দুটি কবিতা : তৈমুর খান

 







তৈমুর খান


 বক
 
 কোথাও বক ওড়ে রাত্রির আকাশে
 আমরা প্রাচীন রাস্তা খুঁজি
 মেটে বাড়ির দরজায় এখনও লণ্ঠন জ্বলে
 কোথাও ধান ভানে, প্রাচীন ঢেঁকির শব্দ
 প্রাচীন যুবতী পাড় দেয়
 মাটিতে লুটায় তার সবুজ আঁচল

 দরজায় ফিরে আসি
 আমাদের বিগত জীবিকার গল্প দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে

 বর্ষা পার হচ্ছে,ক্ষেত ভরা জলে
 ছোট ছোট মাছ স্মৃতির ভেতর ঢেউ তোলে
 কাদা পায়ে ফিরে আসি, কাস্তেটা ধরা আছে হাতে

 মেঘ নেই, চাঁদ নেই,সান্ধ্যপ্রদীপ জ্বলে ঘরে ঘরে
 বিশ্রামের আয়োজন করে
 মাথা থেকে নামাই ঘাসের বোঝা
 গরু ও ছাগলগুলি চেয়ে আছে নম্র চোখে
 কার মুখ নিশিপদ্মের মতো আমাকে ডাকে?
 স্মৃতির বকেরা যায় একে একে দিনান্তের নীড়ে…



সাইকেল মিস্ত্রি

 জীবনের চাকা ঘুরছে না আর
 শব্দের খিলানে উপলব্ধির অদ্ভুত বৈরাগ্য
 বোধের হাতুড়ি ঠুকে ঠুকে চলছে মেরামত

 চাকা কি মেরামত হয়?
 নিজের কাছেই প্রশ্ন উঠে আসে
 আর নিজেই ব্যর্থ মিস্ত্রি 
          দার্শনিকের মতো উদাসীন হই

 গোলাপি হাতের তালু ক্রমশ হলুদ হয়ে আসে
 বাতাবি লেবুর বন কাঁপতে থাকে ঝড়ের সংকেতে
 একজোড়া কপোত-কপোতী ডানা শুকিয়ে চলে যায়
 বেদনার বৈভবে স্বপ্নের প্রশ্রয় কারা দ্যায়?

 আনচান করা বিলম্ব কিছুটা তৃষ্ণার্ত হলে
 সস্নেহ মাটির কাছে স্মৃতির করুণা ফিরে চায়
 হয়তো গড়াবে চাকা নিশ্চিত শূন্যতার ভিতর
 গোধূলির রহস্য বার্তায় কেবল নিজেকে
 এক সাইকেলমিস্ত্রি মনে হয়!