মুক্তগদ্য : অর্ঘ্য দে

শনিবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০২২ /
ফেসবুক-এ শেয়ার করুন /
টুইটার-এ শেয়ার করুন









 


অর্ঘ্য দে


ধোঁয়ার শহর


    বিকেল শেষে উপভোগ্য হয়ে উঠছে পশমের উষ্ণতা। যতদূর চোখ যায় গ্যাসের মতো প্রসারণশীল কুয়াশা। ধোঁয়াটে আগ্রাসন ঢেকে ফেলছে গৃহস্থের কল্যাণের সব প্রতীক-চিহ্ন। বাদ যাচ্ছে না তুলসীতলাও। এক কাপ চা আর ঠোঁটের মাঝে সন্ধ্যা ঘনাচ্ছে। তুমি তো ভালোবাসতে এসেছো। তাহলে ফিরে যেতে চাইছো কেন? বরং চলো ঘুরে আসি এই ধোঁয়া-রঙের পথ ধরে। যেখানে ছন্নছাড়া এক জগত, উদ্ভ্রান্ত আকাশ। কারও কারও সংসারে পশমের বল গড়িয়ে যায়। তিতির পাখির গান শুনতে শুনতে মানুষ ভুলে যায় জরা কী, ব্যাধি কী- কেনই বা ফিরে আসতে হয়!

     মাটির কিছু ওপরে ভাসে ছোট ছোট তাঁবু, আনমনা সংসার শঙ্খ লাগে আগুন আর নিশ্বাসে। ভারশূন্য ফানুস উড়ে যায়। কেউ কেউ সুপারিগাছের ফাঁকে-ফাঁকে লুকোচুরি খেলে বসন্ত কাটিয়ে দেয়। কতটা বেহিসেবি হতে পারে মানুষ! গাজনের মাঠে মেলায় লাল-সবুজ ফিতে, চিরুনি, আয়না কিনে বাড়ি ফেরে নারী পুরুষরা। ছোটো ছোটো ছেলেরা আড়াআড়ি ছোটে, নাগাড়ে ভেঁপু বাজায়। মেয়েরা বুকে আগলে রাখে খেলনাবাটি। অনেক ঠকিয়েছো ওদের। কোথাও নেই ওরা। তবু খুঁজে বেড়াই ওদের গানমরিয়া হয়ে খুঁজি গানের কথা। স্বরলিপির সন্ধানে মাটি খুঁড়ে ফেলি। মাটি জমতে জমতে পাহাড় হয়ে যায়। জেগে ওঠে অতলান্ত গহ্বর,  সেই গহ্বরে অসংখ্য জীবাশ্ম। তাদের চোখে জ্বলজ্বল করে করুণা। আমাকে দেখে হাসাহাসি করে। অসহ্য সেই মশকরা থকে দৌড়ে পালিয়ে আসি। শহুরে মানুষরা উপনিবেশের হাওয়া খেতে খেতে ভাবে তারা জিতে গেছে। লুপ্তপ্রায় মানুষগুলোর কথা ভেবে নীরবতা পালন করে। বুকের ভিতর জন্ম নেয় শ্লাঘা। অতচ মানুষগুলো কোনও কিছুরই প্রত্যাশা করে নাকারণ ওরা জানে প্রতিটা অঙ্ক শেষ হয় শূন্যতে।