ছড়া : জয়শ্রী সরকার

 





 জয়শ্রী সরকার


 একুশ মানেই


একটি দিনের একুশ তো নয় , একুশ সারাবছর
ভাষাশহিদ দিবস মানেই সত্যি প্রাণের বাসর ।
এই ভাষাতেই কাঁদি-হাসি প্রাণের পরাগ মাখি
এই ভাষাতেই স্বপ্ন-সুখে দুঃখ-দৈন্য ঢাকি !

বাংলা মায়ের দামাল ছেলে রবীন্দ্র-নজরুল
এই ভাষাতেই আগুন-আলোয় ফোটাচ্ছে যে ফুল।
বাংলা মায়ের প্রাণের ভাষা ভায়ের রক্তে লাল
একুশ মানেই ভাষাশহিদের স্মরণ করার কাল !

একুশ মানেই মনের মাঝে আমরা অকুতোভয়
একুশ মানেই বিজয়োল্লাস , ভাষাশহিদের জয়।
কোন্ ভাষাতে গাইবো মাগো দেশপ্রেমের গান ?
মুখের ভাষা , বুকের ব্যথা বাংলা আমার প্রাণ !

একুশ মানেই আলোর দিশা নতুন চর্যাগান ,
একুশ মানেই উদার আকাশ উড়ন্ত এক প্রাণ।
একুশ মানেই ভোরের আজান , মোহন বাঁশির সুর
একুশ মানেই সন্ধ্যাপ্রদীপ , আনন্দে ভরপুর !



 সেদিনের সেই গাছটা

                
মায়ের দেওয়া টগর গাছটা মায়ের মতোই তর্-তরে 
কতদিন আগে মা চলে গেছে, গাছটা কিন্তু ঝর্-ঝরে !

মৃত্যুর আগে গাছটা ছিল যে ইঞ্চিখানেক মতো
ছোট্ট গাছেতে ঘুমিয়ে তো ছিল জীবনের আশ যত !

তিলে-তিলে হাওয়া জল মাটি পেয়ে গাছটা হয়েছে সরস ,
যতবার দেখি মন ভরে যায় মায়েরই সেই পরশ !

গাছটা এখনো তাকিয়ে থাকে যে সেই স্নেহমাখা মায়া
মনে হয় যেন মাকেই দেখছি , মায়েরই সেই ছায়া !

মৃত্যুর আগে বলেছিল মা তো যতদিন বাঁচে গাছটা ,
ততদিনই তোর মনেতে বাঁচবে মায়ের স্মৃতির আশটা !

তাই মনে ভাবি প্রাণটা দিয়েও গাছটাকে রাখি বাঁচিয়ে ,
গাছটাই যেন মায়ের প্রতীক , জীবনটা রাখে মাতিয়ে !



 তফাৎ

বন্-বন্-বন্ উড়ছে ঘুড়ি একটু দূরে খাচ্ছে মুড়ি
ওই ছেলেটা ,
শন্-শন্-শন্ বইছে হাওয়া , লেপছে দেখি ঘরের দাওয়া
ওই মেয়েটা !

পুলকারেতে যাচ্ছে খোকা , না হয় সে যে একটু বোকা
কারণ ! সে তো ছেলে ;
পুকুর-ঘাটে বাসন মাজে , ছোট্ট খুকু ব্যস্ত কাজে
শুধুই অবহেলে !

হাই-টেক্ সব পোশাক পরে যাচ্ছে খোকা স্যান্ট্রো চরে
করতে চড়ুইভাতি ,
ছোট্ট খুকুর পোশাক তো নেই , জারজর্জর শীতেও তো সেই
জ্বালায় রাতের বাতি !

এমনি করেই এই সমাজে ছেলে-মেয়ের তফাৎটা যে
স্পষ্ট হয়ে ওঠে ,
তবুও সবাই নির্বিকার , সমান সমান ভাবছি না আর
লাঞ্ছনাটাই জোটে !

অর্দ্ধেক এই আকাশটাকে অস্বীকারের আঁকে-বাঁকে
হয় না জীবন খাঁটি ,
এখন ভাবি এসব নিয়ে ভুলগুলো সব শুধরে দিয়ে
সমান তালে হাঁটি !



বৃষ্টি মানেই

                  
বৃষ্টি মানেই টাপুর-টুপুর বৃষ্টি মানেই বেগ
বৃষ্টি মানেই নিকষ কালো আকাশ ভরা মেঘ !

বৃষ্টি মানেই মিষ্টি আবেশ অলস দুপুরবেলা ,
বৃষ্টি মানেই জল থই থই টুকরো মেঘের ভেলা !

বৃষ্টি মানে সবখানেতেই সত্যি ঘোলা জল ,
বৃষ্টি মানেই মিষ্টিবিহীন সরস যত ফল !

বৃষ্টি মানেই ঝড়-বাদলে পথ চলাতে কষ্ট ,
বৃষ্টি মানেই জলকাদাতে জামাকাপড় নষ্ট !

বৃষ্টি মানেই ঘোমটা ঢাকা সূয্যিমামার মুখ ,
বৃষ্টি মানেই জলছিটিয়ে খেলতে শিশুর সুখ !

বৃষ্টি মানেই শস্য-শ্যামল চাষির মুখে হাসি ,
বৃষ্টি মানেই সোনার ফসল নবান্ন-সুখ রাশি !



 রূপকথারা হারিয়ে গেছে

রূপকথারা হারিয়ে গেছে বুড়ো আংলার দেশে
পেপ্পা পিগের দেদার দাপট কিনছে চাইছে শিশু হেসে !

' ঘুমের মাসি ঘুমের পিসি ঘুম দিয়ে যাও চলে '
এসব কথায় আজ কখনো শিশুর মন কী ভোলে !

ব্যঙ্গমা আর ব্যঙ্গমি নেই আজকে শিশুর গল্পে
কমিক্স পড়ে , কার্টুন দেখে , বাক্যি সারে অল্পে !

শৈশব আজ হারিয়ে গেছে শিশুর জীবন থেকে
ব্যস্ত শিশু , তাই বোঝে না -- শিখছে শুধুই ঠেকে!

বুঝছে কী ছাই বুঝছে না সে পড়ছে যে মন দিয়ে
আঁকছি ছবি ভবিষ্যতের শিশুর জীবন নিয়ে !

ঘুমের দেশের পরীরাসব কোথায় কে বা জানে 
চাঁদমামা আর পাড়ায় না ঘুম, ঘুমায় শিশু গানে !

রাক্ষসেরা ভর করেছে ক্যান্ডিক্রাশের ছলে ,
ফ্যান্টাসিতে ভুগছে শিশু , মরছে দলে দলে !

ঠাকুরমায়ের ঝুলিতে আজ রূপকথারা হাসে 
চোখের জল মুছেই সে তো কাটায় বৃদ্ধাবাসে !

রূপকথারা হারিয়ে গেছে শিশুর ভুবন থেকে 
সব হারানোর দুঃখ শুধুই যাচ্ছি ছড়ায় এঁকে !