গল্প : দেবব্রত রায়

শনিবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০২২ /
ফেসবুক-এ শেয়ার করুন /
টুইটার-এ শেয়ার করুন

 





দেবব্রত রায়



একটি প্রাপ্তমনস্কদের-গল্প

ফাঁদ



জঙ্গলের বর্তমান হালহকিকত দেখে একটা
ছোকরা বাঘ আর,তার ফিয়ান্সে ঠিক করলো
আপাতত,তারা লিভ-টুগেদার করবে এবং যাতে না
মেয়েটা কনসিভ করে বসে সেজন্য ওরা দুজনেই
নিয়ন্ত্রিত-যৌন-জীবনযাপন করবে । প্রয়োজনে
নির্বীজ হওয়ার চিন্তা-ভাবনাও মনেমনে করে
রাখল ছেলেটা কারণ, মেয়েটা কন্ডোম একেবারেই
পছন্দ করে না ।
আসলে,দু-সপ্তাহ ধরে প্রায় মরুভূমি হয়ে আসা
বিস্তীর্ণ বাদামশালির জঙ্গল হন্যে হয়ে
ঘুরেও ,শিকার তো দূরের কথা, ওরা একটা বুনো
খরগোশেরও দেখা পায়নি ! আজ থেকে প্রায়
বিশ-বাইশ দিন আগে মেয়ে-বাঘটা গাছে উঠে
একটা বাঁদর শিকার করেছিল। সেটাই ওরা দুদিন
ধরে খেয়েছে । তারপর থেকে প্রায় নিরম্বু উপোস
দিয়ে মাইলের পর মাইল হেঁটে এসে আপাতত,
শহর থেকে একটু দূরের এই ঝোপঝাড়ের মধ্যে
ছেলেমেয়ে-দুটা লুকিয়ে আছে ! ছেলেটা বোধহয়,
ভীষণ-ই ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল । এতটা পথ হেঁটে
আসায় ধারালো নখের আঘাতে ওর থাবাগুলো
কেটে-ছড়ে গিয়ে, সেখানে ভীষণ ব্যথা হচ্ছিল !
মেয়েটা সেই কাটা-ব্যথাগুলোয় চুমু খেতে-খেতে
ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরে বললো, কতদিন
আমাদের ইন্টারকোর্স হয়নি তোর মনে আছে ?
ছেলেটা যেন অন্য জগতে ছিল । কিছুক্ষণ পর
ঘুমে ভারি হয়ে আসা চোখদুটো ধীরেধীরে খুলে সে
বললো, আজ থেকে ছ-মাস আগে....খুলি
পাহাড়ের সেই ঝরনাটার পাশে !
ছেলেটা আসলে, ভীষণ রোমান্টিক। চাঁদ পাহাড়
ঝরনা ওর খুবই ভালো লাগে আবার, যখন রোখ
চাপে তখন মেয়েটাকে যেন একসঙ্গে দশখানা
মদ্দ-জোয়ানের আদরে-আদরে একেবারে কাবু
করে ফেলে কিন্তু, আজকাল আর শরীরের খেলার
প্রতি ওর মন নেই ! দিন-দিন ছেলেটা কেমন যেন
নেতিয়ে পড়ছে !
মেয়েটা ওর শরীরের মেয়েলি-অংশগুলো চেপে
ধরে ছেলেটাকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করছিল
এমন সময় দেখলো সেই নাদুসনুদুস ছাগলটা অন্য
দিনের মতোই আজও মে-মে করে ওদের ঝোপটার
আশেপাশেই ঘোরাঘুরি করছে ! ছাগলটাকে
প্রথমদিন দেখেই ছেলে-বাঘটার থাবাগুলো
নিশপিশ করে উঠেছিল কিন্তু, মেয়েটা ওকে বাধা
দিয়ে বলেছিল, ছাগলটাকে মারলে হয়তো
একদিনের খাবার জুটবে কিন্তু, সবাই জেনে যাবে
আমরা এখানে লুকিয়ে আছি !
আজ আবারও সেই ছাগলটাকে আসতে দেখে
মেয়েটা বললো," তারচেয়ে বরং ছাগলটার সঙ্গে
ভাব করা যাক। না-হলে , ও হঠাৎ আমাদেরকে
দেখে ভয় পেয়ে যেতে পারে !  এই বলে সে
ছাগলটাকে ডাক দিল। বললো, "ও ছাগল-সুন্দরী,
এদিকে একটু শোনো না ভাই !"
ছাগলটা যেন ভীষণ অবাক হয়ে বাঘ দুটোকে
দেখতে লাগলো তারপর, মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাদের
দিকে একটু-একটু করে এগিয়ে গিয়ে মে-মে করে
বললো," আমার নাম লক্ষ্মী কিন্তু, আপনারা কে ? 
এর আগে তো এখেনে আপনাদের দেখিনি ! "
মেয়েটা বললো, " আমরা হলুম বাঘ । ও হলো
আমার বয়ফ্রেন্ড!" তারপর, ছাগলটাকে সে
বললো, তুমি আর তোমার বাচ্চারা বুঝি এখানেই
থাক ? কিন্তু ভাই,গন্ধ শুঁকে তো মনে হচ্ছে
এখানকার ঘাসপাতায় প্রচুর পরিমাণে বিষ ছড়ানো
আছে ! তাহলে, কী খেয়ে তুমি এরকম নধর হয়ে
উঠেছ বুঝতে পারছি না !
লক্ষ্মী বললো, না-না, আমি থাকি আমার মালিকের
বাড়িতে ! তিনি খুবই ভালো মানুষ ! আমার জন্য
সবসময় ঘর-ভর্তি করে খোল-ভূষি, ঘাস, বটপাতা
জোগাড় করে রাখেন তবে, তিনি চান না আমার
বাচ্চাকাচ্চা হোক কারণ, তাতে নাকি, শরীর ভেঙে
যায়  !
ছেলে বাঘটা এতক্ষণে মুখ খুলল। সে বললো,
"তাহলে, তুমি এখানে কেন ঘুরঘুর করছো ?"
লক্ষ্মী বললো, "আসলে, আপনারা আসার ঠিক
আগের দিন একজন গণ্ডার-দাদা এখানে এসে
লুকিয়ে আছে ! সে বেচারি খিদের জ্বালায় প্রায়
মরতে বসেছে ! আমার মালিককে সে-কথা
জানাতেই, তিনি খুব দুঃখ করছিলেন ! বললেন ,
আমার ঘরে এত খাবার থাকতে একজন গণ্ডার না
খেয়ে মারা যাবে ! তাই, আমি আজ গণ্ডার-দাদাকে
নিয়ে যেতে এসেছি !"
ছেলেটি তখন বললো, "তোমার মালিককে বলে
দেখো না যদি,আমাদের জন্যও কিছু করা যায় !"
ছাগলটা বললো, "বেশতো,আমি আজকে গিয়েই
আমার মালিককে আপনাদের ব্যপারে জানাবো !"
       তার পরের দিন সকাল পেরিয়ে দুপুর হয়ে
গেলো অথচ, লক্ষ্মী এলো না ! ছেলেটা বললো,
"আমাদেরই ভুল! তখনই যদি ধরে খেয়ে ফেলতাম
ওটাকে !" মেয়েটা বললো, "ওর কথাবার্তার মধ্যে
সন্দেহজনক একটা-কিছু আছে কিন্তু, কিছুতেই
বুঝতে পারছিনা সেটা আসলে, কী !" তারপর, সে

