বাণীব্রত চক্রবর্তী
ধারাবাহিক উপন্যাস
কালতরঙ্গ
দশ
একতলায় নেমে কানে এল নতুন ঠাকুরপোর হাসির শব্দ। হাসির মধ্যে ভারি ফুর্তি। সেইসঙ্গে টিয়া পাখির ট্যাঁ ট্যাঁ ডাক। তার মানে এতক্ষণে ভৃগু নিউমার্কেট থেকে টিয়া পাখি কিনে ফিরল। পাখি নতুন ঠাকুরপোর পছন্দ হয়েছে। কাকে যেন জিজ্ঞেস করছেন, " পাখিটা কেমন ? " উত্তর এল সমস্বরে, " খুব চমৎকার । " এক তরুণ আর এক তরুণীর কণ্ঠস্বর।
ছবিরানি কৌতূহল দমন করতে পারলেন না। হন হন করে হেঁটে বৈঠকখানায় ঢুকে পড়লেন। ওদিকে গোয়ালঘরে পার্বতী ডাকছে.... হাম্বা। হাম্বা।
ঘরে ঢুকে দেখলেন চারজন দাঁড়িয়ে আছে। নতুন ঠাকুরপোর হাতের খাঁচায় সবুজ রঙের পাখি। লাল ঠোঁট ফাঁক করে ট্যাঁ ট্যাঁ করছে। এই পাখি কি কোনও দিন রাধাকৃষ্ণ বলতে পারবে ! কিংবা " বেলা হয়েছে ঠাকুর ভাত বাড়ো " যেমন বলত হরিপ্রিয়া। ছবিরানির শাশুড়ির পোষা পাখি। সেসব কবেকার কথা। এই পাখির কী নাম রাখা হবে তা নতুন ঠাকুরপো ঠিক করে রেখেছেন। তাঁকে বলেছেন পাখির নাম হবে - শ্যামলী। এমন নাম তো গোরুর হয় ! নতুন ঠাকুপোর যুক্তি আমাদের পোষা গোরুর নাম যদি পার্বতী হতে পারে তবে পোষা পাখির নাম শ্যামলী হবে না কেন !
ভৃগু নতুন ঠাকুরপোর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। মীরা এবং তার পাশে সেই ছেলেটা। যে এতক্ষণ অঞ্জন সিনেমাহলের ফুটপাতে পায়চারি করছিল আর এই বাড়ির দিকে মাঝে মাঝে তাকাচ্ছিল।
ছবিরানিকে দেখে চারজনেই থমকে গেল। নতুন ঠাকুরপো তাঁর দিকে তাকিয়ে বললেন, " পাখিটা খুব সুন্দর না ! ভৃগু পাখি চেনে।"
এবার ভৃগু ছাড়া বাকি তিনজন সোফায় বসেছে। পাখির খাঁচা নিয়ে ভৃগু বাড়ির ভেতর চলে গেল।
এবার ছবিরানি কথা বললেন, " হ্যাঁ। পাখিটা ভারি সুন্দর। " অতঃপর নবাগত তরুণের দিকে তাকিয়ে বললেন, " একে তো চিনতে পারলাম না ! " উত্তর দিলেন নতুন ঠাকুরপো, " ওর নাম কিঞ্জল। মীরার বন্ধু । "
মীরা বেশ সপ্রতিভ, " হ্যাঁ। কিঞ্জল এই এল।" নতুন ঠাকুরপো উঠলেন, ' তোমরা বোসো। আসছি। দেখি ভৃগু পাখিটাকে কোথায় রাখল। " ছবিরানি বললেন, " সে ব্যবস্থা করে রেখেছি। ভৃগু জানে। দালানের পশ্চিমে পাখির খাঁচাটা ঝুলিয়ে রাখবে। " নতুন ঠাকুরপো বললেন, " তবু একবার দেখে আসি। " উনি বৈঠকখানা থেকে বেরিয়ে দালানের দিকে গেলেন।
এবার ছবিরানি মীরার দিকে তাকালেন, " বন্ধুকে রাস্তার ফুটপাতে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলে কেন ! "
কিঞ্জল লজ্জায় মুখ নিচু করেছে। মীরার কোনও সংকোচ নেই, " ওকে বলেছিলাম তো আমার সঙ্গে আয়। এল না। বলল, একটু পরে আসছি। "
ছবিরানি বললেন, " তোমাদের উদ্দেশ্যটা কী ! মীরা বলল, " আমরা নতুনদাদুর কাছে ফ্রেঞ্চ ভাষা শিখতে চাই। "
ছবিরানি জিজ্ঞেস করলেন, সেকথা ওঁকে বলেছ? " মীরা মাথা নাড়ল, " না। এখনও বলা হয়নি। উনি রাজি হবেন তো ! "
ছবিরানি বললেন, " তা তো বলতে পারব না। '
মীরা বলল, " উনি আমাদের কথায় রাজি না হলে আপনি আমাদের হয়ে বলবেন। বলে কয়ে রাজি করিয়ে দেবেন। কী ! দেবেন তো ! "
মীরার সারল্যে ছবিরানি হেসে ফেললেন, " আগে তোমরা বলো। তারপর তো আমি আছি। "
খুব ভাল লাগল। অপেক্ষায় রইলাম।
উত্তরমুছুন