কুলটা
আমার আর ফিরে আসা হবে না ডুবতোয়া ঘাটের ভুবন বৈরাগীর কাছে৷ কিশোরীর পদ্মনাভে যে ভ্রমর ঢেউ তুলে ছিল তাকে চেনে শুধু অন্তরস্বামী৷ বিলাবল রাগে রফিক চাচার সানাই মোহনমিতালি ছড়িয়ে দিত ধূপছায়া পোয়াতি ধানের ক্ষেতে৷ কলসীর জলও যেন সেই মোহে ছলাৎ ছলাৎ শব্দে আহামরি কোমর দুলাত৷ জানলার বাইরে দিয়ে দেখতাম, প্রসূতি নারীর মত মেঘেরা প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করছে৷ তুমি আসবে বলে শঙ্খ ধ্বনি, হুলু ধ্বনি বেজে চলত মন্দ্র মন্দ্র৷ পাকুড় গাছে অলস ভারে বসে থাকত যে তিতির সেও যেন প্রেমিকের খোঁজে আবির রাঙা হয়ে উঠত মুহুর্তে৷ পীতাম্বর গাভিনটা মৌ-চটকা আমেজে দূর্গা মন্ডপের খড় বিচালির গাদায় নিজেকে আরও একবার গুটিয়ে নিত৷ যেন যে আসেনি এখনও, তাকে আরও নিবিড় করে বাঁধা৷
গন্ডগ্রামে বসে তোমার এই প্রেমিকা তোমার অপেক্ষায়, হয়ত পাথর হয়েই যেত! কিন্তু না! জানিনা কেন তুমি বারবার বড় দয়াপরবেশ হয়ে উঠতে ৷ আমার ঠোঁটে এঁকে দিতে মধুবনী ৷ অনন্ত বিভঙ্গে পাড় হতে চিকুব গ্রীবা কাঞ্চনজঙ্ঘা প্রজাপতি আয়না ৷ আমি তিরতির করে তোমার আলিঙ্গনে কেঁপে উঠতাম, " শ্রাবণ "৷ মিলনসম্ভবা হয়ে ক্রমে আমার শরীরটা নদী হয়ে যেত৷ সে কথা কেউ জানে না৷ জানার কথাও তো নয়! শুধু সাক্ষী থাকত জলপিপিরা, ভাসতে ভাসতে ছুঁড়ে দিত কৌতুক৷ আর সাক্ষী ছিল এই খাতা৷ ওর সাথে আমার বকুলের সখ্যতা৷
ঠিকানা বদলেছে, ঠিকানা বদলে যায়৷ আজ আমি অন্য নারী৷ অন্য পরিচয়৷ তবু তুমি এলে দরজা খুলে দিই৷ আমার শরীর আবার তোমার ছোঁয়ায় মধুপর্ক হয়ে ওঠে৷ জানি কুলটা বলবে সবাই ৷ তবু শ্রাবণ, আমি নষ্টই হতে চাই৷
যতবার তুমি ছুঁয়েছ, আমি আরও আরও ঐশ্বর্যবতী হয়েছি৷
কোন মন্তব্য নেই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন