| ১৪০০ সাল পত্রিকা |
১.
নৈমিত্তিক
হে হুজুর! দণ্ডমুণ্ডের কর্তা!
কীভাবে আনুগত্য দেখাব আপনাকে
আমাদের গায়ে পুরোনো ছাতার মতো সাবেকি কোট, শামলা খুলে রেখেছি, কলম পিষতে আজকাল নখ ওঠেনা
হে হুজুর! আপনি দণ্ডধারী
আমরা সার সার নিচু বেড়ায়
হেঁটমুণ্ডে বসে থাকি
আপনি কিছু বলেন না তবু
'কাকাক্ষিগোলক-ন্যায়ে' জুড়ে দেন
কথার এপাশ-ওপাশ।
আমরা ধূর্তামি করে
জলের সাপের সঙ্গে কুমিরডাঙা খেলে
দু'চারটে যা অখাদ্য পাই
আপনার হাজিরার শেষে
ইঁটের ফোকরে গুঁজি, বেলা বাড়লে
পিত্ত দমন করি ঘোরদুপুরে চঞ্চু ঠোকাঠুকি
আপনার আদেশে আমাদের সুচিক্কন রমণীরা নীলকান্ত মণির মতো ডিম দেয় ছানা দেয় পছন্দ না-হলে আপনার পদধূলিতে ধন্য হয় ঘর ছানারা হয় চ্যাপ্টা বিলিতি বেগুন।
হে হুজুর! আপনার মহারানির চোখে
আমরা মাঝে মাঝে
সমাজবন্ধুর চোখে চাই।
আমরা তো ঝাড়ুদার, বক হতে সাধ গেলে
এক পা তুলে দাঁড়াই
চোখ বুজে বাৎসল্য-রসে প্রিয়তমা
মুখে পাউরুটি গুঁজে শুশ্রূষা করে
আর কী বলব হুজুর কাঙালি-ভোজনের দিনে আপনাকে কখনও দেখি নি।
২.
দুর্যোধন
দুর্যোধন বলল বেশ বেশ মামা
এবার আর কলি-টলি নয়
হাত ঝেড়ে একখানা কৃত-দান চালো দেখি
গলির মোড়ে মোড়ে নটী সুহাসিনী
নাতি-হাতে দাঁড়িয়ে থাকে
চৈত্রমাসে নাতি মুখে বেগুনী রঙ মেখে
শিব সাজে আর একটা ফচকে মেয়ে হলুদ হয়ে
সিঁদুরে রুমাল দিয়ে তাকে বরণ করে,
দেখে শুনে নটীর বুক জ্বলে যায়
এ-নাতি তার
অগত্যা সন্ধ্যা পিসি একটা
কচি ঝি রাখে, সারাদিন বলে
ষষ্ঠী পিঠটা চুলকে দে না রে
তোর দাদা দেখেছিস তো আজকাল কেমন হিন্ডিলিয়ামের গরম চামচ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চুল কুঁকড়িয়ে ফেলে
তোকেও নাকছাবি দেব
তুই দুর্গা হ' আমি সিংহ হব
দুর্যোধন কখনও কিন্তু কামনা-তাড়িতদের কথা বলেনি, ও খুব লাজুক ছেলে, শুধু সভায় কালো মেয়েটাকে দেখে হাঁটু চুলকেছিল,
দুর্যোধন ভালো ছেলে কামতাড়িত নয়
শকুনিও তাই বলে
পাশা খেললে আর আঙুল নড়ে না।
৩.
সেভাবে কি মরতে পারবো?
আপাদমস্তক অশ্রুসজল নাতি-নাতনি
ভরপেট ভোজনের পর দেশলাই কাঠিতে
দাঁত খুঁচিয়ে মৃদু হাস্যের মতো
সেভাবে কি মরতে পারবো
তাই জগতের বিস্তর ভালো ভালো জ্ঞান
মাথার পাশে আড় হয়ে থাকে
আমি শুধু ঘাড় কাত করে
টিকটিকির বৃন্দাবন লীলা দেখি
পুকুর পাড়ের ঝনাত্ বাসনের শব্দ শুনি আর রাজমিস্ত্রির চরিত্র পরীক্ষা করি
বুকের উপর ভগবদ্গীতা নিয়ে
ভোজনতৃপ্ত মৃদু হাস্যের মতো
সেরকম জ্ঞানী কি মরতে পারবো?
কোন মন্তব্য নেই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন