সম্পাদকীয় : ১৪০০ সাল পত্রিকা শারদীয় সংখ্যা

 





সম্পাদকীয়


ত্রিনয়নী
-----------

প্রায় তিনমাস আগে চোখ ঝাপসা হতে হতে দূরের
দৃষ্টি বেশ ভালো ঝাপসা হয়ে গেল। হাসপাতালে
খোঁজ নিয়ে জানলাম ডাক্তারবাবু বিদেশে। তাঁর
ফিরতে ফিরতে প্রায় একমাস। বাঁ চোখে যেহেতু
মাইনাস পাওয়ার খুব সামান্য, বুঝলাম ক্যাটারাক্ট
বেড়েছে। নিশ্চিত হওয়ার জন্য অন্য হাসপাতালে
দেখিয়ে নিলাম।

বিগত তিনমাসে লেখা এবং পড়া দুই বন্ধ ছিল।
বাড়ির ছোট ছোট কাজ, যা আমি করতে পারি,
সেও বন্ধ। বেরোনো প্রায় বন্ধ। শুয়ে বসে ঘরের
কোণে শুধু অবান্তর ভাবনা। ভাবনার যে দৃষ্টি
থাকে, বুঝলাম। তা বেশ রহস্যময়। ক্রমশ এই
পরিস্থিতি আমাকে আচ্ছন্ন করে ফেলল। নিজের
সঙ্গে নিজের এত কথা জমা ছিল কে জানত!
নীরব এবং দীর্ঘ একাকিত্বের এমন এক সম্পর্ক
তৈরি হল, যা আগে কখনও টের পাইনি।
অপরিচিত অভূতপূর্ব ভাবনা ছোট ছোট বৈদ্যুতিক
স্পর্শে  জুড়ে জুড়ে শ্রাবণের ধারার মতো চেতনায়
ঝরে পড়তে থাকল। তা যে সৃষ্টিশীল এমন বলতে
পারি না, মনোরম এ কথা অনস্বীকার্য! আজকাল
যেহেতু মোবাইল ফোন দেখা এবং পড়ার, বিশেষ
করে সোশাল মিডিয়ার কারণে, দেখাপড়ার
বিষয়টি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কথা বলার ইচ্ছাও
ক্রমহ্রাসমান হয়ে পড়ল। গাছে ফুটে ওঠা ফুল
দেখতে অসুবিধা হয়নি, বৃষ্টি দেখেছি, নিজেকেও।

অপারেশন পর্ব মিটেছে। অপারেশনের পর আমার
পুরনো বিপত্তি ফিরে এসেছে। পাওয়ার দিতে
গেলেই 'ডবল ভিশন'। চশমা ছাড়া আপাতত দিন
কাটছে। শারদীয়া আসছে। কাশ ফুলের শরীরে
ভাদ্রের উষ্ণতা ঢেউ তুলছে। বহুবিধ আইড্রপের
কারণে চোখ বন্ধ করে থাকতে হচ্ছে সময়ে সময়ে।
যদিও চোখ বন্ধ করে থাকায় অভ্যস্ত হয়ে গেছি,
একটু বেশিই ওভাবে কাটছে এবং ভালোই লাগছে।
পূর্ণনিমীলিত দুচোখে যে গভীর শান্তি তা অনুভূত
হচ্ছে গুনগুন করে: 'অন্তরে আজ দেখব যখন
আলোক নাহি রে।' আগমনীর প্রাকমুহূর্তে তৃতীয়
চোখে তবে কি আত্মচেতনা জেগে উঠছে? 
পঞ্চমুখি জবায় ঊষাকালীন সিঁদুরে আলোর
প্রস্ফুটন: 'জাগো তুমি জাগো...'
-------------------

১৪০০ সালের পক্ষ থেকে প্রত্যেককে শারদ শুভেচ্ছা জানাই।
---------------------

পুনশ্চ: চোখের অসুবিধার জন্য ১৪০০ সাল একটু
অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। সম্পাদক হিসাবে ক্ষমা
চাইছি। এই সংখ্যা কন্যা দেবোপমার সাহায্য ছাড়া
প্রকাশ সম্ভব হতো না। 


চোখের জন্য যে দুজন স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে সাহায্য
করেছেন, কালীকৃষ্ণ গুহ এবং ডঃ রজতকান্তি
সিংহচৌধুরী, তাঁদের কৃতজ্ঞতা জানাই। ডঃ
সোমনাথ মজুমদার যিনি অনুরোধ রক্ষা করে
আমাকে একটু আগেই দেখে অপারেশন করে
দিয়েছেন, ওঁকেও কৃতজ্ঞতা জানাই।