছিল নাকি!মাছেরা,
মাকড়সা, মৌমাছি সবাই আমাকে রঙিন জলের
মতো করে তুলেছিল,নমিতা, পাপিয়াদি,
অমলাবৌদি হো হো করে হেসেছে আর বলেছে "
বোকা কোথাকার, কেন যে রুপোর থালে হাত
চোবাতে গেলে?তুমি জানো না কতদিন কেটে যায়,
কত রাত বয়ে যায় পরীর দেশে পৌঁছতে?
এইভাবে মানবকূল কত শত, কত হাজার বছর
পেরিয়ে এসেছে, আমিও এসেছি। সুর সন্ধানে ব্যস্ত
বাগীশ নদীর মতো অক্লান্ত এক যুবক আমার
ভেতর এখনো দীর্ঘশ্বাস ফ্যালে। কান্নাটা একটা
কবিতার মতো, যত্রতত্র পড়া যায় না তা। কখনো
সখনো দু চার বার আওড়েছি। সেভাবে কখনো
পারিনি যাতে বয়ে যাওয়া সেই নৌকো থেমে যেতে
পারে, পাড় ভাঙ্গা সেই ভাটিয়ালির সুর আটকে
যেতে পারে...পারলে কি আর সেই
স্বপ্নচারিণীকে ....
তবুও এখনো সারি সারি বসন্ত পেরিয়ে যাওয়া
অপরাহ্ণ বেলাতেও একটা নীলপদ্ম জেগে আছে
আমার জলাশয়ে। হাওয়া দেয়। পাপড়িরা জলে
নীল প্রতিবিম্ব ফ্যালে। এখনো ছোট ছোট ঢেউ
মাথা তুলে ওঠে মাঝেমধ্যে। ভাটিয়ালির সুর শোনা
যায়, বেগম আখতার, মেহেদী হাসানের সুরও
ভেতর সিক্ত করে। তখন এই পঞ্চাশোর্ধ পুষ্পিত
বলে "অ্যায় জ়িন্দগী, তুঝ্ পে হঁসী আতী হ্যায়....."
___
অনুগল্প : পুষ্পিত মুখোপাধ্যায়
নতুনতম সংখা
আরো পরুন
- ১৪০০ সাল পত্রিকা (1)
- অজয় দেবনাথ (1)
- অণুগল্প (2)
- অনু গল্প (1)
- অভিজিৎ দাস কর্মকার (1)
- অমিত গোলুই (1)
- আষাঢ় সংখ্যা (1)
- কবিতা (29)
- কর্ণজিত্ সেনশর্মা (1)
- কালীকৃষ্ণ গুহ (1)
- কেতকী বসু (1)
- গুচ্ছ কবিতা (1)
- গৌতম হাজরা (1)
- চন্দ্রদীপা সেনশর্মা (3)
- চন্দ্রনাথ শেঠ (1)
- জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় (2)
- তৈমুর খান (1)
- দুর্গাদাস মিদ্যা (1)
- দেবযানী বসু (1)
- দেবোপমা সেনশর্মা (1)
- নীলম সামন্ত (1)
- প্রকাশ ঘোষাল (2)
- বনশ্রী রায় দাস (1)
- বন্যা ব্যানার্জী (1)
- বানীব্রত চক্রবর্তী (1)
- বিকাশ চন্দ (1)
- মন্দিরা ঘোষ (1)
- মুহম্মদ মতিউল্লাহ্ (1)
- মোনালিসা রেহমান (1)
- মৌ দাশগুপ্ত (1)
- মৌ সেন (1)
- রিতা মিত্র (1)
- শারদীয় সংখা ১৪৩০ (5)
- শারদীয় সংখ্যা ১৪২৯ (16)
- শারদীয় সংখ্যা ১৪৩০ (14)
- শুভদীপ দত্ত প্রামানিক (1)
- শ্যামশ্রী রায় কর্মকার (1)
- সম্পাদকীয় (2)
- সুপ্রভাত মেট্যা (1)
- সুবল দত্ত (1)
- সৌম্য ঘোষ (1)
আসুন পড়ি
-
►
2022
(110)
- ► ফেব্রুয়ারী (14)
-
▼
2021
(282)
- ► সেপ্টেম্বর (32)
- ► ফেব্রুয়ারী (24)
-
▼
জানুয়ারী
(22)
- ১৪০০ সাল পত্রিকা
- পুনর্মুদ্রণ : অজয় দাশগুপ্ত
- সম্পাদকীয় : চন্দ্রদীপা সেনশর্মা
- সাক্ষাত্কার প্রভাত চৌধুরী : অভিজিত্ দাস কর্মকার
