স্মরণলেখ : অমল বসু

বৃহস্পতিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২২ /
ফেসবুক-এ শেয়ার করুন /
টুইটার-এ শেয়ার করুন

 






অমল বসু



বেনিয়মের নিয়মে প্রভাত চৌধুরী

 

কবি প্রভাত চৌধুরী আজ নেই রয়ে গেছে সৃষ্টিসম্ভার যার প্রতিটি শব্দসারিতে তাঁর মনন চিন্তন অর্জন প্রাণময় প্রভাতদাকে নিয়ে লিখতে গিয়ে মনে হচ্ছে মহাসাগরের পাড়ে বসে আছি আপোসহীন জল-গর্জন কানে আসছে কী লিখি, কোথা থেকে শুরু করি! চোখ বুজলে সশরীরে মূর্ত হয়ে ওঠেন প্রভাতদা  

মহানগরীর নাগরিক কবির হৃদয় জুড়ে ছিল গ্রামবাংলার সবুজ আলাপ বাঁকুড়ার কাদাকুলির   মানুষটি গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরার স্বপ্ন দেখতেন প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে আর এক প্রতিষ্ঠান গড়ার লড়াই ছিল প্রতিটি লড়াইয়ের পেছনে থাকে স্বপ্ন প্রভাতাদার স্বপ্ন দেখা শুরু সকালের চায়ে চুমুক দিয়ে সারা দিন গড়িয়ে ঘরের আলো নেভা পর্যন্ত ডুয়ার্স থেকে বরেন্দ্র হয়ে রাঢ় কিম্বা লালমাটির দেশ থেকে সমস্যার সুন্দরবন জুরে ছিল আপডেট কবিতা চর্চার ঘন বুনোট

প্রতিষ্ঠানের ছায়ার আশ্রিত বা লালিত ভরকেন্দ্রগুলিকে উপেক্ষা করার মতো মানসিক শক্তি তিনি অর্জন করে ছিলেন উত্তর আধুনিকতার চর্চা শুধু কবিতায় নয়, রোজকার যাপনেও ছিল তিনি জানতেন  ভাদু টুসু ছৌ নাচের সরল জীবন চর্চা প্রজ্ঞার মাঝেই লুকিয়ে আছে অধুনান্তিকের বীজমন্ত্র উপনিবেশিক মানসিকতার ঘেরাটোপ থেকে চিন্তা চেতনাকে রক্ষা করাই শুধু নয় ওই ঘেরাটোপকে ধ্বংস করার নিরন্তর লড়াইতে প্রভাত চৌধুরী ছিলেন প্রধান সেনাপতি তাঁর প্রয়াণে খানিক বিহ্বলতা এলেও সময় থেমে থাকবে না সারা বাংলাজুড়ে দীক্ষিত অঙ্কুরগুলো চেতনার প্রশ্রয়ে ডালপালা মেলে বেড়ে উঠবেই বাংলা  কবিতার ভুবনে

প্রভাতদাকে ঘিরে অনেক ব্যক্তিগত স্মৃতিছবি ভেসে উঠছে যূথিকাবৌদি তার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ বাংলাদেশের রাজশাহীতে চিহ্নমেলায় সহযাত্রী ছিলাম দুই বাংলার কবি লেখক সম্পাদকের মধ্যমণি প্রভাত চৌধুরী মেতে উঠেছিলেন সৃষ্টি সুখের বৈভবে মেলার প্রথম দিনেই তাঁর লেখা সব বই শেষ অথবা বালুরঘাটের বইমেলায় কবিতা পাক্ষিক স্টলে জেলার কবি লেখকদের সমাবেশে বিলিয়ে গেছেন তাৎক্ষণিক মুহূর্তে লেখা কবিতা দধীচি পত্রিকার উৎসবে এসে ছিলেন বালুরঘাটে সঙ্গে ছিলেন মুরারী সিংহ, গৌরাঙ্গ মিত্র রীতা মিত্র সেদিন ছিল দাদা-বৌদির বিবাহবার্ষিকী, বালুরঘাট বাজার থেকে কেনা হয়েছিল খানদানি কইমাছ বাড়ির গিন্নিদের অস্বস্তিতে ফেলে ঢুকে গেলেন রান্নাঘরে সে তেলকই-এর স্বাদ আজো হাতে লেগে আছে আত্রেয়ী নদীর পাড় শুধু নয়, শহর জুরে সজনে ফুলের উৎসব দেখে মুগ্ধ কবি সরু সরু কচি সজনে দিয়ে রান্না করলেন সুস্বাদু টক

তাঁর চলনে বলনে শব্দ মন্থনে ছিল প্রথা ভাঙার ছন্দ সর্বকালে মহৎ কবিরা বর্তমান কাল থেকে এগিয়ে থাকেন তাঁদের শ্রেষ্টত্ব প্রতিষ্ঠা পায় কবির তিরোধানের পরে প্রভাত চৌধুরী বেঁচে থাকবেন বাংলা কবিতার উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে আমরা মুখ তুলে দেখব, ওই তো কবি চিকমিক চোখে তাকিয়ে আছেন