গুচ্ছ কবিতা : বিকাশ চন্দ

 







বিকাশ চন্দ 


অনন্ত আলাপ

কিছু মানুষ খোয়া যাচ্ছে প্রতিদিন 
তবুও ঠিকানা বিহীন নিরাশ্রয় মানুষ ভেজে
অপ্রাকৃত প্রেম কথা শোনাবে বলেই 
উবুড় করেছে বুক ভরা জমির ফসল 
সকল বেদনা গলে পড়ে 
শোকে আর সংশয়ে খোঁজে বারোমাস 
কোথাও আশ্রয় দেবে নবান্নের দেশ

এখন অগণিত চেহারায় অন্ধ শিকারি
নিহিত মৃত্যুর আগুন ছোঁয় অবিনীত উৎসব 
সকল  বিমূর্ত ছবি ফিরে আসে উঠোনে 
মা-বাবার ডাক ফিরে আয় খোকা 
ছুঁয়ে যায় সকল তীর্থ পথ
বেঁধে বেঁধে রাখে সকল মিলন দিন 
সমস্ত স্রোত খুঁজে পেতে মিলেছে মোহনায় 

নিরাভরণ শরীর এখনো ঘিরে আছে 
জেগে আছে পূর্বপুরুষ আত্ম পরম্পরায় 
বাতাসে নিঃশ্বাসে অজানা স্বরাঘাত 
কেউ কখনো ফিরে দেখেনি মানুষের স্বাধিকার
আজানে প্রণামে ধমনি শিরায় বইছে অনন্ত আলাপ


আগুন প্রহর 

খেলা শেষে ছেঁড়া কাপড় শাড়ি জামা ছড়িয়ে
অশ্রুত কথারা খুঁজে বেড়াচ্ছিল
কিছু স্বপ্ন অক্ষর আঁকড়ে যত টুকু
কোথাও বা যদি মেলে প্রণয় সংকেত
আড়ালে থাকে চিরকাল অশুভ চিহ্ন
তবুও সূর্য খেলে জলের সোহাগ
জল ছুরিতে এফোঁড়  ওফোড় মঙ্গল আস্তরণ 

চোখের জলে ভেজেনি কুশলী ফাঁদ
দুয়ারে দাঁড়িয়ে প্রেমিক প্রেমিকা
সমর্পণের নম্র উষ্ণতা অভেদ্য পাঁজর জানে
তবুও গুপ্ত গুহার আদিম হুঙ্কার জাগে
সমর্পণ কালে বিহ্বল হরিণ হরিণী
কমনীয় বুকের আস্তরণ চাঁটে ত্রিশূলের জিভ
পথে ঘাটে ছড়িয়ে চির বসন্তের খুন

দেয়ালে দেয়ালে এখনো আবছা রূপান্তর কথা
রঙ মেলাবার সময় খোঁজে অশরীরী ছায়া
কর্পূর গন্ধ মাখে সমুন্নত স্বর্গের গল্প
পোড়ামুখ এখনো বোঝে ভাতের স্বাদ গুণ 
পারিজাত গদ্য ভেজে অদৃশ্য রক্তপাতে
মুখের ছায়ার থমকে আগুন প্রহর 


জন্মকথা 

অবাক বৃক্ষের ফাটলে বাঁচে আত্মার মোচন কাল
শাখায় পাতায় ফুলে পাখি ডাকলে মহাকাল জাগে
আকাশ মাটি জল শালুক শামুক মাছ
জলের ভেতরে পরম্পরা পেলব পরবাস
ভেসে যায় সিদ্ধি ঘট অস্থি কলস
দু'তীরে গাছের ছায়ায় জমাট দুঃস্বপ্ন 

অস্থির সময় জানে না ঘিরে আছে 
কালো মেঘ আর আগুন তরল
গর্ভ ঘরে গলে পড়ে সকল আবরণ 

পাথর ঘরের গল্প শোনায় অধুনা প্রযুক্তি 
গবেষণা ঘরে কল্পিত আদিকথা ঝোলে ক্যালেন্ডারে
সিঁড়ি ভেঙে উঠে আসে কাদা মাটি শরীরে অন্ন পুরুষ 

পোড়া সময়ের গল্প শোনায় বাজিকর 
হা-হা হেসে ওঠে দিগন্তের উত্তুরে হাওয়া 
দক্ষিণের কাকতাড়ুয়া জানে আষাঢ়ে গল্পের সাতকাহন 
পারদর্শী জাদুঘরে মেতেছে রঙের মোচ্ছবে
হাড় মাংস মজ্জায় বিলীন বর্ণপরিচয় জন্মকথা