একটু চিন্তিত গলাতেই বললো, "তবে,এখান থেকে এখুনি 
সরে গিয়ে দূরের ঐ ঝোপদুটো-র মধ্যে আলাদা-আলাদাভাবে 
আমাদের থাকতে হবে এবং লক্ষ্মী এলে আমি তার সঙ্গে দেখা করবো!  
তুই ঐ ঝোপটার আড়ালে বসে লক্ষ্য রাখবি লক্ষ্মী-র সঙ্গে আর-কেউ আসছে কি-না !"

তখন সবে বিকেল পড়ে সন্ধ্যা হব-হব করছে এমন
সময় লক্ষ্মী একা-ই এসে হাজির হলো। দূর থেকে
তাকে আসতে দেখেই, মেয়ে-বাঘটা এগিয়ে  ওদের
পুরানো ঝোপটার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো তারপর,
লক্ষ্মী কাছে আসতেই, সে জানতে চাইল, ওর
মনিব ওকে কী বলেছেন ! লক্ষ্মী বললো, "আমার
মনিব বলেছেন, আপনাদের যতদিন ইচ্ছে তার
অতিথিশালায় থাকতে পারেন !" তারপর, সে ঘাড়
ঘুরিয়ে এদিক-সেদিক দেখতে-দেখতে বললো,
"আপনার বয়ফ্রেন্ড কোথায় গেল ?"
মেয়ে বাঘটা বললো, "উপোস আর,পথের ক্লান্তিতে
ও একটু ঘুমিয়ে পড়েছে !" লক্ষ্মী বললো,"ঠিক
আছে, আমি রাত করে  এসে আপনাদের নিয়ে
যাব !" ছাগলটা চলে যেতেই মেয়ে-বাঘটার হঠাৎ-ই,
মনে পড়ে গেল লক্ষ্মী-র কথা শুনে কেন তার মনটা
কাল থেকে খুঁত-খুঁত করছিল ! সে বেশ বুঝতে
পারল লক্ষ্মী মিথ্যা কথা বলছে ! আসলে, সে জানে
যে তারা এখানে কবে থেকে লুকিয়ে আছে কারণ,
কালকে কথায়-কথায় ও বলেছিল,  আপনারা
আসার ঠিক আগের দিন গণ্ডার-দাদা এসেছে !
তার মানে, এখানে কে আসছে-যাচ্ছে সেসবের
উপরেই ও নজর রাখে !  মেয়ে-বাঘটা তাড়াতাড়ি
অন্য ঝোপটার কাছে গিয়ে ছেলেটাকে ডাকল
তারপর, বললো, শোন, লক্ষ্মী আসলে, একটা
ফাঁদ ! আমরা কবে এখানে এসেছি, কেন এসেছি
ওর মনিব আর ও সব-ই জানে !
একটু রাত করে লক্ষ্মী ঘর থেকে বেরোতেই, ওর
মনিব শিবু মুচি বলে কাকে যেন ফোন করে

বললো, "আজ রাত্রে এসে ছাগলের চামড়াটা নিয়ে যাস।" 
তারপর, আবারও কাকে ফোন করে বললো, 
"দুটো বাঘের চামড়া, নখ, একটা গণ্ডারের খড়্গ আর, 
পুরুষাংগের খদ্দের জোগাড় কর !"

ঘণ্টাখানেক পর সেই ঝোপঝাড়টার পাশ থেকে
হঠাৎ-ই, একটা "বাঁচাও! বাঁচাও!" আর্তচিৎকার
শোনা গেল তারপরে এক-ঝলক বিদ্যুতের মতোই,
চোখে পড়লো মেয়ে-বাঘটা লক্ষ্মীর ঘাড় মটকে
তাকে মুখে ঝুলিয়ে একটা জোর লাফ মারল !