গুচ্ছ কবিতা : সুজল সাহা

বৃহস্পতিবার, ১৪ জুলাই, ২০২২ /
ফেসবুক-এ শেয়ার করুন /
টুইটার-এ শেয়ার করুন

 






সুজল সাহা


পাতাইগাছি

গোদা অন্নদার মনভাসি বৃষ্টি। মনসুর ফকিরের গানের
ভুবন। তোমার অসূয়া থেকে চাতকপাখির মরণফাঁদ।
তালপাতায় ছাওয়া স্বপ্নের কুটির। মণিকর্ণিকার দিব্য
ঢেউটুকু নিয়ে ওপারের অন্ধকার। হটপ্যান্টপরা রতি



সিংহরাশির তোমাকে ওস্তাদ বানায়। গোধূলিসন্ধির নাচ
চাঁদলাগা দোচালায় পাখিদের লীলাখেলা। দুধসাদা মায়া
নীল উন্মাদনা জাগে। গঙ্গার ওপারে তোমার ভাস্কর আগুন
 রঙের শরীর পাতাইগাছির কুয়াশা বিভ্রম ছড়ায়।




ফড়িংগাছি

আত্মহত্যাপ্রবণ সকল ঢেউকে পেছনে হটিয়ে চৈত্রের
গগনভেদী দণ্ডকারণ্যে ফেলে আসি এই প্রাণের আরাম।
শমীবৃক্ষতলে দেখি রঙের ফোয়ারা। লালরঙের বেলুন
চুপসে গেলে নিঃশব্দে ওড়াই রাত্রির ফানুস। লালহলুদ
জ্যাকেটপরা রম্ভার জলে দেখি মাছরাঙাদের লম্ফঝম্প



পানপাত্রে উঠে আসা সোমরস মহানন্দে নিঃশেষ করি।
ন্যাকড়াচণ্ডীতলার ওমটুকু নিয়ে ফড়িংগাছি ব্রিজের ধারে
সূর্যাস্তের রেণু মাখি। খড়িনদীজলে কে প্যাডেড ব্রা ভাসায়
হাবাগোবা এক কালাচাঁদ ভারসাম্যহারানো দাঁড়িপাল্লায়
উদীয়মান নক্ষত্রদের জামাবদলের স্বপ্ন ফেরি করি রোজ।




পিছুটানহীন 

কে তোমাকে বেয়াদব এই নুড়িপাথরের ভার নিতে 
বলেছিল! জলস্রোতে ভেসে যেত, বেশ হত। দেহের 
কালিমা একদিন উবে যায়। গোধূলির শুভদৃষ্টিখানি
তারাফুলে গাঁথা। অন্ধকার দশা ছিন্ন করা রৌদ্রছায়া


গভীর জলের সংবেদন ঘেরা আত্মমগ্ন এক বাতিদান
নিরালায় ঘুরি পিছুটানহীন। হিমঘরে বজ্রপাত, তীব্র
রোষানলে দীর্ঘদেহী আকাশমণির চোখে জল। ঝড়
তুফানে চিৎপটাং গাছপালা কৃষ্ণসায়রের ঘুম কাড়ে।



আতিথেয়তা

টেংরিডাঙা পেরিয়ে গয়েশপুর। সেই ছোট থেকে জানি
লক্ষ্মীপুজোর আয়োজনের খাতিরে ব্যাপক তার জেল্লা।
ভাঙামেলার বহর দেখে বুঝি এই লোকগাথা প্রশ্নাতীত।


শেয়ালের ডাকে রোজ তাহাদের ঘুম ভাঙে। লোকহিতের
সৌজন্যে অতিথি পরিচর্যার যে নজির দেখেছি, এককথায়
চিরহরিৎ স্মৃতির অতলে হারিয়ে যাওয়া জলদেবতার 


মুখখানি খুঁজি। কালিমাখা হাতে সাদাবালি উঠে আসে।
তবু গঙ্গা থেকে ধরা কাজলীমাছ, জবাইকরা বনমোরগ
তিরিশ বছর পূর্বের আতিথেয়তা মাঝেমধ্যে রোমন্থন করি।


পরমহংস 

পোড়ো বাড়িটির সীমা অতিক্রম করা একদম দুঃসাধ্য
ছিল। তবু পাতালগঙ্গার জল ঠেলে উঠে আসা রাত্রির


গভীর গোপন জঙ্গলের নেশা সরলরেখার জড়তাকে
খায়। আত্মসর্বস্ব ধনেশপাখি জটিলা কুটিলাকে বীজমন্ত্র দেয়।


সোনাঝুরি গাছটির মায়া ছায়াময় আকাশগঙ্গার নীলে
সুখের পায়রা ওড়ায়। ওম শান্তি ওম মন্ত্রে হাওয়াগাড়ির
জট পরমহংসকেই সাবলীল ভঙ্গিমায় খুলে যেতে দেখি।