গুচ্ছ কবিতা : তৈমুর খান

 




তৈমুর খান

🍂
পাথর হয়ে আছে
🧚
এত মৃত্যুর পরও সকাল হাসছে
প্রজাপতি উড়ছে
বিবাহ বাসর বসেছে
নতুন শাড়ি পরে বেরিয়ে আসছে সূর্যমুখী

এইসব হাসির উপর কান্না ঝরে পড়ছে আমার
চিকমিক করছে মনখারাপের দেহ
ভাঙা নদীর উপর কে ছবি আঁকছে?কে?

 নীল রঙের শার্ট পরে হাঁটছি শবের উপর দিয়ে
কোন দিকে যাব ?

পাথর হয়ে আছে সমস্ত দেশ, 
পাথরেই ফুল ফুটছে          
বিস্ময়সূচক! 


২ 
মানুষেরা ভেসে যাচ্ছে একে একে 
🧚

ওরা ডেকেছিল, আমি যাইনি 
সারাদিন কান্নার সমুদ্রে ঢেউ গুনছি 
মানুষেরা ভেসে যাচ্ছে একে একে 
আমিও ভেসে যাব 

সন্ধ্যার পাখি উড়ে যাচ্ছে দূরে 
ম্লান আলোয় আকাশ কোনও অপার্থিব নির্নিমেষ 
নিজের কথাও আর শুনতে পাই না নিজে 
বৃক্ষের অন্তরালে ঘুমায় স্মৃতিফুল 

আমার অন্তর বাহিরে তীব্র স্রোত 
অন্ধ এবং ভাসমান চোখ 
দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে যেতে চায় 
কথারা তবুও কথা, অনেক অনেক পৃথিবী, অনন্ত সময়


 ৩
চরিত্র আসলে কিছু নয় 
🧚
এখন আলোর ঘুম তুলে রাখি 
আর পেছন ফিরে 
মৃত্তিকার সন্নিধি ছড়িয়ে পড়তে দেখি 
পার্থিব চেতনার গান গাইতে থাকে পাখি 
উত্তেজনার দম ফুরিয়ে এলে 
আবার নতুন উত্তেজনার খোঁজে 
মাঠ পেরিয়ে যাই 

বিরামহীন মানুষ শুধু 
সেও পেয়েছে মানব হবার দায় 

কলঙ্কিত খোঁপা খুলে গেলে 
নষ্ট রাত , ভ্রষ্ট পথে 
চরিত্রগুলি হাঁটতে থাকে 

চরিত্র আসলে কিছু নয় 
পারিবারিক কুয়োর জলে 
বালতি নামায় , বালতি তোলে 
উত্তরাধিকার...


 
 ৪
আমাদের আত্মহত্যার ভেতর 
🧚
কলঙ্কিত জ্যোৎস্নায় আমরা বেড়ে উঠলাম 
আমাদের জ্যোৎস্নাশরীরে বাজনা বাজল 
আমরা মৈথুনের দেশে খুঁজছিলাম নিগূঢ় সংগম 

কত ঝরনার পাশে রাতজাগা পড়ে ছিল 
পরিস্থিতি তৈরি করছিল সময়ের পাঠশালা 
আমরা দীক্ষা নিচ্ছিলাম 
সারারাত যাওয়া-আসা করছিল ইহকাল পরকাল 

কয়েকটি চোখের ইশারা উড়ছিল বাতাসে 
প্রৌঢ় আলোকে ছুটোছুটি করছিল বাল্যকাল 
আমাদের আত্মহত্যার ভেতর আমরা বেঁচে উঠছিলাম

 ৫
এই কুয়াশায়
🧚
ভোরবেলায় কুয়াশা এল
                         তোমার মতন কুয়াশারা
 দ্বিধাদ্বন্দ্বে রাস্তা হারাচ্ছি আমি
রাস্তায় সীমাহীন ষাঁড়
যদিও নরম শিং, ধরা যায় না
                 মাথা নাড়ে ভয়

