স্মরণলেখ : কালীকৃষ্ণ গুহ

বৃহস্পতিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২২ /
ফেসবুক-এ শেয়ার করুন /
টুইটার-এ শেয়ার করুন

 





কালীকৃষ্ণ গুহ


প্রভাত স্মরণ

আমাদের বহুদিনের বন্ধু কবি প্রভাত চৌধুরী চলে গেল। এখন সেই সময় যখন বন্ধুদের একে একে
বিদায় জানাতে হবে যদি জীবন আরো দীর্ঘায়িত হয়। এখন বন্ধুদের মৃত্যু শান্তভাবে মেনে নিতে
পারি। এখন বার্ধক্যে পৌঁছে প্রশ্ন করি কতদিন বেঁচে থাকার অধিকার দাবি করা যায়। উত্তর পাই :
যতদিন স্বাবলম্বী থেকে বাঁচার আনন্দ গ্রহণ করা যায়। পরনির্ভর  আনন্দহীন যন্ত্রণাবিদ্ধ জীবনকে
বিদায় জানাতে যেন দ্বিধা না থাকে, এই কথা ভাবি। প্রভাত খুব বেশি দিন কষ্ট না পেয়ে চলে
যেতে পেরেছে, এও যেন এক নশ্বরের সার্থকতা! নশ্বরতা অতিক্রম করার উপায় তো নেই! প্রভাত
যেদিন চলে গেল সেদিন রাত্রির তৃতীয় প্রহরে তার উদ্দেশে বললাম : বিদায় বন্ধু!বিদায়!

প্রভাতের সঙ্গে আলাপ ষাটের দশকের মাঝামাঝি। কবি পবিত্র মুখোপাধ্যায়ের আস্তানা থেকে, শুরুর
২/৩ বছর কাটানোর পর, আমরা যখন বেরিয়ে আসি তার কিছু পরে প্রভাতরা সেই আস্তানায় 
নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি ও চিন্তাভাবনা নিয়ে যায়। সে প্রবলভাবে লেখালেখিতে জড়িয়ে পড়ে।
অমৃত পত্রিকার সঙ্গেও জড়িত হয়ে পড়ে। আমি অবশ্য তাদের ধ্বংসকালীন আন্দোলন দূর থেকে
দেখেছি মাত্র। সমবেত ভাবে সাহিত্য করার কোনো প্রস্তাবে কখনো থাকতে পারিনি। অনেক পরে যখন
প্রভাত সমীর রায়চৌধুরীর শিক্ষা ও প্রেরণায় উত্তরাধুনিক (না কি অধুনান্তিক?) আন্দোলন বা
তত্ত্ব সামনে রেখে 'কবিতা পাক্ষিক' প্রকাশ করে তখনো তাত্ত্বিক দূরত্ব বজায় রেখেই তার সঙ্গে
থেকেছি। মাঝখানে অবশ্য প্রায় ১৫ বছরের যোগাযোগহীন সময় কেটে গেছে। নব্বইয়ের
দশকে নতুন করে প্রভাতের সঙ্গে আমার যে অমলিন বন্ধুত্বের সূত্রপাত, তা আর কখনো বিচ্ছিন্ন
হয়নি। তার পত্রিকায় লিখেছি। দিনের পর দিন তার সঙ্গে বাংলা বানান এবং সমাস নিয়ে
আলোচনা করেছি। সব থেকে বেশি করে বলার কথা, সে আমার 'নির্বাচিত কবিতা' এবং পরে
আরেকটি বই প্রকাশ করেছে নিঃশর্তে। এজন্য আমি প্রভাতের কাছে ঋণী।

আর বেশি কথা না বাড়িয়ে শুধু এইটুকু বলি যে প্রভাতের মতো গতিময় কর্মদক্ষ উদার
নৈরাশ্যবিরোধী আত্মবিশ্বাসী মানুষ আমাদের সময়ে আর কেউ ছিল না। আর একজনও নয়।
সে ছিল একটা সময়ের অনুজ কবিসমাজের নেতা। তাকে ঘিরে কত যে কলরব উঠেছে! নানা
বৈপরীত্য নিয়ে--আলস্য স্থবিরতা নৈরাশ্য স্বার্থপরতা নিয়ে--সেইসব কলরবের মাঝখানে
গিয়ে দাঁড়িয়েছি মাঝে মাঝে। 

আমার দাঁড়ানোর জায়গা আরো কিছু সংকুচিত হয়ে গেল, প্রভাত!

-------------