ধারাবাহিক : সন্দীপন গোস্বামী

শুক্রবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০২১ /
ফেসবুক-এ শেয়ার করুন /
টুইটার-এ শেয়ার করুন





ধারাবাহিক : সন্দীপন গোস্বামী

-------------------------------------


 

বিদ্রোহী’ কালীকিঙ্কর

 

এত বড় শিল্পী কিন্তু রক্তে পুরোমাত্রায় বিপ্লবিয়ানা। 
তবে যাবতীয় বিপ্লব শিল্পীদের নিয়েই। ছবি আঁকার 
তালিম নিচ্ছিলেন কলকাতায় গর্ভনমেন্ট কলেজ অব আর্ট 
অ্যান্ড ক্রাফ্টে। প্রশাসনিক অব্যবস্থার বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন 
তরুণ কালীকিঙ্কর ঘোষদস্তিদার। সেটা আর্ট কলেজে পার্সি 
ব্রাউন, মুকুল দে-র জমানা। তাঁদের বিরুদ্ধে ছাত্রধর্মঘটে 
একেবারে প্রথম সারির নেতা তিনি। পুরস্কারও পেলেন। 
কলেজ থেকে বহিষ্কৃত হলেন কালীকিঙ্কর।

তা হলে তালিমের কী হবে?

সোজা পাড়ি দিলেন সাবেক মাদ্রাজে। নাড়া বাঁধলেন 
অধুনা চেন্নাইয়ের সরকারি আর্ট কলেজে। এ বার 
প্রিন্সিপাল বিখ্যাত দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরী। কলেজ থেকে 
বেরিয়ে যা শিখলেন তা নিজের মতো পেশ করলেন 
ছবির জগতে। কিন্তু তীব্র আর্থিক সংকটের জন্য শুধুই 
চারুকলা নিয়ে পড়ে থাকা হল না। সে সময়কার 
ছোট-বড় বহু পত্রপত্রিকায় করলেন চুটিয়ে সচিত্রকরণের 
কাজ। আর বিদ্রোহী মেজাজটা সেই থেকেই গেল। তাঁর 
আঁকা ইংরেজদের দমনপীড়নের ছবি প্রেক্ষাপটে রেখে স্বদেশী 
গানের অনুষ্ঠান হতো নিয়মিত। তিনিই ১৯৩১-এর ইয়ং 
আর্টিস্ট ইউনিয়নের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। সেই দলে ছিলেন 
গোবর্ধন আশ, অবনী সেন, রেণু রায়দের মতো শিল্পীরা। 
দু’বছর পরে আর্ট রিবেল সেন্টারও প্রাণ পেয়েছিল তাঁর 
উপস্থিতিতে।
২০০৯-এ তাঁর জন্মশতবর্ষ অতিক্রান্ত হয়েছে। বিস্মৃত 
এই শিল্পীর কাজ নিয়ে কোথাও এক লাইনও সম্ভবত বলা 
হয়নি। শিল্পীর জন্ম বরিশালের গাভা গ্রামে। প্রয়াণ ১৯৭২-এ। 
বলা হয় শিল্পীর মৃত্যু নেই। কিন্তু কালীকিঙ্করের ক্ষেত্রে 
বোধহয় কথাটা সত্যি নয়। কে সাজিয়ে-গুছিয়ে তাঁর 
কাজ পেশ করবেন নতুন প্রজন্মের কাছে? না, একজন 
সমঝদারকেও সেই অর্থে আজও পাওয়া যায়নি। তাঁর 
চারুকলার ক্যানভাসগুলোর কথা ছেড়েই দিন। যার সবই 
প্রায় হারিয়ে গিয়েছে। কিন্তু তুলিতে কালো রং চাপিয়ে 
অথবা নিব নিয়ে চাইনিজ ইঙ্কের অনবদ্য খেলায় 
কালীকিঙ্করের সেই সব অলঙ্করণ নিয়েও অবলীলায় করা 
যেত প্রদর্শনী।
অনেক ক্ষেত্রেই সে সব ছবি স্টিরিয়োটাইপ প্যাটার্নে আঁকা। 
কিন্তু তাঁর কাজে ছিল এক অনবদ্য সিনেম্যাটিক আবেদন। 
সঙ্গে শুধু সাদা আর কালো রঙকে নিয়ে নানা ধরনের 
পরীক্ষা। পুরনো পত্রিকাগুলো তো হারিয়ে যায়নি। সেখান 
থেকে উদ্ধার করেও সে সব কাজ গ্রন্থিত রূপে হাজির 
করা যেত এ কালের সামনে। এখনকার ক’জন আর 
দেখেছেন তাঁর রাণিসাহেবার (বিমল মিত্র, ১৯৫১, দেশ) 
বা স্মৃতিচিত্রমের (পরিমল গোস্বামী, ১৯৫০, মাসিক বসুমতী)
 মতো অসংখ্য অনবদ্য অলঙ্করণ।
কোনও অজানা কারণে চিরকালই তিনি ‘এবং-ইত্যাদিদের’ 
দলে। যুগান্তরের আড্ডায় তিনি যেতেন আর সেখানে 
থাকতেন তারাশঙ্কর থেকে মণীশ ঘটকদের মতো 
কিংবদন্তিরা— এ ভাবেই তাঁর নাম এসেছে কদাচিৎ। 
এর থেকে খারাপ আর কী হতে পারে!

কোথায় তাঁকে নিয়ে আলাদা আলোচনা?

কোথায় তাঁর কাজের মূল্যায়ণ?