শীতের বারান্দায় ঘুমভাঙা সকাল
অস্পষ্ট চিঠি নিয়ে অপেক্ষায় আছে
আমারই ঠিকানা লেখা তাতে
যদিও ঠিকানা নেই আমার
                          হৃদয় উদ্বাস্তু বহুদিন
 একটি শরীর শুধু, শরীরে অবরুদ্ধ কাম
                          সব ব্যর্থ কৌশলী

কুয়াশার পাঠশালায় স্বপ্নের বালিকারা ওড়ে
তাদের ডানার কোনো ধারণা নেই
শুধু ইঙ্গিতে ভরা জাগরণ
কোথাও নিলাম হচ্ছে সেসব সুদূরিকা
তাদের ঘ্রাণে আড়ষ্ট হই
মাটির জাতক বলে
আমিও বিষণ্ণ আর ক্লান্ত ভঙ্গুর…


মরীচিকা 
🧚
এপাশে খুঁজে দেখি : কেউ নেই 
ওপাশে খুঁজে দেখি : কেউ নেই 
এপাশ ওপাশ জুড়ে শুধু মরীচিকা 
ঘরকন্না করে 

আমি তবে কার গর্ভে জন্মালাম? 

একখণ্ড আকাশ বৃষ্টির অক্ষরে চিঠি লেখে 
এক ঝলক বাতাস উড়িয়ে দেয় ধুলো 
আমি খুঁজে পাই ফাগুন মাস
আমার নিগূঢ় ধান, আমার নিগূঢ় চাষ 
মাঠ আর মহিমার সূর্য, নিগূঢ় পাখির গান 

রোজ ফিরে আসে মরীচিকার মেয়ে…


আনন্দের বাড়ি 
🧚

বহুদিন থেকে নষ্ট পৃথিবীতে আছি 
দালালেরা ছুরি হাতে রোজ আসে 
ফিরে যায় 
অপেক্ষাও করে 

যদিও প্রার্থনা নেই বেঁচে থাকবার 
প্রতিবাদও সব ভাষা হারিয়ে ফেলেছে 
আনন্দ মরেছে বহুদিন 
এখন আগলাই শুধু আনন্দের বাড়ি 

স্মৃতির পালক কিছু সাজানো আছে 
ইতিহাস যদিও মলিন 
পূর্বপুরুষের ঘাম, রক্ত লেগে আছে তাতে 

ঝরনার নিকটে আর যাই না 
সে এখন অন্য পাহাড়ের কাছে থাকে 
তার সমূহ মাধুর্য এখন তারা লুঠ করে 

ছেঁড়াখোঁড়া ব্যাকরণ বহু বাক্য ব্যয় করে 
গার্হস্থ্য বিষাদ মেখে এখানে পড়ে আছে 
কথাহীন আমরা সবাই, দুর্গা বানাই অন্ধকারে…. 


রণযাত্রায় 
🧚

চুপিচুপি ডাকি । কাকে ডাকি? 
চেতনাই বোঝে । মরমে বসে এক পাখি। 
সমস্ত আকাশ জুড়ে রামধনু লীলা 
আমার নিভৃত টংকার শব্দবাদী খেলা। 

অলৌকিক উষ্ণতার কাছে কেঁপে ওঠে ছোঁয়া 
উচ্চারণে তাকে আর কতটুকু পাওয়া? 
পুরোনো চাঁদের কাছে মেয়েলি স্বভাব 
সংকুচিত হতে থাকে নতুন বিপ্লব। 

গান্ধর্বীর বাতায়নে ছলছল চোখ 
বার বার বলে ওঠে : ওকে ডাকা হোক! 
রণযাত্রায় সমূহ কৌতূহল 
আজন্ম তীর্থের কাছে ফেলে কান্নাজল।