অণুগল্প : পারমিতা মন্ডল

শনিবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০২২ /
ফেসবুক-এ শেয়ার করুন /
টুইটার-এ শেয়ার করুন

 






পারমিতা মন্ডল


সাক্ষাৎ

মহেশ মাস্টারমশাইয়ের ছেলের বিয়ে সামনে। নেমন্তন্ন বেশিরভাগ ফোনে সারলেও তার কলিগ বন্ধু উমেশকে নিজে গিয়ে নেমন্তন্ন করবেন বলে ঠিক করলেন।দুজনেই রিটায়ার্ড করেছেন একসঙ্গে দুবছর আগে।সেইমতো একদিন মহেশ মাস্টারমশাই গেলেন ময়নাগুড়ি উমেশ মিত্রকে নেমন্তন্ন করার জন্য।
ওঁর বাড়িতে পৌঁছে কলিং বেল টিপতেই দরজা খুললেন এক প্রৌঢ়া।পরনে সাদা ফুল ছাপা শাড়ি। দেখতে মন্দ নয়। মহেশবাবু মনে মনে ভাবলেন ইনিই হয়তো উমেশের সেই বোন যিনি বিবাহ বিচ্ছিন্না হয়ে অবিবাহিত দাদার কাছে থাকেন। মহেশবাবুকে দেখে ভদ্রমহিলা বলেন
 -কাকে চাই?
-উমেশ বাড়িতে আছে?
- না, দাদা তো নেই।উনি একটু শ্মশানে গেছেন।
- ও,কে মারা গেছেন?
- বলছি , কিন্তু আপনি কে? নামটা জানতে পারি?
- আমি মহেশ। ওঁর কলিগ ছিলাম। ভালো বন্ধুও। আসলে আমার ছেলের সামনে বিয়ে তাই নেমন্তন্ন করতে এসেছিলাম।
-ও আসুন ভেতরে। আমি ওনার বোন ঐন্দ্রি।
ভদ্রমহিলার কথামতো মহেশ ভেতরে গেলেন।ঐন্দ্রি বললেন
- বসুন দাদা। একটু চা আনি?
- না না, আমি খেয়েই এসেছি। একটু তাড়াও আছে।
- দাদা অনেকক্ষণ হয়েছে গেছে। আর ফিরেই আসবে। আর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলে দেখা হয়ে যাবে।
মাথা নেড়ে সম্মতি দিয়ে ঐন্দ্রির সঙ্গে গল্প করতে শুরু করলেন মহেশ। মাঝে মাঝে ঘড়ি দেখতে থাকলেন। খানিকক্ষণ পরে বললেন
-উমেশ তো এখনো এলো না।কার্ডটা আপনাকেই দিয়ে যাই। আপনাদের দুজনেরই আশা চাই।  -দাদা যাবে আমি যেতে পারব না।              
 -কেন?
 মুচকি হেসে ঐন্দ্রি বললেন 
-আমার আর যাওয়া!
 এবার সোফা ছেড়ে দ্রুত উঠে পড়লেন মহেশ বাবু ।বললেন
-আসি বোন। পরে ফোনে কথা বলে নেব মহেশের সাথে ।
কিন্তু বললেন না তো কে মারা গেছেন!
 কথাটা জিজ্ঞেস করেই বাড়ির  বাইরে পা রাখলেন মহেশ বাবু। কোন উত্তর আসার আগেই পেছনে দরজাটা সজোরে বন্ধ হয়ে গেল। একটু অদ্ভুত মনে হল মহেশ বাবুর।বাসস্ট্যান্ডের দিকে যেতে গিয়ে হঠাৎ দেখা হলো উমেশের সঙ্গে।  শ্মশান থেকে ফিরছে।
-আরে উমেশ! তোর বাড়িতেই গিয়েছিলাম। তোর বোন ঐন্দ্রি বলল তুই নাকি শ্মশানে গেছিস। কে একজন মারা গেছে। তা ভালোই হলো তোর সঙ্গে দেখা হয়ে।
-কি বললি! ঐন্দ্রি! 
- হ্যাঁ।এতে এতো বিস্মিত হবার কি আছে?
- জানিস কাকে পুড়িয়ে ফিরছি?
- আমি কিভাবে জানবো! কাকে? 
- ঐন্দ্রিকে।