সম্পাদকীয় জৈষ্ঠ সংখ্যা : চন্দ্রদীপা সেনশর্মা

 


সম্পাদকীয়
----------------

                   চন্দ্রদীপা সেনশর্মা
                   -------------------------

ন জায়তে ম্রিয়তে বা কদাচিন্-
নায়ং ভূত্বা ভবিতা বা ন ভূয়ঃ।
অজো নিত্যঃ শাশ্বতো'য়ং পুরাণো
ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে।।

এই শ্লোক আপাতত আমার প্রতিদিনের আশ্রয়।
পড়ে চলেছি, নিজেকে বোঝাচ্ছি, একটু স্বাভাবিক
হচ্ছি। আবার ভেঙে পড়ছি।

ফেসবুক খুললেই শুধু মানুষের মৃত্যুমিছিল। চলে
যাচ্ছেন এক এক করে প্রিয় কবি লেখক বন্ধু এবং
আত্মীয়। সম্পাদকীয় কী লিখব, আঙুল অসাড়
হয়ে আছে। অক্সিমিটারের মতো মনখারাপ মাপার
কিছু থাকলে দেখা যেত ৯০ ৮৫ ৮০...অন্ধকার।
মনখারাপের প্রোনিং নেই, রয়েছে অতল অন্ধকার।

২৭ এপ্রিল মাত্র ৫৮ বছরে আমার দাদা চলে গেল।
বাড়ি থেকে বহুদূরে উত্তরাখণ্ডে। হ্যাঁ, মাসতুতো,
সবাই বলবেন কাজিন। বিশ্বাস করুন, 'কাজিন'
শব্দের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক ছিল না।
একত্রে বড় হয়েছি। নিজেদের ভাড়াবাসার ভিন্ন
ভিন্ন বাড়ির তুলনায় মাসির বাড়ি বেশি থেকেছি।
মেসো এবং মাসি তিনসন্তানের থেকে আমাকে ঢের
বেশি আহ্লাদ দিয়েছেন, প্রশ্রয় দিয়েছেন। ঠিক
তেমন আমার ৮১ বছরের মা সবথেকে বেশি স্নেহ
করতেন আমার ওই দাদাকে। মাকে বলিনি। একই
বাড়িতে পালিয়ে বেড়াচ্ছি তাঁর নজর এড়িয়ে। দিন
কাটছে, রাত। কথা বলছি না তাঁর সঙ্গে। অন্য ঘরে
লুকিয়ে কাঁদছি। অসহনীয় অবস্থা। বারবার দাদা
স্বর্গারোহিণী'র পথে যেত। হয়তো নিয়তি ওকে
উত্তরাখণ্ডে নিয়ে গেল। ওর তোলা স্বর্গারোহিণী'র
ছবি দেখি, দেখে চলি।

সম্পাদকীয় ব্যক্তিগত বেদনা লেখার জায়গা না।
বহু প্রয়াসেও নিরপেক্ষ সম্পাদক থাকতে পারছি
না। আমার অপারগতা ক্ষমা করে দেবেন। শঙ্খ
ঘোষ, যাঁর কবিতার বই কৈশোরে হাতে তুলে
নিয়েছিলাম। সে মুগ্ধতা ভোলার না। তাঁর
'মণিকর্ণিকা' কবিতার শেষ তিনলাইন:

'চতুর্দশীর অন্ধকারে বয়ে যায় গঙ্গা
এক শ্মশান থেকে আরেক শ্মশানের মাঝখানে
আমরা কেউ কারো মুখের দিকে তাকাই না।'
              -----শঙ্খ ঘোষ

পবিত্র মুখোপাধ্যায়, একটু বড়ো হয়ে যাঁকে পড়েছি।
 কবিপত্র'র সম্পাদক, কত নতুন কবি
উঠে এসেছেন কবিপত্র পত্রিকায় লিখে। 


'কারা বসে আছ ঘাটে স্মৃতিফলকের মত একা?
তোমরা দূরের যাত্রী কতকাল প্রতীক্ষায় রবে?'
            -----পবিত্র মুখোপাধ্যায়

সন্দীপ মুখোপাধ্যায়, অমায়িক এবং অনন্য প্রজ্ঞার 
অধিকারী, বৈশাখে যিনি লিখলেন ১৪০০ সালে, 
দাদার ঠিক ১২ দিন পর তিনি চলে গেলেন। এই 
লেখা তাঁর বৈশাখ সংখ্যার একটি কবিতা দিয়ে 
শেষ করছি। প্রত্যেকের জন্য শান্তি কামনা করি।


আবার মৃত্যুর দিকে
----------------------------

স্তব্ধতার দিকে এই দিনটাকে তুলে রাখি।
আজ শুধু চুপপাথর--
আর কিছুক্ষণ পরে শকটের প্রবল লাঞ্ছনা--
এ-মৃত্যুর দিকে এই অবকাশ।
             -----সন্দীপ মুখোপাধ্যায়

সম্পাদকীয় শেষ করে জানলাম 'আবার এসেছি
ফিরে' ও 'এবং পুনশ্চ' পত্রিকার সম্পাদক
এবাদুল হক আর নেই। ১৪০০ সাল চৈত্র সংখ্যায়
লেখা দিয়ে ওয়েবজিনকে উনি সমৃদ্ধ করে গেলেন।
১৪০০ সালে লেখা ওঁর কবিতার শেষ দুলাইন:

'যারা পোড়ে আগুনেও পোড়ে বৃষ্টিতেও পোড়ে 
পিপাসা চন্দন কাঠের সুগন্ধ মেখেও পোড়ে।'
            -----এবাদুল হক
-------------
১৭ মে, ২০২১, সকাল ১১.৩০












স্বর্গারোহিণী : ছবি : পিনাকী রায় (দাদা)