অমিত কাশ্যপ
ঘর
এক
এই ঘর এখন আনন্দ ঘর হয়ে উঠেছে
আগে ছিল না
এই ঘরের প্রতিটি জায়গায় যেন কত স্মৃতি
আগে মনে হয়নি
আগেও এই ঘরে উল্লাশ দিনের পর রাত
মসৃণ রাতের পর দিন প্রকাশ হত সাবলীল
মনে হয়নি কেন, এমন আনন্দময় অনুভূতি
এখন দেওয়ালের নোনাধরা, রংওঠা চারিপাশ
মেঝের ফাটলের প্রশাখা, আগেও তো ছিল
আগেও কড়ি-বর্গা নেমে আসার ভগ্নদশা
এখন এতো করে মনে হচ্ছে কেন
মনে হচ্ছে কেন পৃথিবীটা ছোট হয়ে আসছে
ঘরের মধ্যে যাবতীয় অতীত, ক্ষয়ে আসা সামগ্রী
বিস্তার হচ্ছে, হতশ্রীর মধ্যে আনন্দ করছে
দুই
কেমন করে আমরা একদিন ঘরে ঢুকে পড়লাম
বাইরে কোনো দাঙ্গা নয়, প্রবল বর্ষণ নয়
জলোচ্ছ্বাস নয়, ভূমিকম্প নয়, ধ্বংসলীলা নয়
কেমন এক আতঙ্ক, যেন গিলে গিলে খাচ্ছে
সবাই ঘরমুখো, প্রয়োজনীয় মুহূর্তটুকু রেখে
সুরুৎ করে গৃহে, প্রায় গৃহবন্দী জীবন এখন
এ ঘর ও ঘর, পায়চারির মতো অনাবিল ছাদ
অনেকেই, আকাশে লাট খাওয়া ঘুড়ির মতো
ঘরেও এখন বিকেল শেষে অন্ধকার দাঁড়ায়
ভয়ও, ভয় নেই বলতে বলতে আলো জ্বালাই
আলো জ্বলে, মন প্রশান্তিতে ভরে গেলেও
কেমন এক উৎকণ্ঠা, অস্পষ্ট, কথা জড়ায়
অদ্ভুত এক বেঁচে থাকার ভেতর
অবিনাশ বলে বসে, সাহস নাও সাহস নাও
আলো ভেতর ভয়ের ভেতর অন্ধকারের ভেতর
আশ্চর্য সাহস দরজার বাইরে কড়া নাড়ে
তিন
হাবিজাবি ভাবতে ভাবতে এ ঘর ও ঘর করি
জানালার বাইরে এখন মসৃণ রোদ
দূরে রাস্তা হেঁটে যায় সাবলীল ঢঙে
শুধু রাস্তারই ছায়া, আশপাশের বাড়িগুলো
হলুদ মেখে লাজুক, নত গোধূলির ভারে
রাস্তা আরো দূরে গিয়ে সরে দাঁড়াল
দূরে আরো কি কি হল যেন অস্পষ্ট
জানালার বাইরে হাত রাখতে নরম গোধূলি
আরো কিছু নীল আকাশ থেকে উঠে আসতে
মনে হল, এমন অনেক দিন দেখিনি তো
কতকিছুই তো দেখা হয় না, তবুও তো হয়
এই যেমন এ ঘর ও ঘর করি এখন
এখন দূর কেমন কাছে এসে মিনতি করে
বাইরেটা কেমন ছোট হয়ে ঘরবন্দি হয়
চার
গুটি গুটি পায়ে কখন যেন সন্ধে নামত
মা তুলশিতলায় প্রদীপ জ্বালিয়ে
ঘরে ঘরে আলো দিতেন
বৈঠকখানা হেঁসেল দাওয়া বড়োঘর
অন্ধকার তবুও ঘাপটি মেরে
চৌকিরতলা বারান্দার কোণা সিঁড়ির নিচটা
আমরা মায়ের কাছাকাছি
ঠাকুমা যদ্দিন ছিলেন তাঁর কাছে, ঘেঁষে ঘেঁষে
কেমন এক ভয়, জড়িয়ে জড়িয়ে পায়ে
বড়ো হচ্ছি, বুনিয়াদি শেষ করে বড়ো ক্লাস
কলেজ জীবন হুস করে চলে গেল
লন্ঠন হ্যারিকেন উঠে গিয়ে বিজলি বাতি
অন্ধকার তবুও গেল না, ভয়ও গেল না
কোণায় কোণায় সযত্নে রয়ে গেল ঘাপটি মেরে
২ এবং ৩ নং বেশি ভালো লাগলো
উত্তরমুছুনচারটে কবিতাই চমৎকার
উত্তরমুছুন