গুচ্ছ কবিতা : মারুফ আহমেদ নয়ন

 






মারুফ আহমেদ নয়ন

১.
প্রতীক্ষার হাজার দুয়ারঃ

সময় হচ্ছে একটা খচ্চর, কি নির্দেশ করে, ক্ষয় ক্ষতির গল্প বলে কিছু বুঝি না। তোমার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রয়েছি, জলে মাছের ঝাঁক, পাখিরা ফেলে যাচ্ছে পালক, এক জীবনের যত গল্প, মানুষ জন্মের উড়াউড়ি।
তুমি কি তবে ফেলে যাচ্ছো অন্য কিছু, বিরহে বিলীন হবার দিন, ভেঙ্গে পড়া ইট, চুন, সুরকীর গাঁথুনী, যেনো তোমার চলে যাওয়া কতো নান্দনিক, সবকিছু ভেঙ্গে পড়ছে অথচ নতুন কিছু সৃষ্টি হচ্ছে না, মধ্যরাতে পেঁচার ডাক, বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়, ঘুম হয় না। আমার পাথুরে দুটি চোখ পাহারা দেয়, তার অশ্রু সজল দুটি চোখকে।



২.
প্রেমের সমস্ত আয়োজনঃ

প্রেমের সমস্ত আয়োজন ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে, মায়াবী রাজহংসীর শরীর থেকে ঝরে যাচ্ছে সমস্ত পালক, বেনামী তীর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে নদী কাহিনী, পরগাছা জন্মাচ্ছে গাছের দেহ কোটরে, সবুজ আপেলগুলো খেয়ে ফেলছে গোরখোদক পোকারা, আমাকে খেয়ে ফেলছে তোমার  স্মৃতি কাতরতা, উঁইপোকার সংসারে যা দেখিনি এতোকাল তা দেখার পূর্বেই যদি ঘুমিয়ে পড়ি সূর্যমুখী বীজের ভেতরে, তবে হাওয়ায় উড়বে কি মন, আহা শিমুল তুলোর মতোন, যদি আর না দেখা হয়, যদি আর না কথা হয়, স্মৃতির কোষে কোষে কি রিম রিম বাজতে থাকবে পরাজিত সেই প্রেমের সেতার।


৩.
জলবিম্বে বিশুদ্ধ গোলাপঃ

আমার এমন মন্দ কপাল, কিছুই সয় না, এতো মেঘ এসে খেলা করে শৈশবের উঠোনে, তবুও বৃষ্টি নামে না, ঝাউবনে সারারাত হাওয়ার মাতম, অদৃশ্য পাখিদের উড়াউড়ি, আফিম ফুলের পাশে ইর্ষাপরায়ণ একটা দুপুর কেনো যে অন্ধকার রাত্রিতে প্রত্যাশা করে কোন দৈব কন্ঠস্বর, হাওয়ারা কি জানে শুকনো পাতা ও সতেজ কুড়িদের মন, এমন পোড়া কপাল নিয়ে এর ওর সাথে ঘুরি ফিরি, তবুও বিস্ময়ে জুঁই জবা ফোটে, অদৃশ্য ঘ্রাণ ও জলে ভরে যায় চারপাশ, জলবিম্বে শুধু তোমাকে দেখি এক বিশুদ্ধ গোলাপের মুখ।

৪.
ও হাওয়ার পাখিঃ

হাওয়ার সমুদ্রে উড়ে যাচ্ছো পাখি, তার কাছে পৌঁছে দিও আমার এ গান, বেঁচে আছি রমণী ফুল ভালবেসে, তুমুল বর্ষার ভেতরে একা একা বৃষ্টিতে ভিজছি, শতবর্ষী চোখের পাতায় টলমল করছে ঘুম, হীরের ঘন জঙ্গল, উঁচু নিচু পাহাড় টলছে কেমন, সমুদ্রের উত্তাল জল রাশিতে ভাসছে যেমন ঝিনুক,  তার থেকে হয়ত মালা হবে, নতজানু নদীর শিয়র থেকে হবে গান, সমুদ্র থেকে দূরে এক পাহাড় থেকে দেখছি, আমাকে আলো দিচ্ছে যে চাঁদ, আমাকে সারা রাত জাগিয়ে রেখে গল্প করছে যে চাঁদ, সে যেনো তুমি। এক নগ্ন নির্জন সাক্ষাৎ।