স্মরণঃ শাঁওলি মিত্র : মন্দিরা ঘোষ

 





মন্দিরা ঘোষ


স্মরণঃ শাঁওলি মিত্র

বাংলা নাট্যজগতে শাঁওলি মিত্র একটা জার্নির নাম।  আনখশির এক প্রতিবাদ যা ঐতিহাসিক আবহে 'নাথবতী অনাথবৎ' থেকে 'কথা অমৃত সমান' এক সুদীর্ঘ পরিক্রমা।এই নাটকগুলিতে শাঁওলি মিত্রের একক  অভিনয়, বিভিন্ন চরিত্রের স্বরক্ষেপণ নাট্য ইতিহাসে অনন্য  স্বাক্ষর হিসেবে চিহ্নিত।  রক্তের ধারায় প্রবাহিত নাট্য স্রোত-  শম্ভু মিত্র তৃপ্তি মিত্রের সুযোগ্য সন্তান প্রখর বুদ্ধিমত্তা, অনন্য ব্যক্তিসত্তার অধিকারিণী মঞ্চে নেমে ইতিহাস তৈরি করলেন। লেখনী,অভিনয়ে, আঙ্গিকে মুগ্ধ আর অবাক করলেন দর্শক-শ্রোতাকে। 
বাবা শম্ভু মিত্রের মতই ইচ্ছাপত্রে  নিঃশব্দ মহাপ্রস্থান মেনে নিয়ে শান্ত সমাহিত শেষযাত্রার সাক্ষী থাকলো কেবলমাত্র সিরিটি মহাশ্মশান। ১৬ ই ফেব্রুয়ারি,২০২২ শে  নিজের বাসভবনে এই আলোকসামান্যা প্রতিভা ৭৪ বছর বয়সে লোকচক্ষুর অন্তরালে নীরবে অস্তমিত হলেন। 
 বাবা মা বিখ্যাত  নাট্যব্যক্তিত্ব হওয়ার  কারণে শিশু বয়স থেকেই  নাটকের আবহে  বেড়ে উঠেছেন। তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ার সময় বহুরূপীর 'ছেঁড়া তার' নাটকে অভিনয়ের হাতে খড়ি। ছোটবেলায় ডাকঘর নাটকে অমলের চরিত্রে অভিনয় সবার প্রশংসা কুড়োয়।
তৃপ্তি মিত্রের পরিচালনায় 'কিংবদন্তী', হিমাংশু চট্টোপাধ্যায়ের পরিচালনায়  'ত্রিংশ শতাব্দী' নাটকে মিসেস ইথার্নির চরিত্রে ,  শম্ভু মিত্রের পরিচালনায় রবীন্দ্রনাথের 'রাজা' নাটকে সুরঙ্গমার চরিত্রেও অভিনয় করেছেন তিনি। 
 পরবর্তীকালে বাংলা মঞ্চ জগতে একজন বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন তিনি এবং পঞ্চম বৈদিক নামে নিজস্ব নাট্যদল গঠন করেন।১৯৯১ সালে নাথবতী অনাথবৎ নাটকের জন্য আনন্দ পুরস্কার পান।
২০০৩ সালে বাংলা থিয়েটারে অভিনয়ের জন্য সংগীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার,
২০০৯ সালে পদ্মশ্রী পুরষ্কার ও ২০১২ সালে অভিনয়ে জীবনব্যাপী অবদানের জন্য বঙ্গবিভূষণ পুরষ্কার পান।


  আড়ম্বরহীন জীবন, দাপুটে অভিনয় আর আত্মসম্মানবোধে উজ্জ্বল এই আলোকসামান্যা প্রতিভার বিদায় নাট্যজগত  তথা আপামর বাঙালির মনে এক অপূরণীয় শূন্যতার সৃষ্টি করলো।