গুচ্ছ কবিতা : তৈমুর খান

শুক্রবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২১ /
ফেসবুক-এ শেয়ার করুন /
টুইটার-এ শেয়ার করুন

 







তৈমুর খান


আমাদের আমলকী বনে


কোথাও যাবার নেই 

আমাদের আমলকী বনে 

                  আর ডাকে না ঘুঘু 

সমস্ত বিহঙ্গগুলি উড়ে গেছে 

         আমরা শুধু কুড়িয়েছি আঁধার কাহিনি


দুপুর গড়ে গেলে অবেলার মুখ 

ক্লান্ত বিষণ্ণ সভ্যতা চুমু খেতে আসে

স্বাতন্ত্র্য ভুলে গেলে গড্ডালিকা স্রোতে 

আমরাও সভ্যতার কাছে বেশ্যা হয়ে যাই


ব্যবহৃত হতে হতে বিস্তর অসভ্য লিঙ্গগুলি 

কেবল বিপন্ন করে

এই ভুবন, এই আলো, এই স্বপ্ন-শয্যায় 

মর্দিত ধর্ষিত আস্ফালন পড়ে থাকে


প্রতিটি যোগ্য তরুর কাছে ছায়া চাই 

প্রতিটি বিশল্য গাছে ফুল 

শাখায় শাখায় আমাদের ঐতিহাসিক পাখি 

অনন্তপ্লাবী আর এক জ্যোৎস্নার ভূগোল ।



জোয়ার


জোয়ার আসছে, পালাও !

কিন্তু এ বার্ধক্য কোথায় পালাবে ?

সভ্যতার তিক্ত যান, যুবতী বিষাদ 

কেউ আর বইতে চাইছে না।

নিজস্ব মাঝিটিও আর অনুগত নয়।

এলোমেলো হাওয়ায় ধূসর বক 

               উড়ে উড়ে যাওয়ার প্রয়াস….


জোয়ার আসছে উদ্দাম নির্ঘুম 

তীব্র শরীরী  আর অসহিষ্ণু 

                            উগ্র সম্মোহন

 নৌকাটি ছোট্ট বিশ্বাস 

                    দ্বান্দ্বিক প্রাচুর্য  ছুঁয়ে টলোমলো

 আগ্রাসন এগিয়ে আসে

                      যুগের প্লাবনে ভেসে যায় অভিলাষ।



শীত


আমাদের ক্ষয় ও দুর্ভাগ্য 

আগুন পোহাচ্ছে বসে শীতের বারান্দায়

সমস্ত প্রাচীনকাল কথা বলছে মাটির দাওয়ায়


দু'একটি বেজন্মা মুহূর্ত হেসে উঠছে

দুর্ভিক্ষ পাড়ার গান কালো কাক হয়ে উড়ছে

আমরা নিরীহ মূক আগুনের কাছে


চলো পুড়তে থাকি 

সব বীজ শস্য হোক 


আমরা সব শূন্যতা রাখি

শূন্যে ভাসুক দিন 

প্রজন্মের নীল নক্ষত্রগুলি


অনুৎসবে চলে গেছে আমাদের প্রত্নপোশাক

কিছুটা উলঙ্গ শীত তবে উঠোনে নেচে যাক !



 শ্রীমধুসূদন


কথার ভিতরে বহু  না-বলা কথারা 

                               যাওয়া-আসা করে

আমি শ্রীমধুসূদন হই 

সারাবেলা পতাকা  ওড়ে বঙ্কিমের মাঠে


গার্হস্থ্য সংবাদ সব উড়ে গেলে 

দলীয় জীবন আলুথালু

পৃথিবীর কারুণ্যে উদ্গত স্মারক স্তম্ভ 

সেখানেই দাঁড়াও পথিকবর


বহুকাল হেঁটে হেঁটে এ-প্রান্ত ও-প্রান্ত 

একটিও দেশ নেই

চক্রান্ত দাঁড়িয়ে আছে, হাতে ছেঁড়া ম্যাপ 

হাসছে সব লীলা,কলহাস্যে ডুবছে

                                            পাতক


জীবনের জলে ভেজা এই মফস্সল

কয়েক শতাব্দী ধরে জাহ্নবীর কোলে ঘুমায় 

                                    কিংবদন্তির বালক !



পর্দা


সব পর্দা ফাঁক হয়ে যাচ্ছে 

জোৎস্না ডিঙিয়ে ডিঙিয়ে 

              মৃত-লণ্ঠনের কাছে পৌঁছে যাচ্ছি


প্রতিটি জিভের কাছে যেতে চাইছে 

                                        সরল লিঙ্গগুলি

 অথচ জটিল সময়

                           সরীসৃপও পথ হারাচ্ছে


 ঝুঁটি খুলে কিছু কিছু বেইমান 

                                   ইজ্জত বিক্রি করছে

 ক্রেতারা পশ্চাদ্ধাবক ধূর্ত ও  সন্দিহান

                                 কিনে নিচ্ছে সব মুগ্ধতা



আমরা কোনো গুরুত্বপূর্ণ দ্বীপের কাছে 

মৃত লন্ঠনকে জাগিয়ে তুলতে চাই

পর্দা দেখুক আড়ালে কে এতো উজ্জ্বল

কে সব ভিখিরির অন্ন কেড়ে নেয় 

সরল লিঙ্গগুলির কী কী বার্তা থাকে ।