- কবিতা : শুভাশিস গোস্বামী
- গুচ্ছ কবিতা : মৃণালকান্তি দাশ
- ধারাবাহিক : সন্দীপন গোস্বামী
- কবিতা : অরবিন্দ সরকার
- গুচ্ছ কবিতা : অতনু ভট্টাচার্য
- গুচ্ছ কবিতা : পরান মণ্ডল
- কবিতা : জাহাঙ্গির আবেদিন
- অনুগল্প : পুষ্পিত মুখোপাধ্যায়
- গুচ্ছ কবিতা : দীপঙ্কর সরকার
- গুচ্ছ কবিতা : পৃথা চট্টোপাধ্যায়
- কবিতা : শ্যামশ্রী রায় কর্মকার
- গুচ্ছ কবিতা : শ্যামাশ্রী মুখার্জী
- মুক্ত গদ্য : রাজশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়
- গুচ্ছ কবিতা : অর্ঘ্য দে
- কবিতা : মারুফ আহমেদ নয়ন
- গুচ্ছ কবিতা : অভিজিৎ দাসকর্মকার
- পুস্তক আলোচনা : ঋদ্ধি ঘোষ
- রান্নাবান্না : চন্দনা ধর
যাদের লেখা নজর কেড়েছে
-
আত্মধ্বংসী খেলা --------------------- শুভাশিস গোস্বামী ---------------------- ছড়িয়ে পড়ছে বিষবৃক্ষের বীজ বিষের জ্বালায় জ্বলে যায় চরাচর ...
-
মধুমিতা চক্রবর্তী ১ ভিটেমাটি টানে কেন এত কেন ফোন কর সুতনুকা পুনর্যাপন চেয়ে চেয়ে নষ্ট হয় দিন পতঙ্গের ঘায়ে নুয়ে পড়া লজ্জাবতী পুনরায় চোখ মে...
-
| নবরূপে ≈ ১৪০০ সাল | | শারদীয়া সংখ্যা | নাসের হোসেন ১. চিল টেবিলের উপরে একটা ছোটো ঘনক, তার পাশে একটা বীণাবাদক বালকের মূর্তি, তারও...
-
অভিজিৎ দাস কর্মকার সুহাসিনী বাড়িতে। চা হাতে। সকাল ৭:২৭। ৩ আগস্ট যে পথটির ছটফটে সঙ্গমে নিজেকে ভাসালে নদী, সে দ্বন্দ্বের সোঁদায় নির্লিপ্ত ...
-
রুবি রায় বুদ্ধ ব্যস্ত নুডলস খেতে :- রাধা নিশ্চিত হলে রাষ্ট্র নিশ্চিত স্বাধীনতা নিশ্চিত তোমার ভালোবাসা নিশ্চিত আমিও নিশ্চিত হয়ে তোমার রুক...
-
মধুমিতা চক্রবর্তী ১ রোদ ঝলমল দিন ছিল তিরতিরে কলমি ফুলের মত একটা মেয়ে ধানের সাথে দুলছিল তার প্রজাপতি ওড়না এরই মধ্যে ফট্ করে সভ্যতা পিছিয়ে...
-
সম্পাদকীয় ----------------------- ১৪০০ সাল একবছর পূর্ণ করল। আসুন এই দিনটি প্রত্যেক লেখক বন্ধুদের সঙ্গে উদ্ যাপন করি। অতিমারির কারণে আত্মীয়...
-
চন্দ্রদীপা সেনশর্মা রেজাল্ট -------------- তিরিশবছর আগের ওই দিনটি সুচন্দ্রা আজও ভুলতে পারেনি। বি এডের রেজাল্ট আনতে গিয়েছিল সে। --'এতদি...
-
মৌ সেন আবাহন সন্ধে হয়ে এলে যতটুকু কালি ঝরে পড়বে কলম থেকে তার তীক্ষ্ণ ফলায় বিদ্ধ হোক ওই হৃদয়ের তন্ত্রী। সুরের ঝড় উঠুক র...
-
ঋদ্ধি ঘোষ পঞ্চসিন্দুক ( ১ ) গন্ধহীন বনফুল অথবা রক্তগঙ্গায় ভেসে যাওয়া উত্তরাধিকার এসব ভুলতে, অর্থহীন কেউ পাড়ি দ্যায় হিমগিরি পথ অথচ কবেই...
সুন্দর লাগল পুষ্পিত মুখোপাধ্যায়ের রচনা
উত্তরমুছুন